মো. জাকির হোসেন, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: গ্রীস্মকালিন ফসল ভুট্টা। পুষ্টিতে ভরপুর এ ফসল চাষাবাদে মানিকছড়ি কৃষকরা আগে ভোগান্তির শিকার হলেও এখন তাদের সামনে সুদিন ও সু-সময় হাত ছানি দিচ্ছে। উপজেলার প্রায় অর্ধশত ডেইরি খামারে পশুখাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় নিশ্চিতকরণে গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টা গাছ,পাতা,কান্ড ও দানা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে পুষ্টিকর সাইলেজ। এতে কৃষকের ভাগ্যে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। জনপদে বাড়বে ভুট্টা চাষ।
উপজেলা কৃষি ও প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৃষি সমৃদ্ধ উপজেলা মানিকছড়িতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির জমিতে কৃষকরা শাক সবজির পাশাপাশি ভুট্টা চাষে আগ্রহ থাকলে ভুট্টার বাজারকরণের সুযোগ-সুবিধা না থাকায় দিন দিন ভুট্টা চাষ হ্রাস পাচ্ছিল। সম্প্রতিকালে সরকার কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদেরকে পুষ্টিকর এ ফসল চাষে আগ্রহী করতে বীজ-সারসহ প্রণোদনা দিয়ে ভুট্টাচাষ জনপ্রিয় করার উদ্যোগ গ্রহন করলেও ভুট্টার দানা বাজারজাতকরণে কোন নিদের্শনা না থাকায় উৎপাদিত ফসল(দানা) নিয়ে কৃষকদের দুগর্তির সময় কেউ পাশে আসেনি। প্রতি বছর ভুট্টা চাষে অনাগ্রহ ও লোকসান নিয়ে বাড়ি ফিরতে হতো কৃষকদের।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২২হেক্টর জমিতে শতাধিক প্রান্তিক কৃষক ভুট্টাচাষ করেছে। হেক্টর প্রতি শুধু ভুট্টা(দানা) উৎপাদন হচ্ছে ১২ মে.টন। তাহলে ২২ হেক্টরে ভুট্টার উৎপাদন ২শ ৬৪ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে কৃষকের খরচ গড়ে ৮০-৯০ হাজার টাকা। বিক্রি(দানা) সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা। এতে কৃষকের খরচ হিসেবে লাভ তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু কালের আর্বতে এখন আর কৃষকদের সেই দুঃসময় নেই। চাষে এবং ফসল বাজারজাতকরণে লেগেছে ডিজিটালের ছোঁয়া।
উপজেলায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডেইরী ফার্ম। বর্তমানে উপজেলায় ছোট-বড় ডেইরি খামার রয়েছে ৩৯টি। এসব ডেইরি খামারে পশুখাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় নিশ্চিতকরণে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ভুট্টা গাছ,পাতা,কান্ড ও দানা থেকে উৎপাদিত পুষ্টিকর সাইলেজ। সাইলেজ তৈরিতে ভুট্টা গাছের সবকিছু ব্যবহারযোগ্য। ফলে কৃষক দারুণ লাভবান। প্রতি গাছ কেটে কেজি ৩ টাকা হারে বিক্রি করার সুযোগ থাকে। অন্যদিকে সাইলেজ হিসেবে বিক্রি না করলে শুধু ভুট্টার দানা বিক্রি হয় প্রতিটি ৮-১০টাকা হারে।
ভুট্টা চাষে আধুনিকতার ছোঁয়া বিষয়ক জানতে চাইলে উপজেলার সবচেয়ে বড় ‘এ.কে.এগ্রো ডেইরী’ খামার মালিক, উপজেলা ডেইরি খামার মালিক সমিতি’র সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরি খামার মালিক সমিতি’র সভাপতি হাজী মো. ইকবাল হোসেন জানান, আমি নিজে এবার ২২হেক্টর জমিতে (মানিকছড়ি-১৩,ফটিকছড়ি-৯) ভুট্টা চাষ করেছি। উৎপাদিত ভুট্টার গাছ, পাতা, কান্ড ও দানা থেকে গো-খাদ্যের উপকরণ হিসেবে সাইলেজ তৈরি করছি। এই ২২ হেক্টর জমির ভুট্টা থেকে সাইলেজ তৈরি হচ্ছে ৪শ ৪০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ৩০লক্ষ টাকা। উৎপাদনে মোট ব্যয় হয়েছে ২২ লক্ষ টাকা। এতে দেখা যায়, সাইলেজ তৈরিতে ভুট্টা চাষী লাভবান হচ্ছে।
কারণ সাইলেজ তৈরিতে ভুট্টা গাছের পাতা,কান্ড ও দানা সবই ব্যবহার হয়। গাছ লাগানোর ৭০-৮০ দিনে মধ্যে গাছে ফল আসলে সেই ফল পুষ্টি হওয়ার আগেই পুরো ভুট্টা গাছটি কেটে নিতে হবে। এর পর আধুনিক মেশিনের মাধ্যেমে সাইলেজ তৈরি করা হয়। মোট কথা সাইলেজ তৈরিতে ভুট্টার কিছুই ফেল না নয়। সরকার যদি ভুট্টা চাষে ভতুর্কিতে আধুনিক মেশিন কিনতে সহায়তা দেয় তাহলে পাহাড়ে ভুট্টা চাষে বিপ্লব ঘটবে। শুধু আমার খামারে বছরে চাহিদা ৭শ মেট্রিক টন। উপজেলার সকল খামারে এ প্রযুক্তি(সাইলেজ) ব্যবহার করলে ভুট্টা সমতল থেকে আমদানির প্রয়োজন দেখা দিবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ভুট্টা চাষে সরকার কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে বীজ,সারসহ সেবা দিচ্ছে। এ বছর উপজেলায় ব্যক্তিমালিকানাধীন ২২হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এখন যেহেতু ডেইরি খামারগুলোতে ভুট্টার যাবতীয় অংশ ব্যবহার করে সাইলেজ তৈরি শুরু হয়েছে। তাহলে ভুট্টা নিয়ে অন্তত কৃুষকদের আর দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না। বলা চলে ভুট্টা চাষীদের ভাগ্যে সুদিন এসে গেছে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্ত ডা.সুচয়ণ চৌধুরী বলেন, পশুখাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় নিশ্চিতকরণে গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টা ফসল থেকে যেভাবে সাইলেজ তৈরি হচ্ছে। সেটি খুবই পুষ্টিকর। এতে করে একদিকে ভুট্টা চাষ বাড়বে। অন্যদিকে গো-খাদ্যের সংকট দূর হবে। সাইলেজ তৈরি সহজ করতে আধুনিক মেশিন ক্রয়ে ভর্তুকি প্রয়োজন। বিষয়টিতে সরকার নজর দিলে কৃষক এবং খামারীরা উপকৃত হবে।
পিবিএ/বিএইচ