ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে লেনদেন বেড়েছে, পাচারের আশঙ্কা

ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে লেনদেন বেড়েছে, পাচারের আশঙ্কা

পিবিএ ডেস্কঃ দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে লেনদেনের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৫ শতাংশ। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযান থেকে বাঁচতে এই টাকার একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সরকারের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়। যেখানে অভিযান চালানো হয়েছে, সেখানেই মিলেছে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা। স্বর্ণালংকার ও ব্যাংকে থাকা অর্থের বাইরেও এই অভিযানে প্রায় ১২ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যার পুরোটাই অবৈধ। দেশে এমন অবৈধ অর্থের পরিমাণ কত, তার নিদিষ্ট কোনো হিসাব নেই।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে কর ফাইল আর ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে থাকা টাকার একটি বড় অংশ দেশ থেকে পাচার হয়ে যেতে পারে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন পিবিএ’কে বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে নগদ টাকার প্রয়োজন হয় কখন? যখন আপনি ফরমাল সেক্টরের বাইরে অনিয়ম, অনৈতিক কাজ করতে যাবেন। এরকম অর্থের চাহিদা আছে বলেই মানুষ এভাবে নগদ টাকার ব্যবহার করছে। এই টাকা ঘুষ, চোরাচালান, হুন্ডি, মানি লন্ডারিংয়ের কাজে ব্যবহার হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন পিবিএ’কে বলেন, এ ধরনের টাকা আর কোথায় কোথায় আছে, সেখান থেকে উদ্ধারের মাধ্যমে পাচার প্রতিরোধে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। কারণ আমদানিতে বেশি ব্যয় আর রপ্তানিতে কম ব্যয় দেখিয়ে টাকা পাচার হয় দেশ থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, চলতি বছরের জুলাই শেষে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে মানুষের হাতে এক লাখ ৫৭ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা জমা রয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই হিসাবে বলা হয়েছে, এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে মানুষের নগদ টাকার লেনদেন বেড়েছে ২০ হাজার ১২৯ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মানসুর পিবিএ’কে বলেন, কতিপয় ব্যক্তির কাছে সম্পদের যে বরাদ্দ হয়েছে, তা আইন বহির্ভূত। যেটা আমরা কিছুদিন ধরে দেখছি। এসব কিন্তু ছোট ছোট ঘটনা। এর বাইরেও ব্যাপকভাবে হচ্ছে। সেই সম্পদগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাংকে আসে না।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান পিবিএ’কে বলেন, একটি হচ্ছে অবৈধ আয়, আরেকটি হচ্ছে বৈধ আয়ের ট্যাক্স না দেওয়া। ক্যাসিনোতে অনেক টাকা চলে আসছে। এটা ইনফরমাল। এসব টাকারও অনেকটা অর্থনীতিতে যাচ্ছে।

‘এসব অবৈদ অর্থের বড় অংশই যে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তার বড় প্রমাণ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসএনবির সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা বা ৬২ কোটি সুইস ফ্রা। অথচ ২০১৭ সালেও ছিল চার হাজার ১৬০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের অর্থ বেড়েছে ২৯ শতাংশ বা এক হাজার ১৯৯ কোটি টাকা।’

আহসান এইচ মানসুর আরও বলেন, অবৈধ অর্থ যেখানে বেশি হবে, সেখানে মানি লন্ডারিংটাও বেশি হবে। কারণ অবৈধ অর্থ দেশে ভোগ করতে গেলে অনেক বাধা। সে জন্য আমাদের অর্থনৈতিক জ্ঞান বলে, এই সময় পাচারটা বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান পিবিএ’কে বলেন, বিএফআইইউ সবসময় অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করছে। দেশের আর্থিকখাতে এ ধরনের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...