পিবিএ,ঢাকা: পথচারি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের অসদাচারণের কারণ ও তাদের পরিচয় জানতে চাওয়ায় রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে পুলিশের হাতে শারীরিকভাবে ‘লাঞ্চিত’ হয়েছেন বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে কর্মরত ছয়জন সাংবাদিক। অভিযুক্ত পুলিশের সদস্যরা হচ্ছেন, মতিঝিল থানার এএসআই মোর্শেদ, কনস্টেবল নাইমুল ও হুমায়ূন।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) মতিঝিলে অবস্থিত ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার, সাধারণ পথচারিদের সঙ্গে অসদাচারণ ও এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করায় ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিন পুলিশ সদ্যসকে দ্রুত বরখাস্ত ও ঘটনার সুষ্টু তদন্তের দাবি করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা। মতিঝিল থানায় এসব দাবি জানিয়ে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তারা।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতের খোলা-মেলা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিরা বসে ও দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলেন। এসময় নিজেদের মধ্যেও কথা বলছিলেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ আবু তালেব, আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জয়নাল আবেদীন খান, আমার সংবাদের নিজস্ব প্রতিবেদক রেদওয়ানুল হক, দেশ রুপান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক এ জেড ভূঁইয়া আনাস, অর্থসূচকের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. সুলাইমান ও ইংরেজী দৈনিক দ্য ডেইলি পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক আল ইহসান।
এসময় পুলিশের মতিঝিল থানার এএসআই মোর্শেদের নেতৃত্বে সশস্ত্র অবস্থায় নাইমুল ও হুমায়ূন(পরে নাম জানা গেছে) নামের দু’জন কনস্টেবল দূর থেকেই মারখুখী ইঙ্গিত দিয়ে সবাইকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিতে থাকেন। পুলিশের মারমুখী আচরণ দেখে ভয়ে আশপাশে বসে থাকা ব্যক্তিরা দ্রুত গতিতে সরে যেতে শুরু করেন।
তখন সাংবাদিকরা নিজেদের পেশাগত পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, আমরা এখনই চলে যাচ্ছি। চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে সবাই সঙ্গে সঙেগই চলে যেতে উদ্যোত হন ও পুলিশকে শান্ত হতে অনুরোধ করেন সাংবাদিক জয়নাল আবেদনী খান।
জয়নাল আবেদনী খান বলেন, ‘‘এসময় কস্টেবল হুমায়ূন আরও উত্তেজিত হয়ে কর্কশ ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন, আমি যা বলবো তাই শুনতে হবে। তাচ্ছিল্যর সুরে বলেন- আপনারা কোথাকার সাংবাদিক। আমি যা বলবো তাই শুনতে হবে। আমার কথাই চলবে।’
তখন সাংবাদিকরা পুলিশ সদস্য হিসেবে এ ধরণের দম্ভিক ও অসদাচরণ করতে পারেন কি-না তা জানতে চাইলে আকস্মিকভাবে সাংবাদিক রেদওয়ানকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দেন কনস্টেবল নাইমুল। কনস্টেলব নাইমূলের বুকে থাকা ‘নেমপ্লেট’ ঢেকে রাখায় সাংবাদিক শেখ আবু তালেব এগিয়ে এসে ওই পুলিশের নাম ও পদবি জানতে চান। এসময় তাকেও সজোরে ধাক্কা দিয়ে পাশের নিচু জায়গাল ফেলে দেন নাইমূল। এসময় তিনি হাঁটুতে আঘাত পান ও হাতের মোবাইল ছিটকে পড়ে যায়।
