নতুন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে। দাবি আদায়ে ক্লাস ফেলে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকরা।
আদালতের রায়ে এত দিন প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন জাকির হোসেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন তাকে অব্যাহতি দিয়ে সহকারী শিক্ষক আখলাক হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন। আর এরই প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আন্দোলনরত শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এই শিক্ষকরা বলছেন, উচ্চ আদালত এবং মাউশির নির্দেশে দায়িত্ব পাওয়া মো. জাকির হোসেনই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। তাকে বহাল করা না হলে তাদের কর্মবিরতি পালন করে যাবেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বালিকা শাখায় গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের বালিকা শাখায় অবস্থান নিয়েছেন। তারা অ্যাডহক কমিটির বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। তারা চান মো. জাকির হোসেনই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকুক।
তবে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ে বালিকা শাখায় উপস্থিত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, তিল তিল করে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আমার প্রতিষ্ঠানে কোনো জামায়াত-শিবিরের লোক থাকবে না, স্বাধীনতাবিরোধী লোক থাকবে না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনকে সরিয়ে আখলাক আহমদকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
তবে শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে আখলাক আহম্মদ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার একদিনের মাথায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার তা প্রত্যাহার করেন।
প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি চাই এই প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা অব্যাহত থাকুক। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলন এবং শিক্ষার স্বার্থে আমি ইস্তফা দিয়েছিলাম। তবে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এবং শিক্ষকদের একাংশের দাবির মুখে আমি দায়িত্ব থেকে ইস্তফাপত্র প্রত্যাহার করেছে। শিক্ষকরা চাইলে আমি এখানে দায়িত্ব পালন করব।
আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষকরা বলেন, বর্তমান অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আগে থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসা মো. জাকির হোসেনের দ্বন্দ্ব ছিল। এ কমিটির মেয়াদ একেবারে শেষ পর্যায়ে। এমন অবস্থার মধ্যে কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে গতকাল বুধবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে জাকির হোসেনকে অব্যাহতি ও আখলাক আহম্মদ নামে আরেক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর আজ ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যান এবং আখলাক আহমেদকে সরিয়ে জাকির হোসেনকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে বহাল রাখার দাবি জানান।
মনিপুর স্কুলের প্রশাসনিক সমন্বয়ক মো. রাশেদ কাঞ্চন বলেন, জাকির হোসেনের নিয়োগ বৈধ। তিনি মন্ত্রী বা কমিটির নিয়োগকৃত নন। উচ্চ আদালত এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছেন। করোনাকালে বেতন কমিয়ে শিক্ষকদের মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করা হয়েছিল। তিনি শিক্ষকদের বেতন বাড়িয়েছেন। শিক্ষকদের জন্য টিউশন ফি, আইডি কার্ড অনেক কিছু করেছেন।
মিজানুর রহমান নামে আরেক শিক্ষক বলেন, ভুয়া ভাউচারে স্বাক্ষর করেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন। তার অবস্থান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এজন্যই তাকে সরানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে কমিটির লোকজন।
মিরপুর এলাকার জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদা হক সাবিনা বলেন, আজ আমরা ন্যায় এবং সত্যের পক্ষে আন্দোলন করছি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে জাকির হোসেন স্যারের পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছি বলে জামায়াত-শিবিরের তকমা পেয়েছি। অথচ আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান।
মনিপুর স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, আজ যারা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন, ক্লাসে না ফিরে বিক্ষোভ করছেন, কর্মবিরতি পালন করছেন, তারা যদি আগামীকাল ক্লাসে না ফেরেন তাহলে সবার বিরুদ্ধে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব, মামলা করব। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া জাকির হোসেনকে জামায়াত-শিবিরের লোক বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি।