মধুপুরের আদর্শ কৃষাণী রিনা

পিবিএ,ঘাটাইল: একদা ছিলেন সাদামাটা এক গৃহিণী, কিন্তু বর্তমানে টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় নিজ গ্রামবাসীরা তাকে ‘আদর্শ কৃষাণী’ বলেই চেনেন। তিনি রিনা বেগম (৪৮)। গত প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যিনি বিষমুক্ত জৈব পদ্ধতিতে (অর্গানিক) বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে আসছেন।

পোকার আক্রমণ থেকে ফসলকে বাঁচাতে তিনি রাসায়নিক পদ্ধতির পরিবর্তে সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ও জৈবিক দমন পদ্ধতি (পার্চিং) ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও, গরুর গোবর, পঁচা কলাগাছ, নানা ধরনের আবর্জনা ব্যবহার করে জৈব সারও (কম্পোস্ট) তৈরি করেন তিনি।

দুই বছর আগে, স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে তিনিসহ একই উপজেলার আরও ১৯ জন নারী কেঁচো কম্পোস্ট (ভার্মি কম্পোস্ট) তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

রিনা বেগম বলেন, “রাসায়নিক সারের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া আসলে প্রায় অসম্ভব। কিন্তু, পাশাপাশি যদি জৈব সারের (বিশেষ করে কেঁচো কম্পোস্ট) ব্যবহার বাড়ানো যায়, তাহলে একই সঙ্গে খরচ কমে, উৎপাদন ভালো হয়, লাভও আসে।”

দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শোয়েব মাহমুদ বলেন, “রিনা বেগমের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই এলাকার অন্যান্য কৃষকেরাও ভালো ফলনের দেখা পেয়েছেন।”

প্রতি দুই মাসে রিনা বেগম ছয় মণ কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করেন এবং আশপাশের গ্রামের কৃষকদের কাছে প্রতি কেজি ২৫টাকা দরে বিক্রি করেন। এর পাশাপাশি কর্মোদ্যম এই নারী শাক-সবজি, মরিচ, ধান মিলিয়ে প্রায় শতাধিক জাতের ফসলের বীজের একটি সংরক্ষণাগারের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাকে রিনা বেগম বলেন, “কৃষকদের অনেকেই ফসলের বীজ সংরক্ষণ করেন না। ফলে, আমি তাদের কাছে বীজ বিক্রি করি। তাছাড়া অনেক সময় আমি এমনিতেই তাদের বীজ দেই এই শর্তে যে, তারা পরবর্তীতে বীজ সংরক্ষণ করবে এবং সেগুলো পুনরায় আমাকে ফিরিয়ে দেবে।”

পারিবারিক সূত্রে রিনা ও তার স্বামী মাত্র ১৩০ শতাংশ ফসলী জমি এবং ২০ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ি পেয়েছিলেন। তবে, জৈব প্রযুক্তির চাষাবাদ তাকে এমন এক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে যে, বর্তমানে তিনি কেবল অর্থনৈতিক সচ্ছলতার দেখাই পাননি, বরং তার পরিবারেরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে এখন চাকরিও করছে।

এভাবেই ২০১৫ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে মনোনীত হয়ে ব্যাংককে ৩৫তম বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসেছেন তিনি।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল কর্তৃপক্ষের আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও স্থানীয় কৃষাণীদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রিনা বেগমকে স্মারক, সনদপত্র ও নগদ টাকার পুরস্কার প্রদান করা হয়।

পিবিএ/জেআই

আরও পড়ুন...