অন্যরা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও হেনস্তা করা হয়, অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেন পুলিশের আরেক সদস্য হুমায়ুন। পুলিশ দলটির নেতৃত্বদানকারি এ এস আই মোর্শেদ নীরব থাকায় দুই পুলিশ সদস্য আরো উত্তেজিত হয়ে পড়েন। হইচই শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার চেষ্টা করলে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা তাদের পথরোধ করে নিকটস্থ পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।
সাংবাদিক আবু তালেব বলেন, ‘‘স্থানটি খোলামেলা ও বিদ্যুতের আলো থাকায় অনেক লোকজনই এখানে বসে বা দাঁড়িয়ে কথা বলেন, কিছুক্ষণ থাকেন। অন্যান্যদের মতো আমরাও নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম, আর এক জন আসবে বলায় তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ আসা পুলিশের এরকম আচরণে আমরা বিব্রত হয়ে পড়ি। তাদের উগ্র ও মারমুখী রূপ আতঙ্ক ছড়ালে বসে থাকা অন্যান্য লোকজন দ্রুত চলে যায়।’
‘‘তারা বলতে থাকেন ৫ মিনিটের মধ্যে চলে যেতে হবে। আমি বলে দেই, আমরা এখনই চলে যাচ্ছি। এরপরও দুই কনস্টেবল নাইমূল ও হুমায়ুন উত্তেজিত ভাষায় হুমকি দিতে থাকেন। শান্ত হতে বলায় আরো ক্ষেপে যান। তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল এখনই গুলিও করে দিতে পারে। পুলিশের আচরণ পেশাদার ছিল না। কোনো ধরনের পরিবেশও ছিলনা পুলিশের উত্তেজিত হওয়ার।’’ যোগ করেন তিনি।
আবু তালেব আরো বলেন, ‘‘সাংবাদিক রেদওয়ানকে ধাক্কা দেয়ায় আমি তার সামনে গিয়ে দেখি বুকের নেমপ্লেট ঢেকে রাখা। তারা কোন থানায় কর্মরত, নাম ও পরিচয় জানতে চাওয়ায় জোড়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেন কনস্টেবল নাইমূল। যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।’’
তিনি বলেন ‘‘ আচমকা ধাক্কায় পড়ে গিয়ে বাম পায়ের হাঁটুতে ব্যাথা পেয়েছি। অল্প কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের কারণে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাদের দ্রুত বরখাস্ত ও ঘটনার সুষ্টু তদন্ত স্বাপেক্ষে বিচার চাই।’’
সাংবাদিক রেদওয়ানুল হক বলেন, ‘‘পুলিশ সরে যাওয়ার কথা বলার সাথে সাথে আমরা সরে যাচ্ছিলাম, কিন্ত তারা হুমকি দিতে শুরু করে। শান্ত হতে বললেও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। অন্যান্য সাংবাদিকরা কথা বলতে থাকায় মোবাইল বের করে ভিডিও শুরু করায় আমাকে ধাক্কা দিয়ে পিছনে সরিয়ে দেয় কনস্টেবল নাইমূল। পরে তালেব ভাইকেও ধাক্কা দেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার পরপরই এলাকায় থাকা সাধারণ লোকরা আমাদের জানান, প্রায়ই পুলিশ এই এলাকায় এসে সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে।সাধারণ নাগরিক, পথচারিদের হয়রানি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করায় তিন পুলিশ সদস্যকেই বরখাস্ত করতে হবে। দ্রুত বরখাস্ত করতে আমরা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তা না হলে আমরা পুলিশ সদর সপ্তরের সামনে মানববন্ধন করবো।’’
সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন খান বলেন, ‘‘আমরা পরিচয় দিয়ে চলে যেতে চাইলেও তারা কর্কশ ভাষায় কথা বলেন। পুলিশের দুই কনস্টেবল উচ্চবাচ্য করলেও এএসআই মোর্শেদ নিরব থেকে তাদের সমর্থন দেন।এতে তারা আরো হুমকি ধামকি দিতে থাকেন উপস্থিত সবাইকে। আমরা প্রতিবাদ জানালে ঘটনাস্থলে অনেক পথচারি জড়ো হলে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত চলে যেতে শুরু করেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি তৎক্ষনাত বিষয়টি পুলিশের ডিসি( মতিঝিল) কে জানাই। লিখিত অভিযোগ নিতে প্রথমে গড়িমসি করলেও পরে মতিঝিল থানা অভিযোগ নেয়। এসময় থানায় কম্পিউটার পরিচালনা করার মতো কোনো পুলিশ সদস্য