বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদলের ৪৯ নেতাকর্মী নিহত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিজ সংগঠনের ৪৯ জন নেতা-কর্মী নিহতদের তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বুধবার (২১ আগস্ট) রাজধানী নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ব্রিফিং কক্ষে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এই তালিকা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ৪৯ জন নেতাকর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন। এই আন্দোলনে হাজারের অধিক ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। আমি আমাদের ছাত্রদলের ৪৯ জন শহীদসহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তাদের জন্য জান্নাতুল ফেরদৌসের প্রার্থনা করছি।

রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসের আন্দোলনে ছাত্রদলের ত্যাগ ছিল নজিরবিহীন। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে শুরু থেকেই ছাত্রদল পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের সাথে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করেছে। ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাইদ শহীদ হয়েছেন। তার মৃত্যু পুরো দুনিয়াকে নাড়া দিয়েছে। একইদিন অর্থাৎ সারা বাংলাদেশ দ্বিতীয় এবং ছাত্রদলের প্রথম চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের সদস্য ওয়াসিম আকরাম শহীদ হয়েছেন। শহীদ হয়েছেন মাগুরা জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি।

ছাত্রদলের যারা নিহত হয়েছেন তারা হলেন: চট্টগ্রাম কলেজের ওয়াসিম আকরাম, ঢাকা মহানগর(পূর্ব) ছাত্র দলের আরিফুর রহমান রাসেল, শেরপুর সরকারি কলেজের মাহবুব আলম, শ্রীবর্দী সরকারি কলেজের সবুজ মিয়া, ময়মনসিংহের গৌরীপুর মোজাফফর আলী ফকির উচ্চ বিদ্যালয় কলেজের বিপ্লব হাসান, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের অর্জুন ইউনিয়নের ইমন মিয়া, মাগুরা জেলা ছাত্র দলের মেহেদি হাসান রাব্বী, কুড়িগ্রামের উলিপুর ছাত্র দলের রায়হানুল ইসলাম, লক্ষীপুর সরকারি কলেজের মো.শহিদ কাউসার হোসেন বিজয়, ঢাকা মহানগর (পূর্ব) ছাত্র দলের ফজলে রাব্বী, মুন্সিগঞ্জ মীরকাদিম ছাত্র দলের মানিক মিয়া শারিক, রামপাল ছাত্র দলের ফরিদ শেখ, ঢাকা মহানগর ৪০ নং ওয়ার্ড ছাত্র দলের ইসমাইল হোসেন রাব্বী, সূত্রাপুর থানা ছাত্র দলের শাওন, ঢাকা মহানগর(পশ্চিম) ছাত্র দলের শামীম হাওলাদার, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির ইরফান ভুঁইয়া, ভাটারা থানার ছাত্র দলের মুনির হোসেন, সাউথ ইস্ট ইউনির্ভাসিটির ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির, ঢাকা মহানগর(উত্তর) ছাত্র দলের তাহিদুল ইসলাম, চাঁদপুরের মতলব ছাত্র দলের পাভেল হাসান রাব্বী, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের ৭ নং ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম, ফতু্ল্লা ইউনিয়ন ছাত্র দলের রাকিব আহমেদ, গাজীপুরের গাছা মেট্রো থানা ছাত্র দলের হৃদয় হোসেন, সাভার ছাত্র দলের আফিকুল ইসলাম সাদ, পল্লবী থানা ছাত্র দলের লিটল হাসান লাল্লু, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি বারগাঁও ইউনিয়নের তানভীর হোসেন মাহমুদ, জামালপুরের শরীফপুর ছাত্র দলের সপ্ত।

এছাড়া জামালপুরের দিকপাইভ ছাত্র দলের মো. জাহিদুল ইসলাম, হবিগঞ্জের ৯ নং ওয়ার্ডের রিপন চন্দ্র শীল, নেত্রকোনার দূর্গাপুর থানার গুজিরকোনা ছাত্র দলের সাইফুল ইসলাম, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ছাত্র দলের মল্রিক আফজল মিয়া, পঞ্চগড় জেলার বোদার ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্র দলের সুমন ইসলাম, মিরপুর বাংলা কলেজ ছাত্র দলের সাগর আহমেদ, যশোর ছাত্র দলের তানভীর রায়হান আলিফ, ইউসুফ আলী, বাগেরহাটের চিতলমারি শেরে বাংলা কলেজ ছাত্র দলের সাব্বির মল্লিক, আমিনুর রহমান কলেজের আহাদ আলী, মাগুর জগদল ইউনিয়নের রাজু আহমেদ, নরসিংদীর মাধবর্দির মো. শাওন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের জালালউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের আসিফ হোসেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের তানভীর সিদ্দিকী, ঈদগাহ উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের নুরুল মোস্তফা, ঝালকাঠির ৭ ওয়ার্ডের রাকিব হাওলাদার, মুলাদী সরকারি কলেজের মো. রিয়াজ, পটুয়াখালীর গলাচিপার সাগর গাজী, সোনারগাঁও ইউনির্ভাসিটির রাসেল মাহমুদ, সিরাজগঞ্চ জেলার সদরপুরের সুমন, নরসিংদীর শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজের আমজাদ হোসেন।

ছাত্রদল সভাপতি রাকিব বলেন, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, এক এগারোর আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রদল এবারও পূর্ণশক্তি নিয়ে শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে ছাত্রজনতার সাথে শামিল হয়েছিল, যেই আন্দোলনে পরাজিত হয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এই আন্দোলনে ছাত্রদলের ২১০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে, যাদের সবাই হেফাজতে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ছাত্রজনতার আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বিকাল ৩টায় ঢাকাসহ সারাদেশে শোক মিছিল করেছে ছাত্রদল।

ছাত্রদল ইতিবাচক রাজনীতি চলমান রাখবে বলে জানিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ‍মুখে খুনি হাসিনা দেশ থেকে পালিয়েছে। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে ছাত্র দলের প্রত্যেকটা নেতা-কর্মী একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস এবং সাম্য-সম্প্রীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলো। একই সাথে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র দলের যে সংগ্রাম সচল ছিলো, তা এখনো আছে। আমরা মনে করছি, আগামীতে যে রাজনীতি হবে সেই ইতিবাচক রাজনীতি হবে সেটা চলমান থাকবে যেটা আমরা অতীতে ছাত্রদল সবসময় করেছে। আমরা প্রত্যেকটি ছাত্র সংগঠনের সাথে আমরা ইতিবাচক রাজনীতির যে প্রতিযোগিতা তা চলমান রাখতে চাই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যেটা মনে করছি, একটি ক্যাম্পসে সুস্থ রাজনীতির জন্য, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য অবশ্যই ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন রয়েছে। যারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি করেছে,পিটিয়ে মানুষ মেরে ফেলেছে, ক্ষমতার দাপট, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে যে ছাত্র সংগঠনের তাদের রাজনীতি বন্ধ করার সময় এসেছে। ছাত্রদের অধিকারের জন্য ছাত্র রাজণীতি দরকার আছে বলে আমরা মনে করি।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন...