বুকে ব্যথার কারণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা

পিবিএ ডেস্কঃ আসলে বুকে ব্যথা যে সব সময়ে আপনার হার্টের থেকেই হবে তার কিন্তু কোনও মানে নেই। অন্য কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে। আর আপনার সেগুলো অবশ্যই জানা উচিৎ। তাহলে আসুন জেনে নিই আপনার বুকে ব্যথার কারণ কী কী হতে পারে।

মাসলে খিঁচ ধরাঃ আপনার মাসলে যদি ইনফ্লেমেশন তৈরি হয়, অর্থাৎ যদি আপনার মাসলে প্রদাহ বাঁ জ্বালা ভাব দেখা দেয় এবং যদি পাঁজরের চারদিকে টান অনুভব করেন, তাহলে একটা চিনচিনে ব্যথা হয়। কিন্তু যদি এই ব্যথা খানিক ক্ষণের মধ্যে না কমে আর আরও ছড়িয়ে যায়, তাহলে তা প্রবল বুকে ব্যথার জন্ম দেয়।

পাঁজরে আঘাতঃ আপনার পাঁজরে যদি গুরুতর কোনও সমস্যা হয়, যেমন ভেঙে যাওয়া বা ফ্র্যাকচার হওয়া, তাহলে তার থেকেও কিন্তু বুকে ব্যথা হয়। আপনার বুকে ব্যথা পাঁজরের কাছে যদি অসহ্য ভাবে হয়, তাহলে বুঝবেন আপনার পাঁজরে কোনও সমস্যা আছে।

পেপটিক আলসারঃ পেপটিক আলসার, যা মূলত আমাদের পাকস্থলীতে হয়ে থাকে তার জন্য সরাসরি কোনও ব্যথা বুকে হয় না। কিন্তু বুকের কাছে একটা হাল্কা চাপ চাপ ভাব অনেক সময়ে হয়ে থাকে। সেটা খুবই অস্বস্তি দেয়। সেক্ষেত্রে অ্যান্টাসিড খেলেই এই ব্যথা কমে যায়।

গ্যাসট্রোইসোফাজেল রিফ্লাক্স ডিসিজঃ জি.ই.আর.ডি বা গ্যাসট্রোইসোফাজেল রিফ্লাক্স ডিসিজ তখনই হয় যখন আপনার পাকস্থলীর অপাচ্য বা অর্ধপাচ্য খাবার বিপরীত দিকে গিয়ে আপনার গলার কাছে আসে। আর এর ফলে আপনার বুকের কাছে অসহ্য জ্বালা তৈরি হয় আর মুখ টক হয়ে যায়।

অ্যাস্থমাঃ এটি একটি খুবই কমন শ্বাসকষ্টের সমস্যা। আপনার চারদিকে আজকাল যে পরিমাণ ধুলো আর দূষণ তাতে শ্বাসের সমস্যা হবেই। কিন্তু যদি এটা বেশি মাত্রায় হয়, মানে শ্বাস নিতে খুবই সমস্যা হয়, তখন কিন্তু বুকে ব্যথা হয়। আর তার সঙ্গে হয় প্রবল কাশি।

ফুসফুসে সমস্যাঃ যখন আপনার পাঁজর আর ফুসফুসের মধ্যে বাতাস কোনও কারণে জমাট বাঁধে তখন ফুসফুসের উপর খুবই চাপ সৃষ্টি হয়। আর তখনই ফুসফুস ঠিক করে কাজ করতে পারে না, শ্বাস নিতে সমস্যা হয় আর তখনই বুকে ব্যথা হয়। এই ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে, সঙ্গে বেশি মাত্রায় বুক ধড়পড় করতে পারে।

কস্টোকনড্রাইটিসঃ আপনার পাঁজরের কার্টিলেজে যদি জ্বালা হয় তাহলে তাকে বলে কস্ট্রোকনড্রাইটিস। এর ফলেও কিন্তু বুকে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা তখন আরও বাড়তে পারে যখন আপনি কোনও নির্দিষ্ট পজিশনে বসবেন বা শোবেন বা আপনি যখন শারীরিক কসরত করবেন।

এসোফাজেল কনট্রাকসন ডিসঅর্ডারঃ আমাদের খাদ্যনালীতে কোনও কারণে সঙ্কোচন হলে তাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে এসোফাজেল কনট্রাকসন ডিসঅর্ডার। যদি কোনও কারণে এটি হয় তাহলে কিন্তু বুকে ব্যথার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

এসোফাজেল হাইপারসেনসিটিভিটিঃ আপনার খাদ্যনালীর মধ্যে যে বাতাসের চাপ থাকে তাতে যদি কোনও তারতম্য হয় বা যদি অ্যাসিড ফর্ম করে, তাহলে কিন্তু ব্যথা হতে পারে। আর যেহেতু খাদ্যনালী বুকের কাছেই, তাই তার প্রভাব বুকেও পড়ে।

হার্নিয়াঃ এই ধরণের হার্নিয়া তখনই হয় যখন আমাদের পাকস্থলীর খানিক অংশ উপরের দিকে উঠে হার্টের কাছে চলে আসে। এই ধরণের হার্নিয়ার কিন্তু কোনও উপসর্গ হয় না। যদি আমাদের খাওয়ার পর পাকস্থলীর উপরের অংশ হার্টের নিচের অংশের দিকে আসে তাহলে বুকে জ্বালা শুরু হয় আর বুক ব্যথাও করে।

