পিবিএ,ঢাকা: শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা না মেনে ঢাকা মহানগরের নামীদামি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো ফি আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়ে বাড়তি অর্থ পরিশোধ করে সন্তানকে ভর্তি করছেন অভিভাবকরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যয় বেড়েছে, তাই কমিটির সিদ্ধান্তে আমরা ভর্তি ফি নির্ধারণ করেছি এবং বাধ্য হয়ে বাড়তি অর্থ নেয়া হচ্ছে। এটা অন্যায় কিছু নয় বলে মনে করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
গত নভেম্বর মাস থেকে দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। লটারি ও ভর্তি পরীক্ষার পর্ব শেষে শুরু হয় ভর্তি কার্যক্রম। অভিযোগ উঠেছে, সরকারের নির্ধারিত অর্থের বেশি আদায় করে ঢাকার অনেক নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে।
মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধানমন্ডির জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, স্ট্যামফোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাকলি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাড্ডার আলাতুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিন ঘুরে অতিরিক্ত ভর্তি ফি বাবদ অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ধানমন্ডির নন-এমপিওভুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্ট্যামফোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্লে থেকে কেজি শ্রেণিতে বেতন তিন হাজার টাকাসহ ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে মোট ২৮ হাজার টাকা। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে বেতনসহ ভর্তি ফি ৩০ থেকে ৩৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। আবার পুনঃভর্তির ক্ষেত্রেও সমান অর্থ নেয়া হচ্ছে।
ধানমন্ডির জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাই স্কুলেও দেখা যায় একই চিত্র। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের চিত্রও একই রকম। সরকারের দেয়া নীতিমালা অনুসরণ না করে সেখানেও ‘গলাকাটা’ ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে। স্কুলটির কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, এখানে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে আট হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণির জন্য উন্নয়ন ফি বাবদ বাড়তি ২৫ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। অন্যান্য শ্রেণিতে ফি নেয়া হচ্ছে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বেশি। ফি তো একটু বেশি নিতেই হয়, না হলে চলব কীভাবে
জানতে চাইলে স্কুলটির অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘স্কুলের বিভিন্ন খাতে অনেক ব্যয়। কমিটির সিদ্ধান্তে আমরা ভর্তি ফি নির্ধারণ করেছি।’
একইভাবে বাড্ডার এমপিওভুক্ত স্কুল আলাতুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ শামসুল আলম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বেশি। ফি তো একটু বেশি নিতেই হয়, না হলে চলব কীভাবে?’
বেশ কয়েকজন অভিভাবক বাড়তি ফি নেয়ার বিষয়ে জাগো নিউজের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার অনেক কিছু বিবেচনা করেই ভর্তি ফি নির্ধারণ করেছে। এরপরও এসব প্রতিষ্ঠান গলাকাটা ফি আদায় করছে। আমরাও নিরুপায়। আমাদের বাচ্চাদের তো বাধ্য হয়েই ভর্তি করাতে হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যাতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ফি’র বাড়তি অর্থ আদায় করতে না পারে- যোগ করেন তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ ভর্তি নীতিমালা- ২০১৮ তে বলা আছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে পারবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং এমপিও বহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি’সহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করতে পারবে।
এ বিষয়ে মাউশি’র মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক সরকার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘কেউ যাতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করতে না পারে সে জন্য আমাদের ১১টি টিম ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। বাড়তি ফি নিয়ে কেউ পার পাবেন না। সবাইকে বাড়তি ফি ফেরত দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে আমাদের টিমের সদস্যরা নানা কৌশলে সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মাউশিতে প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে। এরপর আমাদের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে কারণ জানতে চাওয়া হয় এবং বাড়তি অর্থ ফেরতে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। বাড়তি অর্থ ফেরত দেয়া হলেও সন্তোষজনক কোনো জবাব পাওয়া না গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
পিবিএ/ইএইচকে