পিবিএ, ঢাকা : মৃত্যুর দুয়ার থেকে নিরাপদেই দেশে ফিরেছেন টাইগাররা। কিন্তু তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে নিউজিল্যান্ডের সেই ভয়াবহ স্মৃতি। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ক্রিকেটাররা। জাতীয় দলের অন্যতম পেস বোলার আবু জায়েদ রাহীও সেই ঘটনার অন্যতম সাক্ষী।
পিবিত্রকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন সেই দুঃসময়ের কথা। পিবিত্র পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-
পিবিত্র: কেমন আছেন?
আবু জায়েদ রাহী: শরীর বেশি ভালো না, মনটাও খারাপ।
পিবিত্র: নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ওই মুহূর্তটা কেমন ছিল?
আবু জায়েদ রাহী: কী অবস্থা ছিল তাতো বুঝেতেই পারছেন।
পিবিত্র: ঘটনার সময় আপনারা নিউজিল্যান্ডের সেই মসজিদ থেকে কত দূরে ছিলেন?
আবু জায়েদ রাহী: আমরা মসজিদের পাশেই ছিলাম। বলতে পারেন মসজিদের উল্টো পাশে ছিলাম। জুমার নামাজ পড়ার জন্য আমরা সবাই মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হই। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাই প্রেস কনফারেন্সে থাকায় মসজিদে যেতে একটু দেরি হয়। তাছাড়া আমরাও দুপুরের খাবার খেয়ে বের হতে সময় লেগে যায়। আমরা মসজিদের কাছাকাছি যেতেই দেখি একজন মহিলা রাস্তায় পড়ে ছটফট করছে। ওটা দেখার পর থেকেই ভয় লাগে। কিছু দূর এগোতেই অজ্ঞাত একজন মহিলা আমাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেন।
পিবিত্র: লাইফের এই প্রথম কী জীবন-মুত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে এলেন?
আবু জায়েদ রাহী: না, আমার লাইফে এটা দ্বিতীয় ঘটনা। আগেরটা জানেন কি না জানি না। ২০১৩-১৪ মৌসুমে জাতীয় লিগের খেলা শেষে আমরা রংপুর থেকে পুরো দল ঢাকায় ফিরছিলাম। আসার পথে সেতু ভেঙে নিচে পড়ে যাই। সেখান থেকেও আল্লাহর রহমতে নিরাপদে আমরা ফিরতে পেরেছি। তবে নিউজিল্যান্ডের এই ঘটনা অনেক বেশি ভয়াবহ ছিল।
পিবিত্র: অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের উইকেটে খেলা এশিয়ার ক্রিকেটারদের শখ। ওখানকার বাউন্সি উইকেট আপনাদের মতো পেস বোলারদের জন্য আদর্শ…
আবু জায়েদ রাহী: সত্যিই তাই। নিউজিল্যান্ডে এমন ঘটনা ঘটবে আমরা কেউই আশা করিনি। নিউজিল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ একটি দেশ। সেখানে এমন ঘটনা ঘটবে কেউ আঁচ করতে পারিনি। অন্য দেশ হলে তাও মেনে নেয়া যেত!
পিবিত্র: ২০০৯ সালে পাকিস্তান সফরে থাকা শ্রীলংকান ক্রিকেট দলের ওপর টিম বাসে হামলা হয়। তারপর থেকে পাকিস্তান সফরে যেতে কোনো দলই সাহস পাচ্ছে না। এখন নিউজিল্যান্ডেও কি তাই হবে বলে আপনি মনে করেন?
আবু জায়েদ রাহী: আসলে বিদেশ সফরের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যদি আমাদের নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ দেয় তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
পিবিত্র: শনিবার প্রধমানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন থেকে বিদেশ সফরের আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
আবু জায়েদ রাহী: দেখেন সব দেশই বিদেশ সফরের আগে নিরাপত্তা টিম পাঠিয়ে যাচাই-বাছাই করে। আমাদেরও তাই করা উচিত। আমরাও অন্যদের মতো বড় দল। আমাদের বড় স্পন্সর আছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে ক্রিকেটাররা ভয়হীন ক্রিকেট খেলতে পারবে।
পিবিত্র: এই ঘটনার সম্মূখীন হওয়ার পর আপনাকে নিয়ে পরিবার কতোটা চিন্তিত ছিল?
আবু জায়েদ রাহী: আমি আসলে চাইনি এসব বিষয় বাসায় জানাতে। তাহলে আমার মা অনেক দুশ্চিন্তা করবে। এজন্য বড় ভাইকে বলেছি বাসার ইন্টারনেট লাইন এবং ডিশ লাইন যেন খুলে রাখা হয়। টিভিতে যেভাবে প্রচার করা হয়েছে, আমার মা দেখলে দুশ্চিন্তায় হয়ত হার্ট অ্যাটাক করত। এজন্য পরিবারকে এসব জানাতেই চাইনি। এমনকি আমাকে রিসিভ করার জন্য পরিবারের কাউকে বিমানবন্দরেও আসতে বলিনি।
পিবিত্র: এখন সব মিলিয়ে আপনার কী অবস্থা?
আবু জায়েদ রাহী: আলহামদুলিল্লাহ ভালো। পরিবারকে ভালোভাবেই সামলাতে পেরেছি। এখন আমার গ্রামের বাড়ি সিলেট আছি। সমস্যা হলো বাসা থেকে বের হলেই পরিচিতি অনেকেই সেই হামলার বিষয়ে জানতে চায়। কেউ আবার ফোন করে। তখন বিষয়টা মনে পড়লে ভয় বেড়ে যায়। তখন দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। কারণ আমরা তো চাই এসব কাহিনী ভুলে যেতে। কিন্তু আশপাশের মানুষজন ভুলতে দিচ্ছে না।
সময় দেয়ার জন্য আপনাকে পিবিত্র পক্ষ থেকে ধন্যবাদ
পিবিএ/এমএস