মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের চামড়া উঠে যাচ্ছে

পিবিএ,পাবনা: দুই বছর ধরে জটিল চর্মরোগে আক্রান্ত পাবনার আটঘরিয়ার দরিদ্র নাজমুল ইসলাম (৩২)। মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার শরীরের চামড়া উঠে যাচ্ছে। অসহ্য যন্ত্রণায় কাটছে তাঁর প্রতিটি

দিন। কবিরাজ, হাসপাতালে বিভিন্নভাবে চিকিৎসা করিয়ে কোনো ফল পাননি তিনি। ভ্যান চালিয়ে ও মাছের ব্যবসা করে যা আয় করেছিলেন, তার সবটাই শেষ চিকিৎসায়। অসুস্থ্য হওয়ার পর থেকে বন্ধ তার আয় উপার্জন। সংসার চলছে প্রতিবেশিদের সহায়তায়। অসুস্থ্য স্বামী আর এক মেয়েকে নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী। উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান ও সরকারের সাহায্য কামনা করে

ছেন তারা।

আটঘরিয়া উপজেলার মাঝপাড়া ইউনিয়নের কালামনগর গ্রামের মৃত সাদেক আলীর ছেলে দরিদ্র নাজমুল ইসলাম। সরকারি খাসজমিতে বসবাস স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে। বর্তমানে তার চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই তার বয়স ৩২ বছর। টগবগে যুবক কর্মঠ নাজমুল এখন নিস্তেজ। প্রথমে ভ্যান চালিয়ে, পরে মাছের ব্যবসা করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বর্তমানে বাড়িতে একপ্রকার বদ্ধ ঘরে কাটছে তার দিন।

আলাপকালে নাজমুল ইসলাম জানান, মাছের ব্যবসা করার কারণে বছর দুয়েক আগে হাতে চুলকানি দেখা দেয়। প্রাথমিক চিকিৎসায় ভাল হওয়ার কিছুদিন পর আবারো শুরু হয় চুলকানি। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কবিরাজ দিয়ে নানাভাবে চিকিৎসার করালেও লাভ হয়নি। মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের চামড়া শুকিয়ে খসে পড়ছে প্রতিনিয়ত। অসহ্য যন্ত্রণায় প্রতিটি

দিন কাটছে তার। অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না নাজমুল। ফলে দুই বছর ধরে বন্ধ তার আয় উপার্জন। এমন অবস্থায় অসুস্থ্য স্বামীকে নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী।

কান্নাজড়িত কন্ঠে স্ত্রী লাকী খাতুন জানান, একমাত্র সম্বল অটোভ্যানটি বিক্রি করে আর সঞ্চয় বলতে যা ছিল, সব শেষ হয়ে গেছে স্বামীর চিকিৎসায়। এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। ঘরে খাবার নেই। প্রতিবেশিরা দয়া করে যা দেয় তাই দিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছে সংসার। একমাত্র মেয়েকে অনেকদিন ঠিকমতো খেতে দিতে পারি না। আমাদের দেখার মতো নেই কোনো আত্মীয়-স্বজন। এখন সরকারি বা বেসরকারিভাবে কেউ যদি আমার স্বামীর চিকিৎসায় এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো তিনি ভাল হয়ে যেতে পারেন।

অসহায় ও নিংস্ব পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে প্রতিবেশিরা। স্থানীয় বাসিন্দা আসাফ উদ্দৌলা, রাসেল আহমেদ ও তাসলিমা খাতুন বলেন, নাজমুলের বাড়িটা খাসজমির উপর। তাদের দেখার মতো তেমন কেউ নেই। তার কামাই-রুজি বন্ধ। চিকিৎসা করানোর মতো টাকা-পয়সা তাদের হাতে নেই। আমরা যে যতুটুক পারছে সাহায্য করছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা নাজমুলের চিকিৎসায় এগিয়ে এলে পরিবারটি উপকৃত হবে।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো: নজরুল ইসলাম বলেন, এই চর্ম রোগের নাম এক্সফোলিয়েটিভ ডার্মাটাইটিস (Exfoliative dermatitis)| তাকে সুস্থ্য করতে দরকার উন্নত চিকিৎসা ও পরীক্ষা নীরিক্ষা। যা পাবনায় নেই। সে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিল, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা বা রাজশাহী নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছি। চিকিৎসায় কত টাকা খরচ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বলা যাবে। তবে উন্নত চিকিৎসা পেলে সে সুস্থ্য হয়ে যাবে।

পিবিএ/এমআর/জেডআই

আরও পড়ুন...