পিবিএ,মহাদেবপুর (নওগাঁ): নওগাঁর মহাদেবপুরে ভূয়া এতিমখানা দেখিয়ে এতিমদের নামে বরাদ্দকরা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ যোগসাজসে বছরের পর বছর ধরে এসব অর্থ আত্মসাত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এবছর উপজেলার ৩৪টি এতিমখানায় মোট ৭৫১জন এতিমের প্রত্যেকের জন্য প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে গত ৬ মাসের জন্য মোট ৯০ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। উপজেলার হাতুড় ইউনিয়নের সমাসপুর মরহুমা সোনাভান খানম স্মৃতি বেসরকারি শিশু সদনে ৬ জন এতিমের জন্য বরাদ্দ করা হয় ৭২ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে একদল সাংবাদিক সমাসপুর গ্রামে গিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে ঘুরে দেখেও ওই নামে কোন প্রতিষ্ঠানের অস্তিস্ত খুঁজে পাননি। গ্রামের বৃদ্ধ মানুষেরাও ওই নামে কোন এতিমখানার নাম শোনেননি বলে জানান। ওই গ্রামের মৃত আলীম উদ্দিনের ছেলে মোকসেদ আলী জানান, মরহুমা সোনাভান খানম হাতুড় ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আকবর আলীর মা।
চেয়ারম্যান আকবর অসুস্থ্য হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় তার মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর ভাতিজা আতাউর রহমান জানান, তিনি নিজে চেয়ারম্যানের প্রতিষ্ঠিত সমাসপুর ফোরকানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও শিশু সদনের দেখাশোনা করেন। এখানেই কথিত মরহুমা সোনাভান খানম স্মৃতি বেসরকারি শিশু সদনের কাজ চালান বলে জানান।
তিনি জানান, ১৬ বছর আগে এই মাদ্রাসাটি স্থাপন করা হয়। কয়েক বছর আগে এতিমখানাটি চালু করায় তার নতুন কোন সাইনবোর্ড দেয়া হয়নি। এতিমখানার জন্য নতুন কোন ভবন বা ঘরও নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে এখানে মোট ৬ জন এতিম রয়েছে বলেও তিনি জানান।
মাদ্রাসায় গিয়ে কয়েকজন শিশুকে দেখা যায়। তারা জানায়, এখানে সাজেদুল ও শামীম নামে ২ জন এতিম রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আতাউর রহমান জানান, বাকী ৪ জন করোনার কারণে অনুপস্থিত রয়েছে। কিন্তু তাদের নাম ঠিকানা তিনি বলতে পারেননি। ওই গ্রামের আরিফুল আলমসহ অনেকেই জানান, ওই মাদ্রাসার ১৫ জন শিক্ষার্থীর প্রতিদিনের খাবার গ্রামের বিভিন্ন বাড়ী থেকে সরবরাহ করা হয়। তাহলে ৬ জন এতিমের জন্য প্রতিমাসে বরাদ্দ করা টাকা কোন কাজে খরচ করা হয় তা নিয়ে গ্রামবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জানতে চাইলে আতাউর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠানের খরচ ও শিক্ষকদের বেতন বাবদ ওই টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু এতিম শিশুদের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ কেন অন্য খাতে ব্যয় করা হয় তা নিয়েও গ্রামে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
সরকারি তালিকায় এতিমখানাগুলোর নামের পাশে প্রতিষ্ঠানের মোবাইলফোন নম্বর যোগ করা হয়েছে। কথিত মরহুমা সোনাভান খানম স্মৃতি বেসরকারি শিশু সদনের যে নম্বর দেয়া হয়েছে তা উপজেলা সমাজসেবা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হারুন অর রশিদের ব্যক্তিগত ব্যবহৃত মোবাইলফোন নম্বর। একটি অস্তিস্তহীন প্রতিষ্ঠানের জন্য তার মোবাইল নম্বর কেন ব্যবহার করা হয়েছে তার কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। স্থানীয় সুধীমহলের মতে হারুনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নাম ও তার নিজের মোবাইলফোন নম্বর ব্যবহার করে ভূয়া এতিমদের নামে ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
মোবাইলফোনে উপজেলা সমাজসেবা কর্তকর্তা জাহাঙ্গীর আরিফ প্রামানিকের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসবের কোন সদুত্তর দিতে সক্ষম হননি।
নওগাঁ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূর মোহাম্মদ বলেন, ভূল হয়ে থাকলে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ বাতিল করা হবে।
পিবিএ/ইউসুফ আলী সুমন/এসডি