‘তুমি যদি উচ্চকণ্ঠে কথা বলো, তাহলে (জেনে রেখো) তিনি (আল্লাহ) তো গোপন ও অতি গোপন সবই জানেন।’ (সুরা : ত্ব-হা, আয়াত : ৭)
তাফসির : আগের আয়াতে আকাশ, পৃথিবী ও ভূগর্ভে আল্লাহর রাজত্বের কথা বলা হয়েছিল। আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ বিশ্বজাহান সৃষ্টি করে তাঁর কর্মযজ্ঞ স্থগিত করে দেননি। এই বিশ্বচরাচরের সব কিছু তাঁর নাগালেই আছে। তিনি সব কিছু জানেন, দেখেন। মানুষের কাছে যা গুপ্ত, মানুষের কাছে যা অব্যক্ত—সব কিছু আল্লাহর কাছে প্রকাশ্য ও স্পষ্ট। কোনো কিছু তাঁর কাছে গুপ্ত ও অব্যক্ত নয়।
মানুষ কিছু গোপনীয় বিষয় শুধু প্রিয়জন ও একান্ত কারো কাছে প্রকাশ করে, আর কিছু বিষয় এমন থাকে, যা কখনো কারো কাছে প্রকাশ করে না। যা শুধু প্রিয়জনের কাছে প্রকাশ করা হয় এবং যা কারো কাছে প্রকাশ করা হয় না—মহান আল্লাহ সব কিছু জানেন।
প্রখ্যাত তাফসিরবিদ আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) তাফসিরে ইবনে কাসিরে লিখেছেন, মানুষ যে কথা মনের ভেতর গোপন রাখে, কারো কাছে তা প্রকাশ করে না, আরবিতে তাকে বলা হয় ‘সিরর’। আর যেসব কথা এখন পর্যন্ত মনে আসেনি, ভবিষ্যতে কোনো সময় মনে উদিত হবে, সেগুলোকে বলা হয় ‘আখফা’। মহান আল্লাহ সব ধরনের কথা সম্পর্কে অবগত। আলোচ্য আয়াতে উভয় ধরনের কথা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, এটা তিনিই নাজিল করেছেন, যিনি আসমান ও জমিনের সব রহস্য জানেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬)
পৃথিবীর সব সৃষ্টির খবর রাখা আল্লাহর জন্য কোনো কঠিন বিষয় নয়। কেননা পৃথিবীর সব সৃষ্টি আল্লাহর কাছে একই সৃষ্টির মতো। কাজেই এসবের জ্ঞান তাঁর পরিপূর্ণভাবে আছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের সবার সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানেরই মতো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ২৮)
আলোচ্য আয়াতে মুসলমানদের এই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে মহান আল্লাহ জোরে দোয়া করলেও শোনেন, আস্তে দোয়া করলেও শোনেন। তিনি প্রকাশ্যে তাঁকে ডাকলেও শোনেন এবং গোপনে ডাকলেও শোনেন। একইভাবে জোরে জিকির করলেও তিনি শোনেন, আস্তে জিকির করলেও শোনেন।