
বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। তারপরও কেউ কেউ অন্য পণ্য ক্রয়ের শর্তে ভোজ্যতেল বাজারজাত করছে। উৎপাদক বা অন্যান্য কোনো পর্যায়ে শর্তযুক্ত বিক্রয় বা বাজারজাত করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সরকার।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে আসন্ন পবিত্র রমজানে ভোজ্যতেলের বাজারে সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে এক বিশেষ সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় কমিশনের চেয়ারম্যান (সচিব) ড. মইনুল খান সভাপতিত্ব করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) আবদুর রহিম খান আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে অংশ নেন দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
সভায় বর্তমানে বাজারে বোতলজাত করা সয়াবিন তেলের ঘাটতি রয়েছি কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়। এতে উৎপাদনকারীরা অংশ নেয়।
সভার সিদ্ধান্তগুলো হলো:–
১. স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো ঘাটতি নেই। যা হয়েছে তা কৃত্রিম এবং প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থেকে সৃষ্ট। গত দুই মাসে ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫ ভোজ্যতেলের আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে এলসিও বেড়েছে অনুরূপ হারে। অন্যদিকে বিভিন্ন উপাত্ত থেকে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য স্থিতিশীল।
সার্বিকভাবে বর্তমানের আন্তর্জাতিক বাজার ও আমদানি পরিস্থিতি স্থানীয় বাজারেও এর সরবরাহ ও দামের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দেয়। তাই ভোক্তা সাধারণের স্বার্থরক্ষায় উৎপাদন ও বিপণনের সব পর্যায়ে বাজার মনিটরিং করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
২. প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, কেউ কেউ অন্য পণ্য ক্রয়ের শর্তে ভোজ্যতেল বাজারজাত করে থাকে। উৎপাদক বা অন্য কোনো পর্যায়ে এ ধরনের শর্তযুক্ত বিক্রয় বা বাজারজাত করা প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ধরনের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৩. ভোজ্যতেলের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য হচ্ছে কি না তা সীমান্ত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও সংস্থাগুলো খতিয়ে দেখবে এবং তা প্রতিরোধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৪. ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্ব স্ব নিয়োগকৃত পরিবেশকদের নিকট সরবরাহকৃত ভোজ্যতেল ভোক্তাদের নিকট নির্ধারিত মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় তদারকি করবেন।
সভায় সিটি গ্রুপের প্রতিনিধি (উপদেষ্টা) অমিতাব চক্রবর্তী জানান, সিটি গ্রুপ জানুয়ারি ২০২৫ এ তারা মোট তেল সরবরাহ করেছে প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ টন। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ হাজার টন বোতলজাতকৃত। অন্যদিকে ২০২৪ এর একই মাসে বোতলে তারা সরবরাহ করে ১৪ হাজার ২৬২ টন।
মেঘনা গ্রুপের প্রতিনিধি জিএম তসলিম শাহরিয়ার জানান, চলতি জানুয়ারিতে মোট ৪৭ হাজার ৬৬৮ হাজার টন সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার টন বোতলজাত। পূর্ববর্তী বছরে মোট সরবরাহ ছিল ২৫ হাজার টনের মধ্যে ১২ হাজার টন বোতলজাত।
টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম সভাকে জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট ১১ হাজার ৮১০ টন বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করা হয়েছে, যা গতবছরের একই সময়ে ছিল ৯ হাজার ৫০০ টন। অন্য উৎপাদনকারীরা জানান, তারাও পূর্বের মাসগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে সরবরাহ বৃদ্ধি করেছেন।
বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান উপলক্ষ্যে পাইপলাইনে বেশ কিছু ভোজ্যতেল ভর্তি জাহাজ চট্টগ্রামের বন্দরে নোঙর করার অপেক্ষায় আছে। এগুলো অচিরেই স্থানীয় সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হবে। পাইপলাইনে থাকা ভোজ্যতেলের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টন।
সার্বিকভাবে ভোজ্যতেলের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে বলে জানানো হয়। মাঠ পর্যায়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুত করে থাকতে পারে; আবার কেউ কেউ অধিক লাভের আশায় বোতল কেটে খোলা তেলে পরিণত করে তা বিক্রয় করতে পারে বলে উল্লেখ করেন ব্যবসায়ীরা।