বয়ঃসন্ধিকালের গুরুত্ব

পিবিএ হেল্থ ডেস্ক: বয়ঃসন্ধিকাল (Puberty) হল যৌবনের উন্মেষ ও বিকাশের কাল। কৈশোর থেকে যৌবন প্রাপ্তি পর্যন্ত সময়কালকে কৈশোর কাল বা বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়। ইংরেজিতে এই সময়টাকে teenage বা adolescents বলা হয়। মূলতঃ কৈশোর কালেই যৌবনের উন্মেষ হয় এবং ক্রমান্বয়ে তা বিকশিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ যৌবনপ্রাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। সাধারণভাবে ১০ থেকে ১৯ বছরের বয়সকালটাকেই কৈশোরকাল ধরা হয়। এরমধ্যে ১০ থেকে ১৫ বছর সময়কে early adolescents এবং ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সকে old adolescents বলা হয়।

এটি শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করার মধ্যবর্তী অবস্থা। এ সময় জুড়ে বিভিন্ন রকম শারীরিক পরিবর্তন ঘটে এবং আকস্মিক হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মানসিক আবেগের তীব্রতার উত্থান পতন ঘটে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বে নিষ্ক্রিয় থাকা হাইপোথ্যালামাস এসময় হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাধারণত ডোপামিন, গ্লুটামেট ও সেরেটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন এই আবেগীয় পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা রাখে এবং পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং গ্রোথ হরমোন কৈশোরকালীন শারীরিক বিকাশ ও যৌন আচরণকে সক্রিয় করণে কাজ করে। ভৌগলিক অবস্থান ভেদে কৈশোর কালের ব্যাপ্তির তারতম্য দেখা যায়।

বয়ঃসন্ধি একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি শিশুর শরীর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে রূপান্তরিত হয় এবং প্রজননের সক্ষমতা লাভ করে। মস্তিষ্ক থেকে গোনাডে (ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয়) হরমোন সংকেত যাবার মাধ্যমে এটির সূচনা ঘটে। ফলশ্রুতিতে গোনাড বিভিন্ন ধরনের হরমোন উৎপাদন শুরু করে যার ফলে মস্তিষ্ক, অস্থি, পেশি, ত্বক, স্তন, এবং জনন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহের বৃদ্ধি শুরু হয়। বয়ঃসন্ধির মধ্যভাগে এই বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং বয়ঃসন্ধি শেষ হবার মাধ্যমে এই বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয়। বয়ঃসন্ধি শুরুর পূর্বে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্য প্রায় সম্পূর্ণটাই বলতে গেলে শুধু যৌনাঙ্গের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকে। বয়ঃসন্ধির সময়, শরীরের গঠনের আকার-আকৃতি, গুরুত্ব ও কাজে প্রধান পার্থক্যগুলো প্রতীয়মান হয়। এদের মধ্যে খুবই অবশ্য সম্ভাবী পরিবর্তনগুলোকে সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য বলা হয়।

আসলে যৌবনের যা কিছু জৌলুস, ঐশর্য্য, শক্তি, সামর্থ্য বা প্রাচুর্য তার সবকিছুরই ভিত্তিভূমি হল এই বয়োঃসন্ধিকাল বা কৈশোর কাল। মানুষের শরীর এবং মন-মানসিকতায় যৌবন প্রাপ্তির জন্য এই সময় থেকেই সমস্ত যোগান আয়োজন চলতে থাকে।তাই এই সময়টা মানুষের জীবনের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সময়।এই সময়ে সুস্থ থাকা প্রতিটি কিশোর-কিশোরীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত আকস্মিক হরমোনের পরিবর্তনজনিত আবেগের তীব্রতার কারণে এ সময় তরুণ-তরুণীদের মনে অত্যন্ত চিত্তচাঞ্চল্য বিরাজ করে এবং বেশ কিছু সাধারণ (common) স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয় যেগুলোর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। এ প্রসঙ্গে এখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনের দিকে দৃষ্টিপাত করা যেতে পারে, যাতে বলা হয়েছে:

২০১৫ সালে আনুমানিক ১.২ মিলিয়ন বা বারো লক্ষেরও বেশি টীনএইজ ছেলে-মেয়ে মারা যায়, আর প্রতিদিন মারা যায় প্রায় তিন হাজারেরও বেশি। আর এসব মৃত্যুর বেশির ভাগই ছিল প্রতিরোধযোগ্য অথবা চিকিৎসাযোগ্য।

২০১৫ সালে কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনাজনিত জখম। এছাড়া অন্যান্য প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া, আত্মহত্যা, ডায়রিয়া রোগ এবং ডুবে যাওয়া।

বিশ্বব্যাপী ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ও শিশুজন্ম দান।

বয়স্কদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রায় অর্ধেক রোগ ১৪ বছর বয়সে শুরু হয়ে যায, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি অবহেলার কারণে অচিহ্নিত থেকে যায় এবং এর কোন চিকিৎসা বা প্রতিকার করা হয় না।

পিবিএ/এমএএইচ

আরও পড়ুন...