পিবিএ,ঢাকা: গতকাল রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে একজন ভুয়া সাংবাদিক ও আর্থিক গোয়েন্দা পরিচয়ে মাদক বহনকালে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ৪ জন মাদক ব্যবাসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. মুকুল হোসেন ওরফে মকবুল আহমেদ (৪৪), মো. আব্দুল শাহীন ওরফে নোমান হোসেন (৩৩), মো. ফয়সাল (২৭) ও মো. আল-আমিন হোসেন (২৪)।
মঙ্গলবার ১৩ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১২ টায় রাজধানীর টিকাটুলী র্যাব-৩ এর সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার রাতে বংশাল এলাকায় অভিযান চালিঢে চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়। তারা প্রাইভেটকারের পিছনের ডালা হতে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় তিনটি ব্যাগে করে গাঁজাগুলো বহন করছিলেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছেন, এই মাদক ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা মুকুল নিজেকে কখনো নারায়ণগঞ্জ ভিত্তিক লোকাল পত্রিকা ‘দৈনিক মাতৃভূমির খবরের সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে চতুরতার মাধ্যমে কুমিল্লাসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাইভেটকারে করে গাঁজার চালান বহন করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ক্রয়-বিক্রয় করতেন।
মুকুলের প্রধান সহযোগী ফয়সাল বাংলাদেশ ব্যাংকেরর একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। ছুটির দিনে বা অবসর সময়ে সুযোগ বুঝে তিনি ওই গাড়ি ব্যবহার করে চক্রটির সাথে মিলে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের কাজ করে থাকেন। গাড়ির মালিকের ব্যবহৃত আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের স্টিকার ব্যবহার করে তিনি নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আনা-নেয়া করে থাকে।
চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মাদক পরিবহনের সময় পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টের তল্লাশী থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিতো, যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের মাদক পরিবহনের গাড়িটি তল্লাশী না করে।
মুকুল গত ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন পরিবহনের চালক হিসেবে কাজ করতেন। অবৈধ পথে সহজেই অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় ২০১৬ সাল থেকে তিনি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হন। বিভিন্ন পরিবহনে চাকুরী নেয়া স্বত্তেও মাদকের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে বারবারই চাকুরীচ্যুত হন। ২০২২ সালের শুরুর দিকে তিনি নতুন পথ খুজতে থাকেন। চলতি বছরের জুন মাস থেকে নারায়ণগঞ্জ ভিত্তিক লোকাল পত্রিকা দৈনিক মাতৃভূমির খবরের ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করেন।
পাশাপাশি সাংবাদিকতার লোগো ব্যবহার করে খুব সহজেই মাদকদ্রব্য চোরাচালানের কাজ চালাতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে এসকল অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে গত ২ মাস আগে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়। চাকুরীচ্যুত হওয়ার সময় লুকিয়ে দৈনিক মাতৃভূমির খবর পত্রিকার লগো সম্বলিত একটি মাউথস্পীকার নিয়ে আসেন, যা ব্যবহার করে বর্তমানে মাদকদ্রব্য বহনকারী গাড়ি চালানোর সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশীর মুখে পড়লে সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে সহজেই পার পাওয়ার চেষ্টা করেন।
এছাড়াও ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়পত্র তৈরি করে নারায়ণগঞ্জসহ কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৌশলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজা এনে তার তিন সহযোগীসহ মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করে। এভাবে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে আসছে। তার নামে ২০০৮ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় জনৈক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানোর দায়ে হত্যা মামলাসহ একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে এপর্যন্ত একাধিক মামলায় তিনি বিভিন্ন মেয়াদে হাজতবাস করেন।