পিবিএ, ডেস্ক: বিয়ের আগে হবু স্বামী-স্ত্রীর সামগ্রিক চেক-আপ করানোর কথা এখন অনেকেই ভাবেন। নতুন জীবন শুরুর আগে কোন কোন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন জানাচ্ছেন ডা. সুজাতা দত্ত।
বিয়ের পরের রঙীন জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখাও শুরু করে দিয়েছেন। তবে বিয়ের পরে জীবন রঙীন করে তুলতে সুস্থ থাকাও তো প্রয়োজন। তাই, অনেকেই আজকাল বিয়ের আগেই করে নিতে চাইছেন প্রয়োজনীয় চেক-আপ। উদ্দেশ্য একটাই, বিয়ের পরে যাতে স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের আসন্ন সন্তান সুস্থসবলে থাকতে পারে।
যেসব পরীক্ষা করানো দরকার
বিয়ের আগে হবু পাত্র-পাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা করার ব্যাপারটা তুলনায় নতুন। প্রি ম্যারিটাল চেক-আপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জরুরি হল হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস পরীক্ষা। এই রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া আছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। হবু স্বামী-স্ত্রী দু’জনের ক্ষেত্রেই এই পরীক্ষা দরকার। যদি দেখা যায় যে দু’জনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক, তাহলে তাঁদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে দু’জনের মধ্যে যে কোনও একজন যদি থ্যালাসেমিয়া জিনের বাহক হন, তাহলে তাঁদের সন্তানের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার জিন থাকতে পারে। তবে অসুখটা হয় না। বিয়ের আগে এই চেক-আপটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সাধারণ চেক-আপ করাতে চাইলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, ব্লাড গ্রুপ, থাইরয়েড পরীক্ষা ইত্যাদি করাতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিয়ের আগে হবু স্বামী-স্ত্রীর হেলথ চেক-আপ করিয়ে নেওয়া ভাল। এতে বুঝতে পারবেন দু’জনের কারওর কোনও শারীরিক সমস্যা আছে কি না! তবে হেলথ চেক-আপের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিয়ে করবেন কি না, এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়তো ঠিক হবে না। বিয়ের আগে অনেকসময়ে প্রি ম্যারিটাল কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। হবু স্বামী ও স্ত্রীর সুস্থ যৌনজীবনের জন্য কাউন্সেলিং প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে কনট্রাসেপশনের ব্যাপারে তাঁদের বিশদে জানানো হয়। অনেকে বিয়ের পরেই অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের সমস্যায় ভোগেন। এর মূল কারণ হল কনট্রাসেপশনের সঠিক পদ্ধতির ব্যাপারে অজ্ঞতা। তাই বিয়ের আগে কনট্রাসেপটিভ মেথডের ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রীকে অবহিত করা জরুরি। নিরাপদ যৌনজীবন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
অনেক দেশে, অনেক কমিউনিটিতে আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হওয়ার রেওয়াজ আছে। এঁদের সন্তানদের মধ্যে কনজেনিটাল অ্যাবনর্মালিটি দেখা দিতে পারে। এরা বিভিন্ন জেনেটিক ডিজ়অর্ডারে ভুগতে পারে। এক্ষেত্রে হবু স্বামী-স্ত্রীর কাউন্সেলিং করানো হয়। যতটা দূরের সম্পর্ক হবে ততটাই ভাল। বিয়ের পরে কনসিভ করতে সমস্যা হলে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই নির্দিষ্ট পরীক্ষা করতে বলা হয়।
তবে সাধারণত এ ধরনের পরীক্ষা বিয়ের আগে করার পরামর্শ দেওয়া হয় না। কারণ অনেকেই পার্টনারের অক্ষমতার কারণে বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এটি কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তবে যাঁরা আগে থেকে পরীক্ষা করে দেখে নিতে চান, ভবিষ্যতে সন্তানধারণে কোনও সমস্যা হবে কি না, তাঁরা কিন্তু কখনওই প্রি ম্যারিটাল টেস্ট করে নিশ্চিত হতে পারবেন না।
তবে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশের প্রেগনেন্সিতে কোনও সমস্যা থাকে না। চিকিত্সা অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। তবে যতক্ষণ না অন্তত এক বছর আপনি প্রেগনেন্সির জন্য চেষ্টা করবেন, ততক্ষণ বোঝা মুশকিল সমস্যাটা কোথায়! তবে পিসিও থাকলে ওজন কমানো জরুরি। এতে পিরিয়ডসও নিয়মিত হয়ে যায়। আসলে কনসেপশনে সমস্যা থাকলে সাধারণত যে ওষুধগুলো দেওয়া হয়, সেগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরেও খেয়ে যেতে থাকলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই বিয়ের পরে চেষ্টা করেও প্রেগনেন্সি না এলে তখনই ওষুধ খাওয়া ভাল।
আবার অনেকেই আসেন পার্টনারের কোনও সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজ়িজ় আছে কি না, সেটা জানতে। তবে ডাক্তারেরা বাধ্যতামূলকভাবে এধরনের টেস্ট করার পরামর্শ দেন না। ধেরনের টেস্টের আগে কাউন্সেলিং দরকার। কেউ যদি এইচআইভি পজ়িটিভ হন, তাহলে তাঁকে হয়তো তাঁর পার্টনার বিয়ে করতেই চাইবেন না! তাই, দু’জনের সম্মতি নিয়ে, কাউন্সেলিং করিয়ে তবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চিকিত্সা
সামগ্রিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলা জরুরি। ধূমপান করবেন না। অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকুন। মোটের উপর স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন স্পার্মের কোয়ালিটি সমৃদ্ধ করে। এছাড়া শারীরিক সমস্যা অনুযায়ী চিকিত্সা করা হয়।
দু’জনেই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে তাঁদের কাউন্সেলিং করা হয়। চারজনের মধ্যে একটি শিশুর এক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরপরে প্রেগনেন্সির সময়ে যদি দেখা দেয় জটিলতা হচ্ছে, তাহলে স্বামী-স্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে প্রেগনেন্সি টার্মিনেট করতে হতে পারে।
পিবিএ/জেডআই