কিশোর গ্যাং-মাদক নিয়ন্ত্রণে ২৫ সিসি ক্যামেরা: ওসি জহিরুল

পিবিএ,উত্তরা: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পূর্ব থানা এলাকাটি ২৫টি সিসি ক্যামেরাদ্বারা মনিটরিং করা হয়। পাশাপাশি থানা থেকে বসে আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শুরু করে এপিবিএন সীমানা পর্যন্ত থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে নজরদারি করা যাচ্ছে। ফুটপাতের হকার মুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া মাদক- কিশোর গ্যাং ও ছিনতাই রোধকল্পে ক্যামেরাদ্বারা প্রতিনিয়তই মনিটরিং করা হয়। ঢাকা হাইওয়েতে বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে জালানা দিয়ে মোবাইল ছিনতাই রোধে কাজ করা হচ্ছে। এজন্য সিসি ক্যামেরাগুলো ভাল উপকারে লাগছে। সিসি ক্যামেরা দেখে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করাও অনেকটাই সম্ভব হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, মান্দাতার আমলের পুলিশ আর বর্তমান সময়ের পুলিশ এক নয়। থানা পুলিশের হাজতখানা মানেই দুর্গন্ধ ও অপরিষ্কার এক স্হানের নাম। অপরাধীদের কেউ এক রাত থানা হাজতে থেকে সকালে আদালতে চালান হন। আবার কেউবা রিমান্ডে এলে থানার হাজতে রাতভর থাকতে হয়। জেলখানার চাইতে হাজতখানায় কষ্ট বেশি বলে মনে করেন আসামিরা ও অপরাধীরা।

সোমবার ডিএমপি উত্তরা পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম পিবিএ’র প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব তথ্য জানান।

সরেজমিন গিয়ে গেখা যায়, সুন্দর পরিপাটি দিয়ে থানা হাজতখানা তৈরি করেছে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ। যেখানে নামাজ পড়ার জন্য রয়েছে টাইলস করা স্থান, সময় কাটানোর জন্য রাখা হয়েছে বই। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য রয়েছে সেলফ। থানায় রয়েছে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারীদের জন্য রয়েছে ব্রেস্ট ফিটিং রুম, কম্পিউটার ল্যাব, থানায় ডিউটি অফিসারের কক্ষে রয়েছে সেবা প্রদানের জন্য কম্পিউটার ও প্রিন্টার, হাজত খানায় রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরাসহ সব কিছু ঘুরে দেখান তিনি।

উত্তরা পূর্ব থানায় হাজতখানায় আসামিদের জন্য বই পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে ওসি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, থানা হাজতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা, বই পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো আসামি বা হাজতি যেন হতাশ না হন তাই সুন্দর সময় কাটানোর জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জহিরুল ইসলাম বলেন, আসামিদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করায় আমার বিরল কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনেক আসামি দেখেছি যারা এক ওয়াক্ত নামাজও বাদ দেন না। অনেকের ঘুম আসে না, সারারাত পায়চারি করেন। অনেকে হতাশায় দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকতে থাকেন। অনেক আসামি হাজতে আত্মহত্যা করেছেন, অনেকে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। আসামিদের এসব দেখে আমার মনে হয়েছে, তাদের জন্য যদি সময় কাটানোর একটা ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তাদের হতাশা কমবে। তাদের মন শান্ত থাকবে।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, যারা নামাজ পড়েন, তারা নামাজ পড়তে পারবেন। অন্ততপক্ষে যারা হাজতে থাকবেন একরাত বা দুই-তিন রাত তাদের অস্বস্তিতে থাকতে হবে না। কারণ, অপরাধ করলেও তারা মানুষ। ভালো পরিবেশ পেলে হয়তো তারা নিজেদের ভুল শোধরে আলোর পথে আসতে পারেন।

এসময় খোলামেলা আলাপকালে মাদক নিয়ন্ত্রণ, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, হাইওয়েতে মোবাইল ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন ওসি জহিরুল ইসলাম।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, উত্তরা পূর্ব থানায় বসবাসরত মানুষের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বপালনে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১১০ জন পুলিশ সদস্য। তার মধ্যে পুলিশের উপ- পরিদর্শক (এসআই) ২৫ জন, এএসআই ২৫ জন, কনস্টেবল ও আনসার মিলিয়ে ৫০ জন এবং ১৫/১৬ জন নারী পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এছাড়া ৭টি গাড়ি রয়েছে। মাঝে মধ্য একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।

ওসি জানান, আমার থানা এলাকাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র এর বাস ভবন, বিরোধী দলীয় নেতা মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর এর বাসভবন, ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপ- পুলিশ কমিশনার ডিসি’র কার্যালয়, হাইওয়ে পুলিশের হেডকোয়াটার, শিল্প পুলিশের হেডকোয়াটার এপিবিএন পুলিশের হেডকোয়াটার সহ গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে।

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স মেনে চলছি’ উল্লেখ করে ওসি জহিরুল ইসলাম বলেন, গত এক বছরে উত্তরা পূর্ব থানায় ৪৫২ জন মাদকের আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রায় ১৮ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৬ কেজি গাঁজা, ১২ গ্রাম হেরোইন, ১৪৩ বোতল ফেন্সিডিল, ২৩ বোতল চোলাই মদ উদ্ধার করেছি। ভিক্টিম উদ্ধার করা হয়েছে ৬৮ জন, গাড়ি উদ্ধার ৫টি, মোবাইল উদ্ধার ১৫১টি, ছিনতাইকারী আটক ৩৬ জন। ৫২৪ প্রসিকিউশনে আটক ৬৫৬ জন, মামলায় গ্রেফতার ২৮৭ জন, পরোয়ানার মূলে গ্রেফতার ৫২ জন।

তিনি আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স মেনে চলছি। থানা এলাকায় সকল ফুটপাত উচ্ছেদ করেছি। কারণ, ফুটপাতের হকাররা হকারি করার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা করছিল। তাই সকল হকার উচ্ছেদ করেছি। থানার কোনো পুলিশ সদস্য যদি মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছি। পাশাপাশি চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, অসামাজিক কার্যকলাপ, কিশোর গ্যাং রোধকল্পে পুলিশ কাজ করে যাচেছ।

সবাই সমস্যার কথা মন খুলে বলতে পারেন জানিয়ে ওসি বলেন, কোনো সেবা প্রার্থী থানায় এসে যদি ফিরে যান তাহলে সে বিষয়ে ডিউটি অফিসারকে জবাবদিহি করতে হয়। ওসির রুমে যে কারোর প্রবেশে কোনো বাধা দেওয়া হয় না। সবাই সমস্যার কথা মন খুলে বলতে পারেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি জহিরুল ইসলাম বলেন, আমার থানা এলাকা থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক ছিনতাইকারী সদস্যকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। যে কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ নানা অপরাধ ও প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সাংবাদিক ও পুলিশের সমন্বয় খুবই জরুরি। তবে, পুলিশ ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ের ভিত্তিতে থানা এলাকায় নানা অপরাধ প্রতিরোধ ও নির্মূল করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

পিবিএ/মনির হোসেন জীবন/এমএসএম

আরও পড়ুন...