পিবিএ ডেস্ক: মান্নাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ ১৭ ফেব্রুয়ারী।
আমরা অকালে হারিয়েছিলাম ২০০৮ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি মান্না নামের একজনকে যিনি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের সোনালি প্রজন্মের শেষ মহানায়ক। লক্ষ কোটি দর্শকদের কাঁদিয়ে এদিন চলে গিয়েছিলেন মান্না। আজ মান্না সম্পর্কে লিখতে গিয়ে শুধুই বারবার আমার সিনেমা হলে বাংলা সিনেমা দেখার দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে।
১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে জন্মগ্রহন করেন এস এম আসলাম তালুকার মান্না। ১৯৮৪ সালে এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রমের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে যিনি আগমন করেন। তাঁর প্রথম অভিনীত ছবির নাম তওবা কিন্তু প্রথম মুক্তি পায় ‘পাগলি’ ছবিটি। সেই নতুন মুখের সন্ধানে মান্নার সাথে আরও এসেছিলেন খালেদা আক্তার কল্পনা, নায়ক সুব্রত, নায়ক সোহেল চৌধুরী, নিপা মোনালিসা যারা মান্নার জীবিত অবস্থায় নতুন মুখের সন্ধানে পাওয়া অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী হারিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু মান্না হাড়িয়ে যাননি বরং মৃত্যুর আগে বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঠাই করে নেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মান্না।
১৯৮৪ সাল থেকে ৯০ সাল এই ৬টি বছর মান্না ছিলেন ছবির দ্বিতীয় নায়ক। দ্বিতীয় নায়ক হিসেবে ধীরে ধীরে এগুতে থাকেন তিনি। আলমগীর, সোহেল রানা, জসিম, ইলিয়াস কাঞ্চন এর দাপটে মান্নার সেখানে করার কিছুই ছিল না। নিজেকে সেরা অভিনেতাদের পাশাপাশি কাজ করার সুযোগে ভেতরে ভেতরে নিজেকে তৈরি করতে লাগলেন তা কেউ বুঝতে পারেনি ।
১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাসেম মালার প্রেম’ ছবিতে প্রথম একক নায়ক হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন। এর আগে সব ছবিতে মান্না ছিলেন দ্বিতীয় নায়ক। ‘কাসেম মালার প্রেম’ ছবিটি সুপার ডুপার হিট হওয়ার কারনে মান্না একের পর এক একক ছবিতে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন।
এরপর কাজী হায়াত এর দাঙ্গা ও ত্রাস ছবির কারনে তাঁর একক নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সহজ হয়ে যায়। এরপর মোস্তফা আনোয়ার এর অন্ধ প্রেম, মমতাজুর রহমান আকবর এর ‘প্রেম দিওয়ানা’, ডিস্কো ড্যান্সার, কাজী হায়াত এর দেশদ্রোহী, আকবরের ‘বাবার আদেশ’ ছবিগুলো মান্নার অবস্থান শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
মান্না একমাত্র নায়ক যিনি ১০০ এরও অধিক পরিচালক ও ৬১ জন নায়িকার সাথে ছবিতে অভিনয় করেন, যা যে কোন অভিনেতার জন্য একটি বিরল রেকর্ড।
আশির দশকে মান্না যখন ছবিতে আসেন তখন চলছিল আলমগীর, রাজ্জাক, জসীম, ফারুক, জাফর ইকবাল , ইলিয়াস কাঞ্চনদের স্বর্ণযুগ। সেখানে মান্না তওবা, পাগলী, ছেলে কার, নিস্পাপ, পালকি, দুঃখিনী মা,বাদশা ভাই এর মতো ব্যবসা সফল ছবি উপহার দেন। কিন্তু সবগুলো ছবিতে মান্না ছিলেন ছবির দ্বিতীয় নায়ক। তাই ব্যবসার কৃতিত্ব কখনও আলমগীর, কখনও রাজ্জাক, কখনও ফারুকের উপর যেতো।
