ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় এখন পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রিও গ্র্যান্ডে ডো সুল রাজ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সেখানে ১০৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। খবর আল জাজিরার।
রাজ্যের বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টি এবং বন্যা ক্ষয়ক্ষতির কারণে ৮৮ হাজারের বেশি মানুষ নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। স্কুল, জিমনেসিয়াম এবং অন্যান্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ।
বন্যার কারণে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া রাস্তা-ঘাঁট ভেসে গেছে এবং বেশ কিছু সেতু ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎসংযোগ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, ৮ লাখের বেশি মানুষ পানির অভাবে দিন কাটাচ্ছে।
বন্যার কারণে গত শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে পোর্তো অ্যালেগ্রে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
গত বৃহস্পতিবার বন্যাকবলিত অঞ্চলটি পরিদর্শন করেছেন ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা। এই বিপর্যয়ের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন তিনি।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সিসকো এলিসেউ অ্যাকুইনো বলেছেন, বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন এবং আবহাওয়ার এল নিনো পরিস্থিতির ‘বিপর্যয়কর মিশ্রণের’ ফলাফল ছিল ব্রাজিলে আঘাত হানা সাম্প্রতিক বিধ্বংসী ঝড়।
দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশটি সম্প্রতি বেশ কয়েকবার প্রতিকূল আবহাওয়ার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে একটি ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
অ্যাকুইনো বলেছেন, ভৌগলিক কারণে অঞ্চলটি প্রায়শই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং মেরু বায়ুর সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব ঘটনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া গুয়াইবা নদীর পানির উচ্চতা রোববার সকালে সর্বোচ্চ ৫.৩৩ মিটার বেড়েছে। ১৯৪১ সালে বিধ্বংসী বন্যার সময় ওই নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছিল ৪.৭৬ মিটার, যা এবারের বন্যার সময়ের চেয়ে যথেষ্ট কম।
এদিকে রোববার ভ্যাটিকানে প্রার্থনার সময় পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, তিনি ব্রাজিলের বন্যাকবলিত জনগণের জন্য প্রার্থনা করছেন। তিনি হতাহতদের প্রতি এবং যারা নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন তাদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।