পিবিএ ডেস্ক: ভারতীয় রাজনীতির এই ধারা তিন/চার বছর পূর্বে শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে সরকারি প্রচারে তা আড়ালে থেকে যায়। কিন্তু সত্য প্রকাশ পায়। আর ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও তা বুঝতে পারছেন। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার ইনডেক্স প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ভারতের অবস্থান অনেক পেছনে। যা ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হওয়ার পরিকল্পনাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
ফলে প্রশ্ন উঠতে পারে, এরপরও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কী করে ২০১৪ সালের চেয়ে বেশি আসন ও ভোটে জিতলো? এর উত্তর হলো, নরেন্দ্র মোদির সব ব্যর্থতার পরও বেশির ভাগ ভারতীয় তাকেই উপযুক্ত মনে করেন। তারা বিজেপি সমর্থিত বেশ কিছু মেগা প্রকল্পকেও পছন্দ করেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সবার জ্বালানি নিশ্চিত করতে স্বচ্ছ ভারত, কার্যকর স্বাস্থ্যবীমা আয়ুশ স্ক্রিম, কর সংস্কার ও চলমান ইনফ্রা প্রকল্প।
কিন্তু রাজনৈতিক খতিয়ানে ব্যর্থতার কথাগুলো অবজ্ঞার সুযোগ নেই। ১১৯ টি দেশের মধ্যে ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার ইনডেক্সে ভারতের অবস্থান ১০২তম স্থানে। জনগণকে খাদ্য সরবরাহে বাংলাদেশ (৮৪) ও পাকিস্তানের (৯০) চেয়ে পিছিয়ে। ভারতের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে আফ্রিকার দেশ লেসোথো, জিম্বাবুয়ে, ইয়েমেন ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক।
২০১৮ সালে ভারতের অবস্থান আরও খারাপ ছিল। একই তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল ১০৩তম স্থানে। মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে ভারতের অবস্থান নেমে গেছে ২০ ধাপ।
এটি মোদি ও দলকে সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ যে বার্তাটি দেয় তা হলো- কংগ্রেস ও ইউপিএ জোটের সময়ে ভারত অনেক ভালো করেছে। কখনও ১০০ এর নিচে নামেনি।
ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই নেতিবাচক প্রবণতাকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিজেপি সমর্থক জাতীয় সংবাদমাধ্যমে ভারতের খাদ্যের প্রাপ্যতা ও সরকারি সরবরাহ ব্যবস্থাকে দোষারোপ করা হয়েছে। বিরোধীরা টেলিভিশনে অল্প কয়েকটি অনুষ্ঠানে আলোচনাই করেছেন শুধু।
খুব কম মানুষই জানে যে, বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে চরম ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ৬৮০ মিলিয়ন। ভারতের ৫০ শতাংশ মানুষের সংখ্যা ১.২ বিলিয়ন। সরকারের একটি সর্বশেষ জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যা। ২৯ টি রাজ্যের মধ্যে জনগণকে পর্যাপ্ত খাবার পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে রয়েছে তিনটি রাজ্য। এগুলো হলো, গোয়া, কেরালা ও মিজোরাম।
চরম ক্ষুধায় আক্রান্ত মানুষ পাওয়া যাবে ভারতের গুজরাট (যা জিডিপি ও বিনিয়োগে ভারতের সবচেয়ে অগ্রসর রাজ্য), উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা। কোনও দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যের অবস্থা এতো খারাপ নয়, পশ্চিমবঙ্গেরও। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অবস্থানও যে একেবারে ভালো তা নয়। একাংশ জনগণ গুরুতর ক্ষুধার মধ্যে বাস করেন এমন রাজ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
এটি সত্য যে, গত কয়েক দশক ধরে অনাহারে মৃত্যুর কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। মাঝে মাঝে খরা ও অন্যান্য পরিবেশগত কারণে বাধাগ্রস্ত হলেও কৃষি উৎপাদন স্থিতিশীল রয়েছে। খাদ্যের মজুদও ভালো। ৩০৮ মিলিয়ন টনের বাফারের জায়গায় মজুদ আছে ৭০০ মিলিয়ন টন।
এই পরিস্থিতি নীতি নির্ধারকরা বেশি করে খাদ্য শস্য রফতানির পক্ষে মত দিচ্ছেন। মজার বিষয় হলো, মজুদকৃত খাধ্যের ২৫/৩০ শতাংশ দুর্বল সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে নষ্ট নয়।
এছাড়া মজুদ খাদ্যের অন্তত ক্ষুদ্র অংশ বিনামুল্যে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকায় পাঠানো যেতে পারে। এতে করে আদিবাসীদের অপুষ্ঠিজনিত মৃত্যু কিছু মাত্রায় ঠেকানো যেতে পারে। বাজার অর্থনীতির এই যুগে এই ধারণাকে অভাবনীয় হিসেবে দেখা হতে পারে। বাজার অর্থনীতির পক্ষে লোকেরা বিনামূল্যে কাউকে কিছু দিতে রাজি না। এই অর্থনীতির রক্ষকরা কয়েকটি রাজ্যে বাস্তুশাস্ত্র ও জলবায়ুর চরম অবক্ষয় বা অবহেলায় খাবারের অপচয় নিয়ে ক্ষতিকর কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না।
পিবিএ/এমএসএম