পিবিএ ডেস্ক: সম্প্রতি গবেষকরা এক ধরনের ব্লাড টেস্ট তৈরি করেছেন যার মাধ্যমে আগামী ১০ বছরে আপনার মারা যাওয়ার সম্ভাবনা জানা যেতে পারে। জার্মানির বিজ্ঞানীরা এ গবেষণাটি চালিয়েছেন বলে জানা গেছে। জার্মানি বিজ্ঞানীরা ৪৪,০০০ লোকের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে জানতে পেরেছেন, রক্তে ১৪ টি বায়োমার্কার বা জৈবসূচক মৃত্যুর ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে।
বায়োমার্কারগুলি অনাক্রম্যতা এবং গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে চর্বি এবং প্রদাহ সম্পর্কিত সমস্ত কিছুর সাথে যুক্ত। বায়োমার্কার নিয়ে একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, আগামী দু’ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে কেউ মারা যাবেন কিনা তা ভবিষ্যদ্বাণী করার বিষয়ে ৮৩ শতাংশ সঠিক ছিল।
তবে পদ্ধতিটি এখনও প্রচলিত রক্ত পরীক্ষায় প্রয়োগ করা হয়নি; যেমনটা কোনও রোগীর সংক্রমণ রয়েছে কিনা তা যাচাই করতে ব্যবহৃত হতো। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ওই পরীক্ষার ফলাফলগুলো আগামীতে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্লাড টেষ্টে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা এই সমীক্ষাকে একটি ‘উত্তেজনাপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে ‘বাস্তব ক্ষেত্রে’ কোনও এই পদ্ধতি ব্যবহারের আগে আরও অনেক গবেষণা করা দরকার। চিকিৎসকরা সাধারণত রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রার মতো কারণের ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তি আগামী বছরের মধ্যে মারা যাবেন কিনা তা ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হন।
গবেষকদের ওই দলটি নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে লিখেছেন যে, পরবর্তী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে একজনের মৃত্যুর ঝুঁকির পরিমাণ নির্ধারণ করা আরও ‘জটিল’। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষকরা কয়েক হাজার প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রক্ত বিশ্লেষণ করেছেন। ওই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ১০৯ বছর।
অংশগ্রহণকারীদের সবাই ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন। তাদের ওপর ১২ টি গবেষণা বা ‘কোহোর্টস’ করা হয়েছিল। ওই গবেষণার ফলোআপ পিরিয়ড ছিল ১৬ বছর পর্যন্ত। এই সময়ের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৫১২ জন মারা যান। গবেষক দলটি অংশগ্রহণকারীদের রক্তের নমুনাগুলির মধ্যে যারা বেশি দিন বেঁচে থাকেন তাদের তুলনায় বেশি ‘বিপাক বায়োমার্কার’ দেখতে পেয়েছিলেন।
তারা ১৪ টি বায়োমার্কার সনাক্ত করেছিলেন যা সকল বয়সী পুরুষ এবং নারীর মধ্যে পাওয়া গেছে। এই বায়োমার্কারগুলিকে একটি পরীক্ষায় সম্মিলন ঘটানো হয়েছিল। গবেষকরা এর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে প্রথমে অংশগ্রহণকারীদের ‘প্রচলিত কারণসমূহের’ ভিত্তিতে মৃত্যুর ঝুঁকি নিরূপন করেছিলেন।
এর মধ্যে ছিল বিএমআই, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং ধূমপানের পাশাপাশি ক্যান্সার বা হৃদরোগ নিরূপনের বিষয়গুলো। এরপর গবেষকদের দলটি নতুন রক্ত পরীক্ষায় বায়োমার্কারগুলো অনুসারে অংশগ্রহনকারীদের মৃত্যুর ঝুঁকি নিরূপন করেন।
স্কোরগুলি ছিল মাইনাস টু থেকে থ্রি পর্যন্ত। প্রতি এক পয়েন্ট বৃদ্ধিতে দ্রুত মৃত্যুর ঝুঁকির সাথে প্রায় তিন গুণ বেশি সংশ্লিষ্ট ছিল। দুই থেকে ১৬ বছরের ফলোআপ করা হয়েছিল। এই পরীক্ষায় ৮৩ শতাংশ নির্ভুলতার সাথে অংশগ্রহণকারীদের মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। এটি ‘প্রচলিত রিস্ক ফ্যাক্টর পরীক্ষার’ চেয়ে উচ্চতর ছিল যা ৭৯ শতাংশ পর্যন্ত নির্ভুল ছিল।
ওপেন ইউনিভার্সিটির ফলিত পরিসংখ্যানের ইমেরিটাস অধ্যাপক কেভিন ম্যাককনওয়ে বলেছেন, এটি গবেষণার একটি নিখাদ এবং আকর্ষণীয় অংশ। তবে মৃত্যুর ঝুঁকি পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য বিদ্যমান পদ্ধতির বাইরে এটা যায় না। তিনি বলেন, ক্লিনিকাল কাজের ক্ষেত্রে এই ফলাফলগুলি সরাসরি ব্যবহার করা যাবে না। এর একটি কারণ হলো সংশ্লিষ্ট ‘বায়ো ইন্ডিকেটর’গুলো একই স্কেলে মাপা হয়নি।
এদিকে, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ডিমেনসিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক আমানদা হেসলেগ্রাভ বলছেন, আমাদের স্বাস্থ্য এবং শরীরে রোগে কী ঘটছে সে সম্পর্কে বায়োমারকারস গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিয়ে থাকে।
পিবিএ/এমএসএম