পিবিএ ডেস্ক: ভুটান ভ্রমন করবেন কেন? পৃথিবীর এত এত দেশ থাকতে আপনাকে ভুটান ভ্রমন করতে হবে কেন? এই জিজ্ঞাসা সবার আগেই করা উচিৎ। তার কারন, যে দেশে ভ্রমন করবেন সে দেশ সম্পর্কে আপনার জানা থাকা জরুরী। তাই ভুটান সম্পর্কে কিছু ধারনা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা মনে করছি। ভ্রমন প্রিয় মানুষের প্রথম এবং প্রধান উদ্যেশ্য থাকে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য উপভোগ করা। যতটুকু সম্ভব কাছে থেকে উপভোগ করা। এছাড়াও থাকে সেই ভৌগলিক এলাকার কালচার, আচার আচরন চলাফেরা ইত্যাদি। এসব দিক বিবেচনা করলে ভুটান ভ্রমন একজন পর্যটকের ভ্রমন তালিকায় উপরের দিকে থাকে। ইউরোপ আমেরিকার অনেক মানুষই এই দেশটিকে ভ্রমন করে তৃপ্ত হয়েছেন। তাহলে আপনি কেন নন? আসুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে ভুটান ভ্রমন করবেন?
বাংলাদেশ থেকে কিভাবে ভুটান ভ্রমন করবেন? কিভাবে ভুটান যাবেন?
ভৌগলিক দিক থেকে ভুটান এবং বাংলাদেশের মধ্যে দূরত্ব অনেক কম। এ কারনে সড়ক পথে ভ্রমন করা যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ট্রানজিট ভিসা নিতে হয়। ভারতের ট্রানজিট ভিসা নেওয়াটা একেবারে সহজ ব্যাপার নয়। অনেক ঝামেলার। তাছাড়াও সড়ক পথে বাংলাদেশের ঢাকা থেকে ভুটান যেতে প্রায় ২৪ঘন্টার মত সময় লাগে। কারন বাংলাদেশের বুড়িমারী স্থল বন্দর খোলে সকাল নয়টার দিকে। আপনি ঢাকা থেকে যে বাসে চড়েই যান না কেন, তা যাত্রা শুরু করে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে। ট্রাফিক জ্যাম না থাকলে গিয়ে পৌঁছায় ভোর ছয়টার দিকে। এবার বসে থাকতে হয় স্থল বন্দর খোলার জন্যে। খোলার পরেও আরাম নেই, সেখানে অনেক লম্বা লাইন। এখান থেকে পার পেতে পেতে প্রায় দুপুর একটা। দুই দেশের স্থল বন্দরে ডিপারচার/এন্ট্রি নিতে নিতে দিনের অর্ধেক যাবে খতম হয়ে।
এ কারনে আপনি এসব ঝামেলা এড়াতে বিমানে যেতে পারেন। ভুটান বিমানে যেতে চাইলে আগে থেকে ভিসা প্রসেসিং এর দরকার নেই। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বিমান বন্দরেই এন্ট্রি পারমিশন দেয়া হয়। তবে ভুটানের বিমান বন্দর খুবই ছোট এবং সেটা পারো নগরীতে অবস্থিত। এখানে খুবই কম ফ্লাইট থাকে। Drukair(Royal Bhutan Airlines) ঢাকা থেকে পারো পর্যন্ত কিংবা কোলকাতা থেকে পারো ফ্লাইট আছে।
তারপরেও কথা থেকে যায়। যাদের ভ্রমন বরাদ্ধ খুবই কম তাদের বেলায় বিমান নির্বাচন করা যায় না। বাস বা রেল পথ হচ্ছে সবচেয়ে সস্তা উপায়।
বাসে যাবেন?
যেকোন বাস মানিক, হানিফ অথবা শ্যামলী পরিবহন ছাড়াও এস আর পরিবহন ব্যবহার করে বুড়িমারি চলে যান। বাসের লোকেরাই মাত্র ৯০০টাকার বিনিময়ে আপনাকে ঐ পাড়ে যেতে সাহায্য করবে। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ সরকারের ভ্যাট যা এখান থেকেই বাসের লোকেরা জমা দিয়ে দেয়। সকাল ৯টা থেকে আপনার পালা আসতে যত সময় লাগে ততটুকুই হচ্ছে দেরি।
ঐ পাড়ে মানে ভারতে ঢুকার পর আপনার এন্ট্রি করানো হবে। সেখানেও একই বাসের কাউন্টার পার্ট বা টীম আপনাকে গ্রহন করে কাজটা বাংলাদেশী টাকা ১০০এ করে দিবে। এবার আপনার ভুটান যাবার পালা।
সরাসরি ভুটান কোন বাস যায় না। তবে আপনি চ্যাংরাবান্ধা বাস স্টপে গিয়ে লোকাল বাসে চড়ে চলে যেতে পারেন ময়নাগুঁড়ি বাইপাস এ। সেখানে রাস্তার পাশে দাঁড়ালেই কিছুক্ষন পরে পাবেন শিলিগুঁড়ি জয়গাঁ বাস। এই বাস অনেক স্টেশনে থামলেও আপনাকে ঠিকই নিয়ে যাবে জয়গাঁ পর্যন্ত। ভাড়া সাধারনত ৮০/৭০ রুপি।
