মহিলা কবিরাজের তেলেসমাতি কারবার

পিবিএ,কুষ্টিয়া : দীর্ঘ এক যুগ ধরে মা ফাতেমা (রাঃ), উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক হযরত শাহ জালাল এবং শাহ পরানের মত আধ্যাতীক পুরুষ এমনকি মা কালিও না কি তার ডাকে সারা দিচ্ছেন। এর ফলে সপ্তাহে তিন দিন বহু দূর দূরান্ত থেকে নানাবিধ রোগ -শোকসহ যে কোন জটিল ও কঠিন সমস্যার সমাধান নিতে আসা বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে সমাধান দিচ্ছেন । আর সেই সমাধান নিতে মোটা অংকের অর্থ গুনতে হচ্ছে সেবা প্রত্যাশীদের।

কবিরাজি চিকিৎসার নামে এমনই অভিনব প্রতারনার ফাঁদ পেতে বসেছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খোর্দ আইলচরার মাঠপাড়া এলাকার নিমাই মন্ডলের স্ত্রী শুকজান(৪৫)। জানা যায়, দীর্ঘ এক যুগ ধরে তিনি নারীদের বন্ধ্যাত্ব দূর করে সন্তান লাভ করিয়ে দেওয়া,দাম্পত্য কলহ দূর করা, মনের মানুষকে কাছে পাইয়ে দেওয়া সহ ঝাড়ফুক, তেল পড়া আর তাবীজ কবজের মাধ্যমে যে কোন জটিল ও কোঠিন রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন । আর এইসব সমস্যার সমাধানের জন্য সাধারন মানুষের কাছ থেকে তিনি মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

মহিলা কবিরাজের তেলেসমাতি কারবার
ধ্যানে মগ্ন মহিলা কবিরাজ

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন সেমি পাকা বাড়ী তুলেছেন তিনি।বাড়ীর সম্মুখে একটি পাকা গোয়াল ঘড়।যেখানে ৮-১০টি গরু ছাগল বাধা রয়েছে। যেগুলো তার ভক্তরা তার কাজে খুশি হয়ে উপঢৌকন হিসেবে দিয়েছে। সেমি পাকা বাড়ীটির ভেতর একটি মাটির ঘর। ঘড়ের ভেতর আগর বাতি জ্বালিয়ে একটি নামাজের পাটি পেড়ে দুহাত জোড় করে ধ্যানে বসে আছেন তিনি।তার সামনে একশ থেকে পাঁচশ ও এক হাজার টাকার নোট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা।

তার স্বামী সহ বেশ কয়েক জন রোগী মা ফাতেমার আসার অপেক্ষা করছেন।একটু পড়েই মা ফাতেমার বদলে মা কালী এলেন,তারপর এলেন শাহ জালাল (রাঃ),এরপর বায়েজীদ বোস্তামী।তারা একের পর এক অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছে। হঠাৎ সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে খুব বেশি একটা কথা বলতে চাইলেন না

এরপর ধ্যান ভেঙে যায় ঐ কবিরাজের। তার কাছে জানতে চাইলে সরল স্বীকার উক্তিতে তিনি জানান দীর্ঘ এক যুগ ধরে এই সব মহান ব্যাক্তিরা তার কাধে ভর করে আছে। যাদের সাহায্যে এমন কোন জটিল ও কোঠিন সমস্যা নেই যার সমাধান তিনি করতে পারেন না।

তার দাবী তার পাতানো এ দরবারে পুলিশ, সাংবাদিক এমনকি কুষ্টিয়ার বাঘা বাঘা রাজনীতিবীদরাও নানা সমস্যার সমাধান পেতে আসেন। এসময় কোন বৈধ অনুমতি পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শুকজান নামের এই মহিলা কবিরাজ সাধারন মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে ব্যাবসার হাতিয়ার বানিয়ে আইলচারা সহ কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারনার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এই সকল ভুয়া কবিরাজের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের দৃশ্যমান তেমন কোন পদক্ষেপ নেই। যে কারনে অনেকটা নির্বিঘ্নে এসব ভূয়া কবিরাজরা গোটা জেলা ব্যাপী তাদের প্রতারনার জাল দ্রুত বিস্তার করছে।এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন সুদৃষ্টি দেবেন বলে মনে করছেন তারা।

মুঠোফোনে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা হলে, সঠিক তালিকা পেলে দ্রুত এসব ভূয়া কবিরাজদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।

পিবিএ/কেএসএস/আরআই

আরও পড়ুন...