আলী রীয়াজ : মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার চাই, অবিলম্বে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট যে এই মামলা যিনি দায়ের করেছেন তার এই মামলা করার এখতিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ । ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট যে নাগরিকের বাক স্বাধীনতাকে হরণের জন্যে, গণমাধ্যমের ওপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্যেই করা হয়েছে এবং তা যে ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ইচ্ছেমাফিক ব্যবহার করবেন এটা আবারো প্রমাণিত হলো।
লক্ষ্যণীয় হচ্ছে যে এখন রাষ্ট্র সেন্সরশিপ ফ্রাঞ্চাইজ করে দিয়েছে – এখন সরকার আর নিজে এসব মামলা করছে না – তুলে দিয়েছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যুক্তদের হাতে; আইন এমনভাবেই তৈরী হয়েছে যেন তার যথাযথ ব্যবহার হয় এইভাবেই। অতীতেও আমরা দেখেছি কী ভাবে সরকারি ‘অনুরোধে’, অনুপ্রেরণায় ব্যক্তির বিরুদ্ধে, সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় এবং তাদের হেনস্তা করা হয়।
এই ধরণের মামলাকে ডেমোক্লিসের তরবারির মতো মাথার ওপরে ঝুলিয়ে রাখা হয়। সেন্সরশিপ শুধু নয় সহিংসতাও এইভাবেই ফ্রাঞ্চাইজ বা বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়কার বিষয় কিংবা ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী তৎপরতা তার প্রমাণ।
বাংলাদেশের বিরাজমান শাসনব্যবস্থা বুঝতে হলে, হাইব্রিড রেজিম কী ভাবে শাসন করে তা বোঝার জন্যে এগুলো অনুধাবন করা জরুরি। এর সঙ্গে যখন যুক্ত হয় এই ঘটনা যে ওই একই মামলার অভিযুক্তদের একজন ফটো সাংবাদিক – শফিকুল ইসলাম কাজল – ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান তখন তার একটি কার্যকারণের সন্দেহ তৈরী হয়।
কাজল সুস্থ্য দেহে ফিরুন সেটাই আশা করি – দাবি করি। কিন্তু এগুলোই হচ্ছে সেন্সরশিপের নতুন রূপ; এগুলোই হচ্ছে সেই অবস্থা যাকে নজরুল বলেছিলেন ‘তুমি ভয় দেখিয়ে করছো শাসন, জয় দেখিয়ে নয়‘। ভয়ের সংস্কৃতির ওপরে টিকে থাকে বলের শাসন। যারা ভীত হতে অস্বীকার করেন তাদের ওপরে নামে নিপীড়ন – আইনের মোড়কে, বিচার-বহির্ভুততভাবে। আজকে একদিকে বলতে হবে ‘এই দুর্ভাগ্য দেশ হতে হে মঙ্গলময় দূর করে দাও তুমি সর্ব তুচ্ছ ভয়; লোকভয়, রাজভয়, মৃত্যুভয় আর দীনপ্রাণ দুর্বলের এ পাষাণভার’। কিন্তু তার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবেই প্রতিবাদের কন্ঠ জোরদার করতে হবে। ‘অন্তরে বাহিরে (যে) দাসত্বের রজ্জু’ তাকে ছিন্ন করতে পারলেই এই নিপীড়নমূলক ব্যবস্থাকে পরাস্ত করা সম্ভব। সেই লড়াই রাজনৈতিক – রাজনীতিকে বাদ দিয়ে তা সম্ভব নয়। সাংবাদিকের স্বাধীনতা, নাগরিকের অধিকার একসূত্রেই গাথা – একটা বাদ দিয়ে আরেকটা প্রতিষ্ঠিত হবেনা।
(লেখক : আলী রীয়াজ, অধ্যাপক, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র। লেখাটি তার ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া)
পিবিএ/জেডআই