হাইপারথ্রপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথিঃ নানা রকম জেনেটিক কারণে যখন হার্টের দেওয়াল ভারী হয়ে আসে তখন কিন্তু এই রোগটি হয়। তখন হার্টের মধ্যে দিয়ে রক্ত চলাচলে খুবই সমস্যা হয়। হার্টের পেশিতে খুবই টান ধরে। আর তখনই খুব শ্বাসকষ্ট হয় আর বুকে অসহ্য ব্যথা হয়।

টিউবারকিউলোসিসঃ টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষ্মা তখনই হয় যখন এর ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসে জমাট বাঁধে। আর তখন খুব কাশি হয়, রক্ত পড়তে থাকে মুখ দিয়ে আর বুকে ব্যথা হয়।

প্যানিক অ্যাটাকঃ এটা কিন্তু আচ্ছা আচ্ছা সাহসী লোকেদেরও অনেক সময়ে হয়ে থাকে। হঠাত করে যদি এমন কিছু দেখে ফেলে কেউ যা ভয় ধরিয়ে দেয় বা কিছু মনে পড়ে ভয়ের, তাহলে তা কিন্তু এই প্যানিক অ্যাটাকের জন্ম দেয়। আর তার থেকে বুকে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। এর সঙ্গেই হতে পারে বমি, ঘাম আর বুক ধড়ফড়।

পেরিকার্ডিটিসঃ আপনার বুকের চারপাশ জুড়ে যখন একটা চিনচিনে ব্যথা হয়, তখন তাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে পেরিকার্ডিটিস। আর এই ব্যথা তখনই খুব বাড়ে যখন আপনি শ্বাস নিতে যাবেন বা শুতে যাবেন।

নিউমোনিয়াঃ দেখে ঘাবড়ে যাবেন না। নিউমোনিয়াও কিন্তু খুব আপনার বুকের ব্যথার কারণ হতে পারে। যদি আপনি দীর্ঘ দিন ধরে নিউমোনিয়ায় ভোগেন, তাহলে তার থেকে বুকে ব্যথা হতে পারে। সঙ্গে থাকে কাশি আর জ্বর। এই কাশির সময়ে কাশতে গেলে বুকের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
বুকে ব্যথার কারণ তো বললাম। এবার তার থেকে মুক্তি তো পেতে হবে। আর আপনি ভাবছেন মুক্তি মানেই ওষুধ। কিন্তু আমরা আজ বলব কীভাবে ওষুধ ছাড়াই আপনি ১০ মিনিটের মধ্যে বুকে ব্যথা কমিয়ে নেবেন।

বরফের ব্যবহারঃ বুকের ব্যথার অন্যতম কারণ হল পেশির জমাট বেঁধে আসা। এর ফলে অনেক সময়ে ব্লকেজ তৈরি হয়। কিন্তু এই ব্লকেজ ওষুধ ছাড়াও কমানো সম্ভব। শুধু আপনি বরফের ব্যবহার করুন। একটি কাপড়ে বরফ নিয়ে বুকের চারপাশে বোলাতে শুরু করুন। দেখবেন এতে ব্যথা কমে যাবে।

কিছু পানীয় ব্যবহার করুনঃ বুকে ব্যথা হলে হালকা কিছু পানীয় গরম করে খান। সেটা হতে পারে শুধু পানি। কারণ এই উষ্ণ পানীয় কোনও রকম গ্যাসের সমস্যা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে কমিয়ে দেয়। আর ঘরে রাখতে পারেন হিবিস্কাস চা। এটি কিন্তু কোনও রকম জমাট বাঁধা থেকে রেহাই দেয়। তাই বুকে ব্যথা হলে গরম হিবিস্কাস টি খেতে পারেন।

বেকিং সোডার ব্যবহারঃ যদি আপনার পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরি হয়ে থাকে আর তার থেকে কোনও ভাবে ব্যথা হয়, তাহলে আপনি বেকিং সোডা ব্যবহার করুন। ঠাণ্ডা বা গরম পানিতে বেকিং সোডা গুলে খেয়ে নিন। এটি সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।

রসুন ব্যবহার করুনঃ বলা হয় রসুন নাকি বুকে ব্যথার ক্ষেত্রে দারুণ কাজ দেয়। এক্ষেত্রে আপনি খানিক রসুন আর লবঙ্গ থেঁত করে গরম পানিতে মিশিয়ে খান। আর যদি পারেন তাহলে রসুন চিবিয়েও খেতে পারেন। এটা বুকে ব্যথা হওয়ার সময়ে ট্রাই করে দেখুন।

আপনি এইগুলো যদি সঙ্গে সঙ্গে করতে পারেন বুকে ব্যথার সময়ে তাহলে আমরা কথা দিচ্ছি, বুকে ব্যথা কমে যাবে ১০ মিনিটের মধ্যে। আর কিছু নিয়ম মেনে চললে তো বুকে ব্যথার সমস্যাই অনেকটা কমিয়ে আনা যায়।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...