ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের একটি পার্বত্য গ্রামে ব্যাপক এক ভূমিধসে ১৬ জন নিহত হয়েছেন এবং এখনও নিখোঁজ অবস্থায় আছেন অন্তত ১৪০ জন মানুষ। এছাড়া গত কয়েক ঘণ্টার তৎপরতায় ঘটনাস্থল থেকে ১০৩ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা।
রাজধানী মুম্বাই প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট সেই পার্বত্য পল্লীটির নাম ইরশালওয়াদি। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এই ভূমিধস ঘটে। ঘটনার পর অল্প সময়ের মধ্যেই মধ্যেই ভারতের কেন্দ্রীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এনডিআরএফ) সেখানে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। পরে পুলিশ, চিকিৎসক ও স্থানীয় লোকজনও তৎপরতায় যোগ দেন।
গ্রামটি পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় খাড়া রাস্তা বেয়ে ভারী যন্ত্রপাতি আনা সম্ভব হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই হালকা যন্ত্রপাতি এবং কোদাল, বেলচা জাতীয় সাধারণ উপকরণ দিয়ে চালাতে হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাপক বর্ষণ ও কুয়াশা।
ফলে তৎপরতায় গতি আনা যাচ্ছে না। ভারতের বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ব্যাপক বৃষ্টির মধ্যে মাটি খোঁড়ার হালকা যন্ত্রপাতি নিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছেন হলুদ রঙের রেইনকোট পরা উদ্ধারকর্মীরা।
এনডিআরএফের মহাপরিচালক অতুল কারওয়াল রয়টার্সকে বলেন, ‘ব্যাপক বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এই আবহাওয়ায় তৎপরতা চালানো খুবই কঠিন। এ পর্যন্ত ১৬ জনকে মৃত এবং ১০৩ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি আমরা। তবে আমাদের ধারণা এখনও অন্তত ১৪০ জন মাটির নিচে চাপা পড়ে আছেন।’
মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীশ রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ছোট সেই গ্রামটিতে মাত্র ৫০টি ঘর ছিল। সেগুলোর অধিকাংশই ধ্বংস হয়েছে। ভূধসের সময় গ্রামটির প্রায় ৮০ জন মানুষ বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বেঁচে যাওয়া একজন গ্রামবাসী রয়টার্সকে বলেন, ‘এরকম ঘটনা আগে কখনোই হয়নি। কখনোই ভাবিনি, পাহাড় ধ্বসে যাবে, যে কারণে লোকজন এখানে থাকতো।’
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ সিন্ধে ভূমিধসে মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ভারতে বর্ষাকাল আরম্ভ হয় জুন থেকে। চলতি বছরের বর্ষার শুরু থেকেই দেশটির উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অতিমাত্রায় বর্ষণ হচ্ছে, অন্যদিকে পূর্ব ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে কম। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে অতিবর্ষণ-বন্যা-ভূমিধসে দেশটির উত্তর ও পশ্চিামঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬ শতাধিক মানুষের।