পিবিএ,গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২০৯-তম জন্ম তিথি উপলক্ষ্যে আগামী মঙ্গধবার (০২ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ স্নানোৎসব ও তিন দিনব্যাপী মহাবরুনীর মেলা। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম ও মৃত্যু তিথীতে আয়োজন করা হয় এ স্নানোৎবের। মতুয়া ভক্তরা পূণ্যের আশায় ঠাকুরবাড়ীর দু’টি দীঘিতে তাদের পূণ্যস্নান করবেন। স্নানোৎস চলাকালে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্নানোৎসব ও মেলা উদযাপন কমিটি। ঠাকুর বাড়ি এলাকায় উচ্চ পর্যবেক্ষন চৌকি ও সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি মতুয়া সংঘের ৩ শাতাধিক স্বেচ্ছাসেবক সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন।
গোপালগঞ্জ জেলাশহর থেকে প্রায় ২৭ কি.মি. উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ী। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টায় হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরী ও স্নানোৎসব কমিটির সভাপতি হিমাংশুপতি ঠাকুর স্নানোৎসবের শুভ উদ্ভোধন করবেন। সঙ্গে থাকবেন শচিপতি ঠাকুর, অমিতাভ ঠাকুর, সুব্রত ঠাকুর ও সুপতি ঠাকুর শিবুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। পরে ধর্মীয়রীতি অনুযায়ী ওড়াকান্দির হরি মন্দির ও গুরু চাঁদ মন্দিরে পূজা-অর্চনা শুরু করবেন পুরোহিতরা। বিরামহীনভাবে আগামী বুধবার সকাল ১১টা ৩৫মিনিট পর্যন্ত চলতে থাকবে পূন্যার্থীদের স্নান উৎসব। লাখ লাখ মতূয়াভক্ত ও হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের ভক্তরা এখানে স্নান করেন পাপ মোচনের জন্য।
২’শ ৯ বছর আগে ১২১৮ সালের ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীতে ব্রহ্মমুহূর্তে মহাবারুণীর দিনে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পূর্ণব্রহ্মা হরিচাঁদ ঠাকুর। পিতা যশোবন্ত ঠাকুরের পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। বাল্যনাম হরি হলেও ভক্তরা হরিচাঁদ নামেই তাকে ডাকতেন। ছোটবেলা থেকেই তার অলৌকিকত্ব ও লীলার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে পার্শবর্তী গ্রাম ওড়াকান্দি। ক্রমেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে শ্রীধাম ওড়াকান্দির নাম এবং সারা দেশের হিন্দু-সম্প্রদায়ের কাছে এটি পরিণত হয় তীর্থস্থানে। ৬৬ বছর বয়সে ১২৮৪ বঙ্গাব্দে জন্ম দিবসের একই তিথিতেই তিনি পরলৌকিকত্ব বরণ করেন।
হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরী কাশিয়ানী উপজেলার নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর জানান, প্রতি বছরের মত এবছরও দেশ ও দেশের বাইরে থেকে লাখ লাখ পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটবে এ স্নানোৎসবে। বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালি, বরগুনা, যশোর, নড়াইল, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলা ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল এবং শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশের মতুয়া ভক্তরা এ স্নানোৎসবে যোগ দিবেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাতে বিজয় ও সত্যের লাল নিশান এবং ডাংখা (বড় ঢোল) বাজিয়ে উলু ধ্বনি দিয়ে হরি বল হরি বল ধ্বনি উচ্চারন করতে করতে মাইলের পর মাইল পথ হেটে পাড়ি দিয়ে মতুয়া অনুসারীরা ছুটে আসবেন তীর্থভূমি শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে। এছাড়া বাস, ট্রাক, নসিমণ, করিমণ, ইজি বাইক, থ্রি-হুইলার ও নৌ-পথে নৌকা ও ট্রালারে করেও মতুয়াভক্তরা আসছেন। সব মিলে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ ভক্তের সমাগম ঘটে।
এ বছর স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা উপলক্ষে ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ী এবং মেলা প্রাঙ্গণে যে কোন ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উৎসবকে সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে ঠাকুর বাড়ি এলাকায় বসানো হয়েছে সুউচ্চ পর্যবেক্ষন চৌকি ও সিসি ক্যামেরা। আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এ স্নানোৎসব উপলক্ষে বসে মহাবারুনী মেলা। এ মেলা চলবে আগামী বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত। মেলায় কুঠির শিল্পের সামগ্রী, বিভিন্ন খেলনা, মাটির জিনিস, বাঁশের জিনিস, তাল পাখা, খাদ্য সামগ্রীসহ নাগর দোলনাসহ শিশুদের বিনোদনের জন্য নানা আয়োজন। বিশেষ করে চিনির তৈরী বিভিন্ন পশু পাখি, শিশুদের খেলনার মিষ্টি।
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান জানান, অনুষ্ঠানটিকে নিরবিচ্ছিন্ন করতে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের দুইশত পুলিশ সদস্যের একটি শিপটিং তালিকা তৈরী হয়েছে। এছাড়া কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। ভক্তদের নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য ঠাকুরবাড়ী এলাকায় ৫ কিলোমিটারের মধ্যে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, স্নানোৎসবকে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেহেতু এখানে বড় ধরনের জমায়েত হয় সে কারনে প্রবশে দ্বারসহ বিভিন্ন স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হবে। পর্যাপ্ত পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্মান করা হয়েছে পর্যবেক্ষন চৌকি।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের এই দিনে ওড়াকান্দির মহাবারুনী মেলায় হরি মন্দিরের সামনে পূর্ণার্থীদের ভীড়ে পদপিষ্ট হয়ে ৪ মহিলাসহ ৭ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মতুয়া ভক্ত আহত হয়েছিলেন।
পিবিএ/বিএস/হক