মব জাস্টিস গ্রহণ করা হবে না, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা: আইন উপদেষ্টা

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন মব জাস্টিস, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, গণপিটুনি দেওয়ার মতো ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণ করা হবে না।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনা ‘খুবই মর্মাহত’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের খুবই কষ্ট দিয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য যত রকমের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন আমরা নেব।

তিনি আরও বলেন, এখানে মব জাস্টিস, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, গণপিটুনি দেওয়া— এগুলো কোনোভাবে গ্রহণ করা হবে না। বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ড গ্রহণ করা হবে না। আমরা একটা জিনিস নিশ্চিত করছি, আমাদের সরকার আইনিভাবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। তদন্ত ও বিচার-সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

চোর সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথিকক্ষে আটকে রেখে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে একদল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় মারধরে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় চার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ। তারা হলেন- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল মিয়া; মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন; পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মোত্তাকিন সাকিন এবং সাজ্জাদ নামের এক শিক্ষার্থী। তারা সবাই এফএইচ হলের আবাসিক ছাত্র। তাদের মধ্যে জালাল মিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে তিনি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন। অপর তিনজনের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।

অন্যদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক দফায় মারধরের শিকার হয়ে মারা যান সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি সাভারের আশুলিয়া ইউনিয়নের কাঠগড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

শামীম আহমেদের মৃত্যুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের (৩৯তম ব্যাচের) ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শামীম মোল্লা ক্যাম্পাসের প্রান্তিক গেটে গণপিটুনির শিকার হন। পরে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গতকাল আনুমানিক বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে সেখানে তাকে ‘কতিপয় ব্যক্তি’ মারধর করে উল্লেখ করে ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, খবর পেয়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলমসহ প্রক্টরিয়াল টিম সদস্যেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে আহত অবস্থায় শামীমকে উদ্ধার করে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রক্টর অফিসের একটি কক্ষে রাখা হয়। এ সময় আশুলিয়া থানা-পুলিশকে ঘটনাটি জানানো হয়। কিছুক্ষণ পর কতিপয় ব্যক্তি প্রক্টরিয়াল টিমকে না জানিয়ে জোর করে শামীমকে পাশে অবস্থিত নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে যায়।

ঘটনাটি জানতে পেরে নিরাপত্তা অফিস থেকে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের সরিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেন প্রক্টর। পরে গেট ভেঙে কয়েকজন ভেতরে ঢুকে শামীমকে আবারও মারধর করে। রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টায় পুলিশ এসে জানায়, শামীমের নামে থানায় একাধিক মামলা আছে। পরে রাত ৮টার দিকে শামীমকে নিরাপত্তা দিয়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কল করে জানান, স্থানীয় গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শামীম মোল্লার মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন...