মসজিদেই মনিরকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মাদ্রাসা শিক্ষক

madrasa-student-monir-murde

পিবিএ,ঢাকা: রাজধানীর ডেমরায় মাদ্রাসা ছাত্র মনির হোসেন(৮) হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতারা হলেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল হাদী, ২ শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন এবং আহমদ শফী ওরফে তোহা।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, অধ্যক্ষ ও তার দুই সহযোগী শিশু মনিরকে অপহরণ করে। মাদ্রাসার পাশের নির্মাণাধীন মসজিদ মসজিদুল-ই-আয়েশায় নিয়ে যায় তাকে। ওই মসজিদেরও ইমাম অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল হাদী। সেখানে নেওয়ার পর মসজিদের সিঁড়িতে মনির কান্না শুরু করে। তখন অপহরণকারীদের একজন মুখ চেপে ধরে। মুখ চেপে ধরায় মনির আরো জোরে চিৎকার করে। তখন হাদীর গামছা দিয়ে মনিরের চোখ-মুখ বেধে ফেলা হয়। এক পর্যায়ে মারা গেছে বুঝতে পেরে মনিরকে সিমেন্টের একটি বস্তায় ভরে সিঁড়ির পাশে রেখে দেয় তার। বস্তায় ঢুকানোর আগে মনিরের হাত পা বেঁধে ফেলা হয়।

মারা গেছে বুঝতে পেরেও পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, মনিরের বাবা সাইদুল হকের কাছে রাতে ফোন করে তোহা। তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সে। টাকাটা মসজিদের লাশ রাখার খাটিয়াতে রাখতে বলে। মনিরের বাবা এক লাখ টাকা জোগাড় করে মসজিদে নিয়ে আসে। ছেলে ফিরে পাওয়ার আশায় মসজিদেই অপেক্ষা করে এবং টাকাটা মসজিদের ইমাম হাদীর কাছে রাখে। সারারাত অপেক্ষার পরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে পরদিন টাকা নিয়ে চলে যান তিনি।

বুধবার (১০ এপ্রিল ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলেনে গ্রেফতারকৃত অধ্যক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপি ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদ উদ্দিন।

তিনি জানান, ডেমরায় ৮ বছরের শিশু মাদ্রাসাছাত্র মনির হোসেনকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে হত্যাকারীরা। তাকে অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত তারই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল হাদী (৪২) ও তার দুই সহযোগী মো. আকরাম হোসেন (২২) ও আহাম্মদ সফি তোহা (১৬)।

গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, অপহরণের পর মনিরকে মসজিদের সিঁড়িতেই শ্বাসরোধে হত্যা করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল জলিল হাদী। এ সময় তার সঙ্গে আকরাম হোসেন ও আহাম্মদ শফি ওরফে তোহা ছিলেন।

এর পর মনিরের লাশ বস্তায় ভরে সিঁড়ির পাশে রেখে দেন তারা। শুধু তাই নয়, মনিরকে হত্যার পর তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণও দাবি করেন খুনিরা।

ডিসি আরো জানান, ৭ এপ্রিল রনিবার সকাল ৭টায় মাদ্রায় যায় মনির ও তার দুই ভাইবোন। বেলা ১১টায় মাদ্রাসা ছুটি হওয়ার পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রিন্সিপাল ও তার দুই সহযোগী অন্যদের ছুটি দিয়ে মনিরকে অপহরণ ও হত্যা করে।

পরদিন ৮ এপ্রিল সোমবার বিকাল ৫ টায় মসজিদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার সিঁড়ির মাঝখান থেকে বস্তাবন্দি শিশু মনিরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর সন্দেহভাজন হিসেবে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও ছাত্র তোহাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ডিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রথমে স্বীকার না করলেও ৯ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকালে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেন অধ্যক্ষ ও তোহা। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মালিটোলা থেকে গ্রেফতার করা হয় আকরাম নামের আরেক ছাত্রকে।

আকরাম ২০১৮ সালে মসজিদুল-ই-আয়েশা মসজিদের তারাবির নামাজ পড়িয়েছিলেন। এ বছরও ইমামের পরিচিত হিসেবে তারাবির নামাজ পড়াতে এলাকায় গিয়ে এমন ঘটনা ঘটায়। এই ৩ জনকেই মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। তাদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...