ভ্যাকসিন না নিয়ে আগামী ১ আগস্ট থেকে আর সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারবেন না কেউ। এমনকি দেশটির নাগরিক হলেও ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছে ওই দেশের সরকার। ভ্যাকসিন নিয়ে গেলেই কেবল সৌদি আরবের দরজা খুলবে। সে ক্ষেত্রে কোনো কোয়ারেন্টিনেরও প্রয়োজন হবে না। বিষয়টি জানিয়ে সম্প্রতি সৌদি আরবের জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের শ্রম সচিব মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেক, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও মডার্নার ভ্যাকসিন দুই ডোজ সম্পন্ন করে সৌদি আরবে প্রবেশ করলে আর কোয়ারেন্টিন লাগবে না বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের জেনারেল অথরিটি ফর সিভিল অ্যাভিয়েশন (জিএসিএ)। কেবল জনসনের এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করা যাবে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা ভ্যাকসিন নিয়ে ‘ইমিউন’ ঘোষিত হয়েছেন, তারা এ নির্দেশনার বাইরে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন আমাদের সময়কে বলেন, ‘টিকা আমদানির দায়িত্ব আমাদের না। আমরা এই পরামর্শ দেওয়ার আগেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, জনসন যাতে দেশে আসে। এ টিকা আমদানিরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।’ তিনি এও বলেন, ‘সরকারের সব কিছু প্রবাসীকেন্দ্রিক হলে তো চলবে না। দেশের সব মানুষকে নিয়েই ভাবতে হয়। বর্তমানে আমরা
যাদের মনে করছি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাওয়া দরকার তাদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি সরকারের নিয়ম আমাদের মানতে হবে। তারা নিয়ম করেছে, নতুন কর্মীরা জনসনের একটি টিকা দিয়ে যেতে পারবেন না। যদি পুরনো কর্মী হন এবং ইকামা থাকে সে ক্ষেত্রে দেশে একটি টিকা দেওয়ার ১৪ দিন পর তারা যেতে পারবেন। সেই সঙ্গে যাওয়ার আগে সৌদি আরবের টিকা অ্যাপে নিবন্ধিত হতে হবে। আর এসব শর্ত না মানলে কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্তি নেই।’
সূত্র জানায়, সৌদি সরকার জননিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে গত মার্চ থেকে দেশটিতে বসবাসকারী সব অভিবাসী কর্মী ও নাগরিকদের বিনামূল্যে টিকা দিচ্ছে। সে হিসেবে বাংলাদেশি কর্মীরাও টিকা পাচ্ছেন বিনামূল্যে। বর্তমানে যেসব কর্মী সৌদি আরব যাচ্ছেন, তারা দেশটির বিমানবন্দর থেকে সরাসরি নির্ধারিত হোটেলে এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টিন করে যোগ দিচ্ছেন কর্মস্থলে। এতে প্রবাসী কর্মীদের ৬০-৭০ হাজার টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে চলে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
এদিকে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে যেসব প্রবাসী কর্মী হোটেল কোয়ারেন্টিনের অর্থ ব্যয় করে সৌদি আরব যাবেন, তাদের ওই দেশে করোনা টিকা দিতে হবে। এ বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সিজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান আমাদের সময়কে বলেন, ‘সৌদি আরব বিদেশগামী কর্মীদের ভ্যাকসিন বিষয় গত ১৪ জুন বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল জেদ্দা থেকে একটি নোটিশ করা হয়েছে। যেখানে সুস্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে- শুধু জনসনের টিকা এক ডোজ দিয়েই কোনো কর্মী সৌদি আরব যেতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে হোটেল কোয়ারেন্টিন লাগবে না। বাকি টিকা নিতে হবে দুই ডোজ করেই। তবে সৌদি ও কুয়েতগামী কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু জনসনের এক ডোজ টিকা দিলেই হোটেল কোয়ারেন্টিন খরচ ছাড়াই কর্মীরা সৌদি গমন করতে পারবেন, সে ক্ষেত্রে ওই টিকা কেনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা সরকারের কাছে জোর অনুরোধ জানাচ্ছি। ১ আগস্ট থেকে টিকা ছাড়া সৌদি গমন অনিশ্চিত। সুতরাং পাসপোর্ট, ভিসা, ইকামা যাদের রয়েছে তাদের অনস্পট রেজিস্ট্রেশন করে অতিদ্রুত টিকা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
সৌদি আরবে করোনায় সংক্রমণের হার সম্প্রতি বাড়তে শুরু করেছে। অবশ্য দেশটিতে আইসিইউতে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমতির দিকে। আর করোনায় আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে ৪ লাখ ৯১ হাজার ৬১২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাই দেশটিতে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও করোনা টিকার জন্য নিবন্ধন অব্যাহত রেখেছে।
আগস্টে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে ৫০ লাখ শিক্ষার্থীকে করোনা প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে রবিবার এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টের শেষের দিকে সৌদি আরবে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হচ্ছে। তার আগেই জুলাই মাসজুড়ে দেশটির ৫০ লাখ শিক্ষার্থীকে করোনা টিকার আওতায় আনা হবে।