ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা পুনরুদ্ধার বাস্তবায়নে দরপত্র আগামী সপ্তাহে

পিবিএ,ময়মনসিংহ: সব কিছু ঠিক থাকলে ‘পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পটির বাস্তবায়নে দরপত্র আগামী সপ্তাহে আহ্বান করা হবে এবং কার্যক্রম শুরু হবে চলতি বছরের মার্চ মাসে।

জানা যায়, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নতির অন্যতম সোপান এই ব্রহ্মপুত্র নদটি খননে উদ্যোগী হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরনো ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুর্নভবার নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারে ৪ হাজার ৩৭১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গত বছরের ২ অক্টোবর অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার কোটির ওপরে টাকা ব্যয় হবে ব্রহ্মপুত্র খননে।

ব্রহ্মপুত্রের বুক চিরে পাশাপাশি দু’টি জাহাজ চলাচলের জন্য এ নদ ৩০০/৩৫০ ফুট প্রশস্ত করা হবে যাতে শুকনো মৌসুমে এই নদে কমপক্ষে ১০ ফুট গভীর হয় এবং পানি থাকে। এ কাজ সম্পন্ন হলে ভারতের ডুবুরি এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে দৈখাওয়া নদীবন্দর থেকে প্রায় ১০ হাজার টন মালামাল পরিবহনের উপযোগী কার্গো ও ভেসেল জাহাজ মালামাল নিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে ময়মনসিংহ হয়ে আশুগঞ্জ, সিলেটের জকিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরে পৌঁছাতে পারবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ তথ্য জানায়। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র খননকাজ শেষ হলে পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি বাড়বে ফসল উৎপাদন। ভাগ্য খুলবে মৎস্যজীবীদেরও। নদ ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যও ফের জমজমাট হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।

এদিকে খননের আগে নদের দু’পারের হাজার হাজার একর জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নূরুল আমিন কালাম। এ ছাড়াও সঠিকভাবে খনন ও খনন করা বালুর সুষ্ঠু সংরক্ষণ এবং সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটি এর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক বলেন, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চের শেষে ব্রহ্মপুত্রের খনন কার্যক্রম শুরু হবে। এ জন্য আগামী সপ্তাহে দরপত্র আহ্বান করা হবে। প্রকল্পের কার্যক্রম অগ্রগতি নিয়ে তিনি জানান, এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই নিয়ম মতো ভৈরব থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে বাকি অংশের জরিপ কাজ সম্পন্ন হবে।

তিনি আরো জানান, এ প্রকল্পের আওতায় নাব্যতা সংকটের মুখে থাকা এই নদের হারানো যৌবন ফিরিয়ে এনে আবারও জাহাজ ও কার্গো চলাচল করতে পারবে। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে লোকালয় বা বাজার এলাকায় গড়ে ওঠবে ১৪টি ঘাট। পাশাপাশি দু’টি জাহাজ চলাচলের জন্য এ নদ ৩০০/৩৫০ ফুট প্রশস্তও ১০ ফুট গভীর করা হবে। এ নদের ৮ কোটি ঘনমিটার অংশ ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে। খননের পর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করবে বিআইডব্লিউটিএ।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম বলেন, যারা ক্যাপিটাল ড্রেজিং করবে তারা পরবর্তী তিন বছর নদের সংরক্ষণও করবে। ব্রহ্মপুত্র খনন করা হলে যমুনা থেকে প্রচুর পরিমাণ পানির সঙ্গে বালু আসবে। এ কারণে নৌপথটি সারাবছর সংরক্ষণের আওতায় রাখতে হবে। এই অবস্থার জন্য জামালপুরে একটি ড্রেজার বেজ গড়ে তোলার পাশাপাশি ময়মনসিংহেও ড্রেজিং অফিস করা হবে বলে আরও জানান তিনি।

পিবিএ/এআর/হক

আরও পড়ুন...