বয়স লুকাতে পালংশাক

পিবিএ ডেস্ক: পালংশাক খনিজ, ভিটামিন, পানি আঁশ সমৃদ্ধ। পালংশাকের ইংরেজি নাম Spinach ও বৈজ্ঞানিক নাম Spinacea olerocea পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে। বাড়তি খাবারের চাহিদা কমায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পালংশাকে ৯০.০৮ গ্রাম পানি, ১.৮ গ্রাম খনিজ লবণ, ০.৬ গ্রাম আঁশ, ৩.৩ গ্রাম আমিষ, ২.১ গ্রাম শর্করা, ৭৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৮.৭ মিলিগ্রাম লোহা, ৭৯৪০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ ও ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে।

এক কাপ পালংশাক খাদ্য আঁশের দৈনিক চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করে। প্রতি ১০০ গ্রাম পালংশাকে মাত্র ২৩ ক্যালরি। পালংশাকে রয়েছে ১০টিরও বেশি ভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড, যা ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের প্রতিরোধে কাজ করে।

লুটেনসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইটোকেমিক্যাল আছে। যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। পালংশাকের বিটা ক্যারোটিন চোখে ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়। ব্রণ, বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের সুরক্ষায় পালংশাকের ভূমিকা অনন্য।

নাস্তায় নুড্লসের পরিবর্তে এক বাটি পালংশাক খাওয়া যেতে পারে। পালংশাকের স্যুপ ওজন কমাতে সহায়ক। কোনো চর্বি নেই। পালংশাকে প্রচুর পানি থাকে। রক্তের গুণাগুণ বাড়াতে পারে পালংশাক। কারণ পালংশাকে আছে আয়রন। হালকা জ্বালে পালংশাক রান্না করতে হবে। তাহলে পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকবে।

আমাদের দেশে শীতকালে পালংশাকের চাষ হয়। জমি, জমির আইলে বা অন্য ফসলের মধ্যে পালংশাকের চাষ করেন কৃষক। তবে ছাদে বা বেলকোনিতেও পালংশাক হয়। বীজ বপনের এক মাসের মধ্যে শাক খাবার উপযোগী হয়। রূপচর্চায় পালংশাকের জুড়ি নেই।

ব্রণের সমস্যা দূর করে পালংশাক। এ জন্য পালংশাকের মাস্ক ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। পালংশাক, গাজর, শসা ব্লেন্ড করুন। এই জুস পুষ্টিগুণে অনন্য। কয়েকদিন খেলে এর ফলাফল হাতেনাতে টের পাবেন। ত্বকের সমস্যা দূর হবে। বয়সের ছাপ লুকাতে পালংশাক কাজ করে। এতে আছে ফ্রি র‌্যাডিকেলস, যা ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না। মুখের ত্বকের যত্নে কত কিছুই না আমরা করি।

এটা-সেটা ব্যবহার করি। অথচ পালংশাক, মধু, লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগালে অনেক উপকার। এই মিশ্রণ ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ত্বক সতেজ হবে। মরা কোষ পড়ে যাবে। ত্বক হবে মসৃণ, কোমল, উজ্জ্বল। চুল পড়ে, চুল সাদা হয়ে যায়, চুলে মোটেই কোমলতা নেই- নিয়মিত পালংশাক খেতে পারেন। চুলের সমস্যা কেটে যাবে। কারণ পালংশাকে আছে ভিটামিন বি, সি, ই, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩, ফ্যাটি এসিড।

এসব চুলের জন্য খুব দরকারি। রক্তে লোহিত কণিকা কমে গেছে যাদের, তারা পালংশাক খেলে উপকার পাবেন। পালংশাকের ভিটামিন, নিউট্রিয়েন্টস লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ায়। হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে পালংশাক ভালো কাজ করে বলে জানা যায়।

পালংশাকের ভিটামিন, মিনালেরস নারীদের মাসিকজনিত সমস্যা দূর করে থাকে। বিভিন্নভাবে রান্না করে পালংশাক খাওয়া যায়। চিকেন পালংশাক, পালং পনির, সবজি ও বড়ি দিয়ে পালংশাকের ঘণ্টো, শুধু পালংশাকের ঘণ্টো, পালং প্রদীব, পালংশাকের মিষ্টি, পালং নৌবিহার, পালং কোপ্তা, পালং মসুরডালকারি, পালং থেপলা অন্যতম মুখরোচক খাবার। পালংশাকের আলফা লিপোয়িক এসিড রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

শরীরে ইনস্যুলিনের সেনসিটিভিটি বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা পালংশাক খেলে উপকার পাবেন। তবে অতিরিক্ত পালংশাক খাওয়া ভালো নয়। পালংশাক বেশি খেলে পেট ফাপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

পালংশাক খাবার সময় অন্য কোনো খাবারে উচ্চমাত্রায় ফাইবার নেয়া যাবে না। এতে ডায়েরিয়া, পেটের সমস্যা তৈরি হতে পারে। পালংশাকে উচ্চমাত্রায় অক্রালিক এসিড থাকে। অতিরিক্ত পালংশাক খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। পালংশাক বেশি গ্রহণ করলে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। গেঁটে বাত থাকলে ব্যথা বাড়বে। সহজলভ্য এবং দামে কম। পালংশাক খেয়ে আমরা পুষ্টির চাহিদা সহজেই মিটাতে পারি।

পিবিএ/ইকে

আরও পড়ুন...