ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বান্দরবানে ফসলি জমির মাটি কেটে উজাড়

 

lama pba

পিবিএ,বান্দরবান: ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একটি বহিরাগত সিন্ডিকেট বান্দরবনের লামা উপজেলার ফসলি জমির উপরিভাগ কেটে উজাড় করছে প্রতিনিয়ত। ফলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন ও পরিবেশ বৈচিত্র্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব মাটি ভর্তি ভারি ট্রাক, ড্রাম, ট্রাক ও ট্রলি চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে বলে জানান স্থানীয়রা

উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ফকিরাখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় এক্সকাভেটর দিয়ে গত এক মাস ধরে কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বরা অংশ কেটে ট্রাক-ট্রলি করে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাটি কাটার গভীরতার পরিমাণ ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় যে কোনো ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। মাটির এই অংশেই যে কোনো ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসলটি প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করে। এই অংশটি একবার কেটে নিলে সে জমির আর মৃত্তিকা প্রাণ থাকে না। এমনকি ওই জমিতে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে কোনো ফসল বেড়ে উঠবে না। এতে জমিটি পরিত্যক্তই হয়ে যায়।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাকের হোসেন বলেন, অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটার কারণে ইতিমধ্যে প্রায় কয়েকশত একর জমি আবাদের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমি মাটি কাটার সাথে জড়িত দীল মোহাম্মদ, আব্দু শুক্কুর সহ কয়েকজনকে ডেকে মাটি কাটতে নিষেধ করেছি। দুই একদিন বন্ধ রেখে আবার কাটা শুরু করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক জমির মাটি কাটতে নিষেধ করেন। তারপরেও কিছুতেই থামছে না মাটি ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা। অন্যদিকে চলাচলে নিষেধ থাকলেও মাটি ভর্তি ভারি ট্রাক, ড্রাম, ট্রাক ও ট্রলি চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বিধায় ওই এলাকার রাস্তা দিয়ে এখন আর চলাচল করা যায়না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সানজিদা বিনতে সালাম জানান, মাটির জৈব ও পুষ্টি উপাদান উপরিভাগের ৩ থেকে ৫ ইঞ্চির মধ্যে বিরাজমান। ফলে এই মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া যে কী ভয়াবহ ক্ষতি তা কৃষকরা জানেন না। এ জন্য কোনো কারণ ছাড়াই বা সামান্য কারণেও তারা মাটির উপরিভাগ বিক্রি করে দিচ্ছেন জমির মালিকরা। অথচ এই ‘টপ সয়েল’ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে ১৫ থেকে ২০ বছর বা তারও বেশি সময় লাগে। তাই কৃষি জমি রক্ষায় কৃষকদের এই মারাত্মক প্রবণতা থেকে সরিয়ে আনা দরকার। সাধারণ কৃষকদের অসচেতনতার সুযোগে এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষি সম্পদের সর্বনাশ করছে। এ ব্যাপারে মাঠ পরিদর্শন করে শিগগির কৃষকদের বুঝানো হবে।

জানতে চাইলে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে জমির উপরি ভাগের অংশ কেটে মাটি পাচারের ঘটনায় মৌখিকভাবে নিষেধ করার পাশাপাশি জেলা প্রশাসক ও সেনাবাহিনীকে অবগত করা হয়েছে।

পিবিএ/এনকে/ হক

 

 

আরও পড়ুন...