পিবিএ ডেস্ক: ভারত-অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করাকে কেন্দ্র করে ফের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে চিরবৈরী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানে। গত বৃহস্পতিবার ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উভয়পক্ষের গোলাগুলিতে ৮ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জনই ভারতের। স্বাধীনতা দিবসের উৎসবে পাঁচ সেনা সদস্যের প্রাণহানির ঘটনা ভারতকে আরও উস্কে দিল পাকিস্তান। তাইতো শত্রু দেশ পাকিস্তানকে থামাতে এবার বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিল নরেন্দ্র মোদি সরকার।
পাকিস্তানকে সতর্ক করে গতকাল শুক্রবার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, এখনও পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্র নিয়ে প্রথম ব্যবহার নীতিতে চলে না ভারত। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ভবিষ্যতে এই নীতিরও পরিবর্তন হতে পারে। অর্থাৎ ভারত কখনও আগে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করবে না। তবে পরিস্থিতি বুঝে আগে হামলা চালাতেও পারে। গতকাল রাজস্থানের পোখরানে সেনা মহড়া অনুষ্ঠানের শেষ দিনে অংশ নেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, কাকতালীয়ভাবে আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। আর পোখরানের সঙ্গে অটল বিহারী বাজপেয়ীর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ভারতকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে অটল বিহারী বাজপেয়ীর যে অবদান রয়েছে তার সাক্ষী এই পোখরান।
পোখরানে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর ছবিতে শ্রদ্ধা জানান রাজনাথ। এই পোখরানেই ১৯৭৪ এবং ১৯৯৮ সালে পরমাণু পরীক্ষা করা হয়।
জম্মু-কাশ্মীরে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের পর একের পর এক উসকানিমূলক মন্তব্য করতে দেখা গেছে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। নয়াদিল্লির সঙ্গে সব রকমের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ইসলামাবাদ। কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইমরান খানের সরকার। এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের এই মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন, দিল্লির কূটনীতিক তলব
নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনারা গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ এনে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান। প্রতিবাদ জানাতে গতকাল দিল্লির পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার গৌরব আহলুওয়ালিয়াকে তলব করে ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র দপ্তর। পরে লিপা এবং বাটল সেক্টরে ‘বিনা কারণে’ ভারতীয় সেনাদের গুলি চালানোর নিন্দা জানানো হয়। ওই গুলিতে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের একজন নিরাপত্তা কর্মী এবং দুইজন বেসামরিক সদস্য নিহত হন। এসময় পাঁচ ভারতীয়ও নিহত হন বলে জানা যায়। যদিও ভারত কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।
ভারতের দিক থেকে নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতিকে সম্মান জানানো, একইসঙ্গে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার জন্য দেশটিকে চিঠি দিয়ে আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মোহাম্মদ ফয়সাল। তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের রেজুলেশন অনুসারে ভারতীয় পক্ষের উচিত ভারত ও পাকিস্তানের ইউএন সামরিক পর্যবেক্ষক দলকে (ইউএনএমওজিআইপি) তার ভূমিকা পালন করার অনুমতি দেওয়া। কিন্তু ভারত যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, এলওসি যুদ্ধবিরতি অপ্রাসঙ্গিক।
এদিকে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংকটের মধ্যে এ সপ্তাহের মধ্যেই আরও দুইবার ভারতীয় কূটনীতিক গৌরব আহলুওয়ালিয়াকে তলব করে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
পিবিএ/এমএসএম