
আল-মামুন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রামে বৃহত্ত সামাজিক উৎসবকে ঘিরে জমে উঠেছে পাহাড়। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের প্রধানতম সামাজিক উৎসব বৈসাবি উৎসব শুরু হবে ১২ এপ্রিল থেকে। কিন্তু এর আগেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় চলছে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে শুরু হয়েছে বৈসাবি মেলা।
বৈসাবি মূলত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। খাগড়াছড়ি জেলার প্রধান তিন নৃগোষ্ঠী ত্রিপুরা সম্প্রদায় বৈসু, মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই এবং চাকমা সম্প্রদায় বিজু নামে এ অনুষ্ঠান পালন করে। এছাড়া পার্বত্য রাঙামাটি এবং বান্দরবান জেলার অন্যান্য সম্প্রদায় বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠান ভিন্ন নামে পালন করে। বৈসাবি শব্দটি মূলত তিন সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে গঠিত।
বর্ষবরণের এ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ বর্ণাঢ্য আয়োজনে উৎসবের উদ্বোধন করেছে। এ উপলক্ষ্যে শহরে শোভাযাত্রা করা হয়েছে। শোভাযাত্রা শেষে পাহাড়ের ঐতিহ্য তুলে ধরে মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়েছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল ২০২৫) সকাল ৯টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মোহাম্মদ আমান হাসান। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরাসহ এ সময় জেলার সামরিক-বেসামরিক পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মোহাম্মদ আমান হাসান বলেন, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মানুষ সবসময়ই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করে। এ সকল অনুষ্ঠানে পাহাড়ি বাঙালি সকল সম্প্রদায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠান শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অংশগ্রহণকারীরা শোভাযাত্রায় ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সংস্কৃতি প্রদর্শন করেন। শোভাযাত্রার কারণে শহরে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে খাগড়াছড়ি পৌর টাউন হলের সামনে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হয়। পরে সেখানেই চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য তুলে ধরে মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া শ্যামল রোজারিও জানান, এবারের শোভাযাত্রা সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যথাসময়েই এবারের শোভাযাত্রা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। শোভাযাত্রায় আনন্দঘন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
মনিন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আমরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকি বৈসু অনুষ্ঠানের। এ বছর বৈশ্বিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা চলছে। পৃথিবীর সকল মানুষের শান্তি ও মঙ্গল প্রয়োজন। সেই মঙ্গল কামনা করেই আমরা এবার বৈসু শুরু করতে যাচ্ছি। আগামী ১৩ এপ্রিল হারিবৈসু দিয়ে আমাদের মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, এবারও গত বছরগুলোর মতো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে মাধ্যমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার তীব্র খরায় প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে পানির সংকট রয়েছে। এসব গ্রামে অনুষ্ঠান চ্যালেঞ্জিং হবে।
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া কনিকা ত্রিপুরা জানান, বরাবরের মতো জেলা পরিষদ এবারও অনুষ্ঠান আকর্ষণীয় করতে চেষ্টা করেছে। তবে সাধারণ জনগণের কাছে মেসেজ ঠিকভাবে পৌঁছেনি। প্রতিবছর ১০ অথবা ১১ এপ্রিল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এবার আগেই করা হচ্ছে। এ ছাড়া শোভাযাত্রায় এবার মিউজিক কম হয়েছে। মিউজিক পর্যাপ্ত থাকলে তালে তালে হইহুল্লোড় করে আনন্দঘনভাবে শোভাযাত্রা করা যায়। আশা করছি কর্তৃপক্ষ আগামীতে এসব বিষয় নজরে রাখবে।