জয়গাঁ এলে আপনাকে ইন্ডিয়া স্থল বন্দর খুঁজে নিতে হবে। ভ্যান বা রিক্সা নিয়ে খুঁজতে পারেন। সেখানে আবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ভুটান গেইট খোলা থাকে একই সময় পর্যন্ত। জয়গাঁ এ কাজ হয়ে গেলে চলে যান ভুটান গেইট। খুবই পরিচিত। অনেকেই দেখিয়ে দেয়। ভুটান গেইট এলে এখানে এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিয়ে একটি ফর্ম পূরন করে পাসপোর্টের এক কপি ফটোকপি জমা দিলে এন্ট্রি পারমিশন পাওয়া যাবে। এন্ট্রি সাধারনত আপনার অন্যান্য দেশের ভিসার মেয়াদের উপর নির্ভর করে দেয়া হয়। এখানে কোন বাড়তি খরচ নেই।
এতক্ষন ধরে যদি আপনি উল্যেখিত পথ আর যানবাহন ধরে এগিয়ে আসেন তবে ধরে নিচ্ছি তখন ভুটান সময় অনুসারে সন্ধ্যা ৬টা বা সাড়ে ৬টা বাজে। বাংলাদেশের সময়ও এখন তাই। এই সময়ে আপনি থিম্পু কিংবা পারো এর কোন দিকেই যেতে পারেন না। কারন সেখানে যেতে প্রায় ৫ঘন্টা লাগে। রাত ১০টার ভুটানে হোটেল খুঁজে পাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ন। আমার পরামর্শ হচ্ছে এখানে মানে পুয়েন্টসলিং এ থেকে যান। এখানে ৭৫০ রুপি থেকে শুরু করে অনেক বেশি দামের হোটেল আছে। যার যার ইচ্ছামতো হোটেল বুকিং নিয়ে নিন। রাত ৮টার আগে হোটেল না পেলে আপনার কপালে দুঃখ আছে হয়ত।
কিছু তথ্য মনে রাখুনঃ
সময়ঃ আগেও বলেছি, বাংলাদেশের স্থানীয় সময় আর ভুটানের স্থানীয় সময় একই। তাই সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। এখানে রাত ৮টায় সব দোকান পাট অবাক করা বিস্ময়ে বন্ধ করে দেয়।
খাবারঃ খাবার সব সময় সাথে রাখার দরকার নেই বলে মনে হয়। কারন এখানের খাবার তেমন দামী নয়। অন্তঃত আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের রেস্তোঁরার চেয়ে সস্তা। কিন্তু এই খাবার সন্ধ্যা হবার সাথে সাথে আপনাকে সাথে রাখতে হবে। কারন অনেক রাতে বা ১১টার দিকে যদি ক্ষিদে পায় আপনি খাবার পাবেন না।
অর্থনীতিঃ টাকা পয়সা বা ডলার যদি সাথে নিয়ে যান তবে তা চ্যাংড়াবান্ধাতেই ইন্ডিয়ান রুপি করে নিয়ে যান। ভুটানে ইন্ডিয়ান রুপি চলে কোন বাধা ছাড়াই। তাই নিয়ে নিন যা লাগে। ভুটানে কোথাও আপনি ডলার কনভার্ট করার সুযোগ পাবেন না। যদিও পান তারা অনেক কম দামে কিনে নিবে।
যোগাযোগঃ ভুটানে একটি নিজস্ব টেলিকম(বি মোবাইল) আছে যার সিম কিনতে হলে অনেক দূরে অফিসে যেতে হয়। কিন্তু এটি না নিয়ে আপনি অন্য যে কোন টেলিকম লাইন নিতে পারেন। বি মোবাইল এর নেটওয়ার্ক ভাল নয়। তবে খরচ অনেক কম কিন্তু বি মোবাইলে। ইন্টারনেট ১জিবি ৯৯রুপি।
ইন্টারনাল যানবাহনঃ ভুটানের বাসে চড়ে ভ্রমন খুব ঝামেলার। ট্যাক্সি নিয়ে নিন যেখানে খুশি যেতে পারবেন। খরচ ইন্ডিয়া থেকে কিছু কম।
কোথায় কোথায় যাবেনঃ ইমিগ্রেশন এ যখন অনুমতির জন্য আবেদন করেছিলেন তখন আপনার কাছে ভুটান ভ্রমনের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার নাম চাওয়া হয়েছিলো। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষেই থিম্পু, পারো এর নাম উল্যেখ করেন। এখান থেকে মূলত এই দুই জায়গায় ভ্রমনের অনুমতি দেয়া হয়। কেউ যদি পুনাখা যেতে চান থিম্পু থেকে অনুমতি নিতে পারেন। একই রকম ফর্ম পূরন করে পুনাখা যেতে হয়। ছুটির দিনে থিম্পু ইমিগ্রেশন অফিস বন্ধ থাকে।
কিভাবে ভুটান ভ্রমন করবেন এর প্রথম এবং প্রাইমারি তথ্য সমূহ দেয়ার চেষ্টা করেছি। এর পরে আবার অন্য সময়ে আরো বিস্তারিত কিছু তথ্য দেয়া হবে যাতে শুধু মাত্র বিভিন্ন স্থানের বর্ননা পাওয়া যাবে। এছাড়াও আপনাদের মধ্যে কেউ যদি কিছু জানতে চান তবে কমেন্টে লিখে জানাতে পারেন।