নব্বইয়ের দশক আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের একটি স্মরণীয় দশক। এই দশকে পুরনো নায়ক নায়িকাদের পাশে আমরা পেয়েছিলাম অনেক নতুন মুখের অনেক সেরা ছবি যেগুলো বাণিজ্যিক ছবির ব্যবসার তুঙ্গে নিয়ে যায়। ৯০ দশকের শুরুটা ছিল কাঞ্চন ও রুবেল এর জন্য দারুন ও সেরাসময়। রুবেল অভিনীত শিবলি সাদিক এর ‘অর্জন’ ‘মা মাটি দেশ’ , খোকনের ‘বিপ্লব’, ‘সন্ত্রাস’, ‘টপ রংবাজ’ এ যে রানার ‘মহাগুরু’, ‘মৃত্যুদণ্ড’ আবুল খায়ের বুলবুল এর ‘শেষ আঘাত’ ‘মায়ের কান্না’র মতো সুপারহিট সব ছবি। অন্যদিকে নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত আজিজুর রহমান বুলির ‘বাপ বেটা ৪২০’ (মান্নাও ছিল) , শিবলি সাদিক এর ‘মা মাটি দেশ’ ‘মাটির কসম (১০০ তম ছবি)’ ফজল আহমেদ বেনজীর এর ‘প্রেমের প্রতিদান’ ‘বেপরোয়া’, নুর হোসেন বলাই এর ‘এই নিয়ে সংসার’ ‘মহৎ’ তোজাম্মেল হক বকুলের ‘গাড়িয়াল ভাই’ সোহানুর রহমান সোহান এর প্রথম ছবি ‘বেনাম বাদশা’, ওয়াকিল আহমেদ এর ‘সৎ মানুষ’ মমতাজুর রহমান আকবর এর ‘চাকর’ এর মতো সব সুপারহিট ছবি।
এতো সুপারহিট ছবির মাঝে মান্না নিয়ে আসে ১৯৯১ সালে মোস্তুফা আনোয়ার এর ‘কাসেম মালার প্রেম’ ছবিটি যা ছিল তাঁর প্রথম একক ছবি। ছবিটি সুপারহিট ব্যবসার কারনে আমরা পাই এতদিনের দ্বিতীয় নায়ক মান্নার নতুন একটি রুপ।
এরপর মোস্তফা আনোয়ার এর ‘অন্ধ প্রেম’, অশোক ঘোষ এর ‘শাদী মোবারক’ বুলবুল আহমেদ এর ‘গরম হাওয়া’ কাজী হায়াত এর দাঙ্গা , ত্রাস সাইফুল আজম কাশেম এর ‘সাক্ষাৎ,কামাল আহমেদ এর ‘অবুঝ সন্তান’, দেলোয়ার জাহান ঝনটুর ‘গরীবের বন্ধু’ (আলমগীর) দিয়ে কাঁপিয়ে দেয়া মান্না ধীরে ধীরে এগুতে থাকেন।
৯১-৯৩ নতুন মুখ নাইম -শাবনাজ ও ৯৩-৯৬ সালমান -শাবনুর, সানী -মৌসুমি জুটির ব্যবসা সফল ও দারুন সব ছবির পাশাপাশি মান্না হাজির হয় মমতাজুর রহমান আকবর এর ‘প্রেম দিওয়ানা’ বাবার আদেশ , কাজী হায়াত এর ‘দাঙ্গা’ , ‘ত্রাস’ ‘সিপাহী’, ‘দেশপ্রেমিক’ , দেশদ্রোহী , নুর হোসেন বলাই এর ‘ওরা তিনজন’ ‘শেষ খেলা’, নাদিম মাহমুদ এর ‘আন্দোলন’ ‘রুটি’ ‘রাজপথের রাজা’, এম এ মালেক এর ‘দুর্নীতিবাজ’ এফ আই মানিকের ‘বিশাল আক্রমন’ মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর ‘চিরঋণী’ এ যে রানার ‘মানুষ’ বেলাল আহমেদ এর ‘সাক্ষী প্রমাণ’ মমতাজুর রহমান আকবর এর ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, ‘বশিরা’ মতো সুপারহিট ছবি দিয়ে মান্না নিজেকে প্রমান করতে থাকেন আর দিন দিন পরিচালকদের আস্থা অর্জন করেন।
কাজী হায়াতের ‘দাঙ্গা’, ‘ত্রাস’ চলচ্চিত্রের মান্নাকে দর্শক কোনদিন ভুলতে পারবে না। ‘দাঙ্গা’ ছবিতে এক পুলিশ অফিসার [ওসি] চরিত্রে মান্নার অভিনয় ছিল রক্তে আগুনলাগার মতো। দাঙ্গা ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বপ্রথম রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী সাহসী চলচ্চিত্র আর মান্না হয়ে যান সাহসী এক অভিনেতা। ‘দাঙ্গা’ ছবিটির কারণে মান্না সব শ্রেণীর দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন যারা ধারাবাহিকতায় ‘ত্রাস’ ছবিটিও সফল হয় যেখানে মান্না ছিলেন কলেজের ছাত্র সংসদের জনপ্রিয় ছাত্রনেতার চরিত্রে। মূলত দাঙ্গা ও ত্রাস ছবির মতো সাহসী চলচ্চিত্রগুলোর সফলতায় কাজী হায়াত মান্নাকে দিয়ে পরবর্তীতে লুটতরাজ [মান্না প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র],’ দেশদ্রোহী’, ‘ধর’, ‘তেজি’, ‘সমাজকে বদলে দাও’ এর মতো আরও কিছু রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী ছবি নির্মাণ করেন যার সবগুলোই মান্নার কারণে দর্শকদের মনে চিরদিন থাকবে।
