পিবিএ,ঢাকা: ভয়ানক আইস মাদকে আসক্ত হয়ে মাদকাসক্তরা নানা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে। আইস এক ধরণের মেথামফেটামিন মাদক যা মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুন ক্ষতিসাধন করে। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিস্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা এবং মানসিক অবসাদ ও বিষন্নতা তৈরি হতে পারে। শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে ইহা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, একটি চক্র “মেথ ল্যাব” তৈরী করে ভেজাল আইস, ইয়াবার রং পরিবর্তন, ঝাক্কি মিক্স ওরফে ঝাক্কি ওরফে ককটেল মাদক তৈরী করছে। গত ১৭ জুন বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত র্যাব-৩ গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে মূল হোতা মোঃ তৌফিক হোসাইন(৩৫)-সহ ৬ জন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো ১) মোঃ তৌফিক হোসাইন(৩৫), ২) মোঃ জামিরুল চৌধুরী ওরফে জুবেইন(৩৭), ৩) মোঃ আরাফাত আবেদীন ওরফে রুদ্র(৩৫), ৪) মোঃ রাকিব বাসার খান(৩০), ৫) মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে সবুজ(২৭), ৬) মোঃ খালেদ ইকবাল(৩৫)।
অভিযানে আইস, ইয়াবা, বিদেশী মদ, গাঁজা এবং ১৩টি বিদেশী অস্ত্র এবং রেপলিকা অস্ত্র ও অন্যান্য ইলেকট্রিক শক যন্ত্র, বিপুল পরিমান, মাদক সেবনের সরঞ্জামাদিসহ ল্যাবরেটরি (মেথ ল্যাব) সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
এই সংঘবদ্ধ চক্রটি সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরায় একটি “মেথ ল্যাব” তৈরীর চেষ্টা করছিল। এই মেথ ল্যাবটি মূলত গ্রেফতারকৃত আরাফাত রুদ্র @ ঝাক্কি রুদ্র ও তার কয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় পরিচালিত করত। তারা আইস ও ইয়াবার পরিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্র্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা বাজার হতে বিভিন্ন ঔষধ ও কেমিক্যাল মাদকের সাথে মিশ্রণ করতো। তারা পাতন পদ্ধতি ভেজাল দ্রব্য মিশিয়ে আইসের পরিমান বৃদ্ধি; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ইয়াবার রং পরিবর্তন এবং “ঝাক্কি” তৈরী করত। “ঝাক্কি” তৈরীতে তারা তরল পানীর সাথে ইয়াবা. ঘুমের ঔষুধ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় ঔষধের তরল মিশ্রণ করত বলে জানায়। তারা ভেজাল ও পরিশুদ্ধ উভয় প্রকার আইস সরবরাহ ও নিজেরাও সেবন করতো। এছাড়া মাদক দ্রব্য সেবনের জন্য তারা উত্তরায় একটি বাইং হাউজের নামে বাসা ভাড়া করে গোপনে মাদক সেবন ও অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহƒত করত। যেখানে সেবনকারী সিন্ডিকেটের একই “রিং” বা পরিচিতরা আশা যাওয়া করতো। তারা অন লাইনে বিভিন্ন কনটেন্ট হতে মেথ ল্যাব সম্পর্কে জানতে পারে।
উক্ত ব্যবসার মূলহোতা ও সমন্বয়কারী তৌফিক। অর্থ যোগানদাতা গ্রেফতারকৃত জুবেইন ও খালেদ। গ্রেফতারকৃত রুদ্র কেমিষ্ট হিসেবে “মেথ ল্যাব” পরিচালনা করতো। গ্রেফতারকৃত সবুজ সংগ্রহ সরবরাহকারী এবং তৌফিকসহ বাকিরা সকলেই মাদক বিপননের সাথে জড়িত ছিল। এ চক্রে আরও ১০-১৫ জন রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত জুবেইন লন্ডন হতে বিবিএ, গ্রেফতারকৃত তৌফিক বেসরকারী ইউনিভার্সিটি হতে বিবিএ, গ্রেফতারকৃত খালেদ বেসরকারী ইউনিভার্সিটি হতে এমবিএ, গ্রেফতারকৃত রুদ্র ও সাইফুল এইচএসসি পাশ করার পর ড্রপ আউট এবং গ্রেফতারকৃত খালেদ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় বর্ষে অধ্যায়নরত। গ্রেফতারকৃত রুদ্রের নামে ০৩টি মাদক মামলা রয়েছে এবং জুবেইন এর নামে একটি হত্যা চেষ্টা মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো জানায় যে, দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতিনিয়ত ইয়াবা সেবনে তারা চরম আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছায়। পরবর্তীতে আসক্তির মাত্রা বাড়াতে বিগত চার থেকে পাঁচ বছর যাবৎ তারা আইস গ্রহণ শুরু করে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে উঠতী বয়সী তরুণ-তরুণীদের নেশায় উদ্বদ্ধ করতো। ক্ষেত্র বিশেষে গোপন ভিডিও ধারণ করে তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করত। এছাড়া তারা অস্ত্রদ্বারা “এমিং গেম” জুয়া খেলত।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের অংশ এবং সকলেই আইস গ্রহণে মারাত্মকভাবে আসক্ত। জিজ্ঞাসাবাদে আরো কিছু সিন্ডিকেট এবং এই মাদকের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তারা সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করেছেন। র্যাব উক্ত সিন্ডিকেট এবং অন্যান্য আইস গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে র্যাবের সাড়াশী অভিযান অব্যাহত থাকবে। উক্ত গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পিবিএ/জেডএইচ