
দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কের অস্বস্তি কাটাতে গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ফোরাম যৌথ পরামর্শক কমিটির (জেসিসি) সভায় যোগ দিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ঢাকা।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এ তথ্য জানান। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরানোর বিষয়ে মাসকাটে এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা হয়নি জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সার্বিকভাবে সব বিষয় নিয়ে হয়েছে।
গত রোববার ওমানের রাজধানী মাসকাটে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন তৌহিদ হোসেন। সম্মেলনের ফাঁকে তিনি এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকেরা আজ সকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জানতে চেয়েছিলেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের সঙ্গে শুরুতে যে টানাপোড়েন ছিল, সেটা সবাই জানে। আমরা স্বীকারও করেছি তা। এরপর পররাষ্ট্রসচিবেরা বৈঠক করেছেন। এরপর ব্যবসা মোটামুটি বেড়েছে। আগের জায়গায় (ব্যবসা) পৌঁছে গেছে। এগুলো প্রত্যেকটাই তো ইঙ্গিত।’ তবে কিছু টানাপোড়েন এখনো রয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভিসাসহ কিছু সমস্যা আছে। কিন্তু দুই পক্ষই আমরা মোটামুটি এ ব্যাপারে একমত হয়েছি যে এগুলো সব দূর করে একটা “ইতিবাচক কাজের সম্পর্কের” বিষয়ে আমাদের পৌঁছাতে হবে।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়েও আলোচনার প্রক্রিয়া আছে।
ঢাকা সফরের আমন্ত্রণের বিষয়ে জয়শঙ্করের প্রতিক্রিয়া কী ছিল, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি যে ইঙ্গিতগুলো দিয়েছি, সেসব ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক।’
ওমানের বৈঠকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নিজেদের উদ্বেগ আর চ্যালেঞ্জ দূর করতে একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট করিনি যে আমাদের মধ্যে এই এই উদ্বেগ আছে। আমরা স্বীকার করেছি, কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে, এগুলো আমাদের দূর করতে হবে এবং দুই পক্ষ একমত এগুলো দূর করতে হবে।’
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর জন্য দিল্লিকে চিঠি দিয়েছিল ঢাকা। তাঁকে ফেরানোর বিষয়টি নিয়ে মাসকাটে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ওটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে আলোচনা হয়নি। আমরা সার্বিকভাবে সব বিষয় নিয়েই কথা বলেছি।’ তাহলে কি শেখ হাসিনার প্রসঙ্গটিকে সরিয়ে রেখে দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে ঢাকা? এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সরিয়ে রাখার আসলে ব্যাপার না। এটা তো একটা আলাদা বিষয় (শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো) আদালত চেয়েছে তাঁকে। আমরা তাঁকে প্রত্যর্পণের জন্য অনুরোধ করেছি। তারা করেনি। এর মানে তো এই নয় যে আমরা বাকি সবকিছু নিয়ে বসে থাকব।’