ভারতের মুসলমানরা মোদির জয়ের পর যে কৌশলে এগোতে চান

ভারতের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ভূমিধস জয়ে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক আরও বেড়েছে

পিবিএ,ডেস্ক: ভারতের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ভূমিধস জয়ে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক আরও বেড়েছে। বিজেপির এমন জয়ে দেশটির অধিকাংশ মুসলমান ভবিষ্যতের ব্যাপারে শঙ্কিত বলেও বিভিন্ন নিরীক্ষায় জানা গেছে। বিশেষত নির্বাচনের পরপরই কয়েকটি মুসলিম নির্যাতনের ঘটনায় শঙ্কা আরও বেড়ে গেছে।এভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিজয় নিয়ে দেশটির মুসলিম সমাজ কী ভাবছে? এ নিয়ে জার্মান বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলে বিভিন্নজনের মতামত জানার চেষ্টা করেছে।এবারের লোকসভা নির্বাচনে ২৭ জন মুসলমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ ৪৩৭ আসনে প্রার্থী দেয়া বিজেপিও সাতজন মুসলমান প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিল৷

ভারতের বিখ্যাত আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আদিল আলভি বলেন, ইতিমধ্যে মুসলমানদের প্রতি বৈরী আচরণের প্রমাণ দেখা গেছে৷ সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে এক মুসলমান ব্যক্তিকে টুপি খুলে ফেলতে এবং হিন্দুদের মতো ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করার ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে দেখান তিনি।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রওনক শাহী বিজেপি আবারও ক্ষমতায় আসায় উদ্বিগ্ন৷ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, গতবারের চেয়ে এবার মুসলমানরা বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়বে৷ কী হবে তা বোঝা যাচ্ছে না ৷ তবে আমি নিশ্চিত পরিস্থিতি আরও খারাপই হবে৷’পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে মুসলমানদের শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তরুণ এই শিক্ষার্থী।

নির্বাচন-পরবর্তী সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে মুসলমানদের উদ্দেশে চিঠি লিখেছে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড’। মুসলমানদের পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে এ আশঙ্কা করছেন বোর্ডকর্তারা।হায়দরাবাদ থেকে নির্বাচিত অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে জানতে চেয়েছেন, গোরক্ষকদের তাণ্ডব রুখতে কী পদক্ষেপ করছেন? ওয়াইসি বলেন, সংবিধানে মানুষের জীবনের অধিকার স্বীকৃত, পশুর নয়।

হায়দরাবাদকেন্দ্রিক নিজের দলকে সর্বভারতীয় দলে পরিণত করতে চান। ওয়াইসি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো এখন আর বিজেপিকে হারাতে পারছে না। ফলে আমাদের কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে৷ মুসলমানরা আর কতদিন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে ভোট দেবে?

তবে মুসলমানদের নিজস্ব শক্তি গড়ে ওঠার ব্যাপারটি এখনও তেমন পরিষ্কার নয়। হায়দরাবাদের মাওলানা আজাদ ন্যাশনাল উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আফরোজ আলম বলেন, মুসলমানদের ২৫টি দল এখনও আছে৷ কিন্তু তারা তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি। কারণ মুসলমানরা মুসলমানদের ভোট দিতে আগ্রহী নয়৷’

আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাজ্জাদ মনে করেন, মুসলমানদের দল থেকে সংসদে প্রতিনিধি গেলেও তাদের কথা শোনা হবে না৷ রাজনৈতিকভাবে মুসলমানরা কিছু করতে পারবে না৷ এটা সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত যে, তারা মুসলমানদের সঙ্গে নেবে কিনা।

তবে নির্বাচনে জয়ের পর থেকে বিভিন্ন বক্তব্যে মুসলমানদের আশ্বস্ত করা চেষ্টা করেছেন নরেন্দ্র মোদি। জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে কোনো ভেদাভেদ করা হবে না জানিয়ে মোদি বলেন, সবকা সাথ, সবকা বিকাশ এবং তার সঙ্গে ‘সবকা বিশ্বাস’ হবে আমাদের মন্ত্র।

শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার আগে সংবিধানে মাথা ছুঁইয়ে মোদি বলেন, ‘সংবিধানকে সাক্ষী রেখে আমরা প্রতিজ্ঞা করছি- সব বর্গের মানুষকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। ধর্ম-জাতির ভিত্তিতে কোনো ভেদাভেদ হবে না।এ ছাড়া সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কথাবার্তা এড়িয়ে চলতেও দলীয় সাংসদদের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷

এদিকে ভারতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন জমিয়াতে উলামায়ে-হিন্দ (জেইউএইচ) বিপুল জয়ের জন্য মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে সব নাগরিককে একদৃষ্টিতে দেখার জন্য নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন জমিয়তে উলামা হিন্দের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী ধর্মীয় উগ্রতার বিষয়ে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়ে মোদিকে বলেন, আমরা আশা করছি আপনি ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন। যাতে মুসলমানরা ভারতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ধর্মীয় উগ্রতার কারণে মুসলমানরা ভীতসন্ত্রস্ত না হয়।

পিবিএ/এইচটি

আরও পড়ুন...