পিবিএ,লালমনিরহাট: মায়ের কবরের পাশে অঝোরে কাঁদছে দুই ভাইবোন। মায়ের হত্যার বিচার চেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দুই সন্তান। হত্যাকারীকে বিচারের আওতায় আনার মতো উপার্জন নেই সন্তানদের। এদিকে, মাকে হারিয়ে কিছুতেই থামছে না সন্তানদের আহাজারি। বিলাপে বারবার চিৎকার করে মায়ের হত্যার বিচার চাচ্ছেন তারা। আক্ষেপের সুরে মায়ের কবরের পাশেই শুক্রবার এসব কথা বলেছেন মৃত শান্তনার একমাত্র ছেলে সুলতান।
সুলতান লালমনিরহাটে পাটগ্রামের কাউয়ামারী আপ্তার উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়েন। মায়ের হত্যার বিচার চেয়ে সুলতান আরও বলেন, ‘সেদিন ছিল (৮ এপ্রিল), মাকে বাড়িতে রেখে সকাল ৭টার দিকে টিউশনি পড়াতে যাই বিদ্যালয়ের পাশে। টিউশনি শেষে বিদ্যালয়ের ক্লাসে চলাকালীন ছোট বোন ফাতেমা দৌড়ে এসে কান্না করতে শুরু করে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকে মাকে বাড়ির সবাই মারধর করছেন।
দ্রুত বোনকে নিয়ে বাইসাইকেলে করে বাড়িতে এসেই দেখি মা নেই। মাকে হত্যা করে সবাই পালিয়ে গেছে। এ হত্যার বিচার আমরা পাব না।’ সরজমিনে জানা গেছে, উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের মধ্য ইসলামপুর গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে আব্দুস সালামের সাথে মৃত ইব্রাহিম আলীর একমাত্র কন্যা শান্তনা বেগমের (৩৩) ১৭ বছর আগে বিয়ে হয়।
সংসার জীবনে তিন সন্তানের জননী শান্তনার সাথে সাংসারিক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বামী আব্দুস সালাম, শ্বশুর সাইদুল ইসলাম, শাশুড়ি মজুরন নেছা, একই গ্রামে বিবাহিত ননদ বিলকিছ ও তার স্বামী- আবুল কালাম বিয়ের পর থেকে অমানবিক নির্যাতন চালাত। ঘটনার দিন পারিবারিক বিষয় নিয়ে শাশুড়ি মজুরন নেছার সাথে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হলে শ্বশুড়, ননদ, ননদের স্বামী মিলে শান্তনাকে মারধর করে।
একপর্যায়ে স্বামী আব্দুস সালাম বাইরে থেকে এসে কোনো কিছু না বুঝেই মারতে থাকে শান্তনাকে। পরে ঘরের ভেতরে আটকে রেখে মুখে বিষ ঢেলে দেয় পাষন্ড স্বামী। ঘরের ভেতর থেকে একাধিকবার পানি চাইলেও তারা পানি দেয়নি। পরে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ছোট বোন ফাতেমা তার ভাই সুলতানকে বিদ্যালয়ে ডাকতে যায়। বাড়িতে এসে দেখে এলাকাবাসী তার মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
ওই দিন রাতেই নিহত শান্তনা বেগমের ভাই রেজাউল ইসলাম বাদী হয়ে পাটগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলেও পুলিশ তা এখন পর্যন্ত আমলে নেই নি। পরিবারের অভিযোগ হত্যাকারীদের সাথে পুলিশ আঁতাত করেছে। পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত (তদন্ত) সুমন কুমার মহস্ত বলেন, ‘নিহত গৃহবধূর ময়না তদন্ত রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট ও তদন্ত অনুযায়ী যথার্থ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পিবিএ/এসআই/আরআই