পিবিএ, কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চিকিৎসা নিতে এসে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে জুয়েল মিয়া (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত জুয়েল মিয়া ভৈরব পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকার আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছর দুয়েক আগে তার একটি হাত দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ভেঙ্গে যায়। পরে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যেমে তার ভাঙ্গা হাতে রড বসানো হয়। ভেঙ্গে যাওয়া হাতে লাগানো রড খুলার জন্য ভৈরবের ট্রমা জেনারেল (প্রাইভেট) হাসপাতালে আসেন জুয়েল। পরে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে জুয়েলের মৃত্যু হয় বলে স্থানীয়রা জানান। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনেরা খবর পেয়ে হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় জড়িত ডা. কামরুজ্জামান আজাদ নামে এক চিকিৎসককে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রমা জেনারেল (প্রাইভেট) হাসপাতালটিতে নামমাত্র চিকিৎসা হয়। চিকিৎসায় ডাক্তারদের অবহেলা নিত্যদিনের ঘটনা। হাসাপাতালে কর্মরত গৌরাঙ্গ নামে এক ওয়ার্ড বয় নিজেই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের ভূমিকা পালন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। কর্তব্যরত ডাক্তারদের নির্দেশমতো গৌরাঙ্গ কাজ করেন। বৃহস্পতিবার জুয়েলের চিকিৎসায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
জুয়েলকে অপারেশনের বিষয়ে জন্য ডা. ইমরান এনেসথেসিয়া দিতে বারণ করেন। জুয়েলকে যে এনেসথেসিয়া প্রয়োগ করা কথা তা দিতে ডা. ইমরান অপরাগতা জানান। কারণ ওই এনেসথেসিয়া প্রয়োগের জন্য তিনি আনফিট ছিলেন বলে ডা. ইমরান জানান। কিন্তু ওয়ার্ড বয় গৌরাঙ্গের চাপাচাপির মাধ্যমে তাকে এনেসথেসিয়া দিতে বাধ্য করা হয়। ফলে জুয়েল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত দু’বছরেরও বেশি সময় আগে দুর্ঘটনায় জুয়েলের এক হাতের হাড় ভেঙে যায়। ফলে অপারেশনের সময় তার হাতের ভেতরে রড ঢুকানো হয়। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রড খুলতে তাকে শহরের ট্রমা জেনারেল (প্রাইভেট) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে হাসপাতালের ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) নিয়ে যাওয়া হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও জুয়েলের জ্ঞান ফেরেনি। এতে স্বজনদের সন্দেহ হলে ওটিতে গিয়ে জুয়েলকে মৃত অবস্থায় তারা দেখতে পান।
পরে নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোকজন হাসপাতালে ভিড় করে। এক পর্যায়ে উত্তেজিত স্বজনরা হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এসময় হাসপাতালের ভেতরে অপারেশন করা চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান আজাদকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত সাদমীন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুজ্জামান পরিদর্শনে যান। একই সাথে পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ডা. কামরুজ্জামান আজাদকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে জুয়েলের এই মৃত্যুকে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। তাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেনো দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেন। যাতে করে আর কাউকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে না হয়।
ভৈরব থানার ওসি মো. মোখলেছুর রহমান পিবিএকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি ডা. কামরুজ্জামান আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
পিবিএ/তোফায়েল/হ
মোবাইলঃ ০১৭১২-৯৮৪৮৫৪, ০১৬৭৫-৩৬৪১৯০