‘দেশদ্রোহী’ ছবিটিতে মান্না সিনেমা হলের প্রচুর দর্শকদের কাঁদিয়েছিলেন।
৯৬-তে সালমান এর মৃত্যুর পর সালমান- সানী যুদ্ধের অবসান ঘটে। তখন পরিচালকরা একজন আস্থাশীল নায়কের সন্ধান করতে থাকেন যেন তাঁদের ব্যবসা লোকসান না হয়। ঠিক সেই সময়ে মান্না পুরো চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে নিজের কাঁধে তুলে নেয়ার মতো কঠিন কাজ পালন করেন। ৯৭ সালে নায়ক হয়ে প্রযোজকের খাতায় নাম লেখান মান্না। সেই ছবি পরিচালনার দায়িত্ব দেন কাজী হায়াতকে যার পরিনাম লুটতরাজ এর মতো একটি সুপার ডুপারহিট ছবি। শুরু হয় মান্নার আসল যুগ। মুক্তি পেতে থাকে এনায়েত করিমের ‘ক্ষুধার জ্বালা’ নাদিম মাহমুদ এর ‘এতিমরাজা’ কাজী হায়াত এর ‘তেজী’, আকবরের ‘শান্ত কেন মাস্তান’ ইস্পাহানি আরিফ জাহানের ‘মোস্তফা ভাই ‘ দেলোয়ার জাহান ঝনটুর ‘রাজা বাংলাদেশী’ এর মতো বছরের সেরা ব্লকব্লাসটার ছবি। শুরু হয়ে যা চারদিকে মান্না নামের ঝড়।
সবাই তখন মান্না কে নিজের ছবিতে নিতে ছুটছে। চলচ্চিত্রের প্রযোজক পরিচালকরা পেলেন নতুন আশার আলো। মাঝে মাঝে রুবেল খানিকটা ঝিলিক দেখালেও মান্নার মতো নিয়মিত ঝিলিক দেখাতে ব্যর্থ।
১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় কাজী হায়াতের আম্মাজান’, রায়হান মুজিব ও আজিজ আহমেদ বাবুল এর ‘খবর আছে’, মালেক আফসারি পরিচালিত দ্বিতীয় প্রযোজিত ছবি ‘লাল বাদশা’ এর মতো সুপারহিট ছবি।
কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’ ছবিটি মান্নার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা একটি চলচ্চিত্র। যে ছবিতে মান্নার অভিনয় শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সি দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। ‘আম্মাজান’ ছায়াছবির কারনে মান্না সেই বছর বাচসাস এর সেরা নায়ক এর পুরষ্কার পান।
২০০০ এর দিকে যখন বাংলা চলচ্চিত্রের একটু একটু করে আঁধার নামতে থাকে তখন একমাত্র নায়ক মান্নার ছবিগুলো ছিল প্রযোজক ও পরিচালকদের আশার আলো এবং ব্যবসায় টিকে থাকার সাহস। মুক্তি পেতে থাকে কাজী হায়াত এর ‘আব্বাজান (এই ছবির কারনে ২য় বার বাচসাস পুরষ্কার পেয়েছিলেন), মালেক আফসারির ‘মরণ কামড়’, ছটকু আহমেদ এর ‘শেষ যুদ্ধ’, আকবরের ‘গুন্ডা নাম্বার ওয়ান, কুখ্যাত খুনি, কাজী হায়াত এর ‘বর্তমান’, এফ আই মানিকের ‘সুলতান’, বদিউল আলম খোকনের ‘দানব’, আকবরের ‘আঘাত পাল্টা আঘাত’, ‘মাস্তানের উপর মাস্তান’ ‘জীবন এক সংঘর্ষ , এফ আই মানিকের ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, কাজী হায়াত এর ‘সমাজকে বদলে দাও’, দেলোয়ার জাহান ঝনটুর ‘বীরসৈনিক’, জিল্লুর রহমান এর ‘ঈমানদার মাস্তান’, ইস্পাহানি আরিফ জাহান এর ‘নায়ক’, কাজী হায়াত এর ‘মিনিস্টার’ ও ‘কষ্ট’, মালেক আফসারির ‘বোমা হামলা’, শহিদুল ইসলাম খোকনের ‘ভেজা বিড়াল’, এফ আই মানিকের ‘দুই বধু এক স্বামী’, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর ‘অশান্ত আগুন’, ইস্পাহানি আরিফের ‘ভিলেন’, আকবরের ‘আরমান’, ‘টপ সম্রাট’, শাহাদত হোসেন লিটন এর ‘কঠিন পুরুষ’, বদিউল আলম খোকন এর ‘রুস্তম’, এফ আই মানিকের ‘ভাইয়া’, বদিউল আলম খোকনের ‘ধংস’, ‘বাবার কসম’, ’বাস্তব’, শাহিন সুমন এর ‘নেতা’, মনোয়ার খোকনের ‘সত্যর বিজয়’, শরিফ উদ্দিন খান দিপুর ‘বাঁচাও দেশ’, আহমেদ নাসির পরিচালিত ‘মনের সাথে যুদ্ধ’ এর মতো অসংখ্য সুপারহিট ছবি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে খারাপ সময়ে এতো বেশী সুপারহিট ব্যবসাসফল ছবি আর কোন নায়কের নেই।
১৯৯৭ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত (২০০৮ এর ফেব্রুয়ারি) মান্না একাই বাংলা চলচ্চিত্রকে টেনে নিয়ে গেছেন। কারন ঐ সময়ে মান্নার চেয়ে এতো বেশী ব্যবসা সফল ছবি আর কেউ দিতে পারেনি। এমনও বছর গিয়েছে যেখানে সেরা ১০ টি ব্যবসা সফল ছবির নাম খুজলে সব মান্নার ছবি পাওয়া গিয়েছিল।
নবীন- প্রবীণ সব পরিচালকের কাছে মান্না ছিল সবচেয়ে আস্থাভাজন নায়ক। যাকে নিয়ে ছবি বানালে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কাজী হায়াত, আকবর, এফ আই মানিক, মালেক আফসারি, ইস্পাহানি আরিফ এর মতো সিনিয়র পরিচালকরা যেমন মান্নাকে নিয়ে একাধিক সুপারহিট ছবি দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে শক্ত করেছেন তেমনি এই দশকের বদিউল আলম খোকন, শাহিন সুমন, শাহাদত হোসেন লিটন, শরিফুদ্দিন খান দিপুর মতো ব্যস্ত পরিচালকরা মান্নাকে দিয়ে সফল হয়ে নিজেদের সফলতার মুখ দেখেছেন।
মান্না একমাত্র নায়ক যিনি ১০০ এর বেশী পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
মান্নার পরিচালকদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলেন– দেলোয়ার জাহান ঝনটু, মোস্তফা আনোয়ার, কামাল আহমেদ, সাইফুল আজম কাশেম, জহিরুল হক, কাজী হায়াত, মমতাজুর রহমান আকবর, শফি বিক্রম্পুরি, আবুল খায়ের বুলবুল, মমতাজ আলী, নাদিম মাহমুদ, এনায়েত করিম, ইস্পাহানি আরিফ জাহান, ইফতেখার জাহান, আজিজুর রহমান বুলি, জিল্লুর রহমান, মোহাম্মদ হোসেন, বাদশা ভাই, এফ আই মানিক, বদিউল আলম খোকন, শাহাদত হোসেন লিটন, নুর হোসেন বলাই, বেলাল আহমেদ , মোস্তাফিজুর রহমান বাবু , মালেক আফসারী ও শহিদুল ইসলাম খোকন।
এতো বেশী পরিচালকের ছবিতে বাংলার আর কোন নায়ক অভিনয় করেনি।
সেই ৮০র দশকে সুনেত্রা, নিপা মোনালিসা থেকে শুরু করে চম্পা, দিতি, রোজিনা, নতুন, অরুনা বিশ্বাস, কবিতা এর মতো সিনিয়র নায়িকাদের সাথে অভিনয় করে যেমন সফল হয়েছিলেন তেমনি মৌসুমি, শাবনুর, পূর্ণিমা, মুনমুন, সাথী,স্বাগতা, শিল্পী, লিমা সহ এই দশকের নায়িকাদের সাথে সফল হয়েছিলেন যার বিপরীতে নায়িকার সংখ্যা ৬১ জন বেশী।
একাধিকবার বাচসাস পুরস্কার সহ ২০০৩ সালে ‘বীর সৈনিক’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন মান্না।
মান্না আমাদের বাণিজ্যিক ছবির ইতিহাসে একটি স্মরণীয় নাম হয়ে থাকবে। তাঁর অভিনয়, কথার ধরন সব কিছু মিলেই একটা আলাদা স্বতন্ত্র স্টাইল তিনি দাঁড় করিয়েছিলেন। এমন কিছু ছবি আছে (দাঙ্গা, ত্রাস, দেশদ্রোহী, লুটতরাজ, তেজী, ধর, আম্মাজান, সমাজকে বদলে দাও) যার জন্য মান্না চিরদিন দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছেন। মান্না ছাড়া হয়তো আমরা সেইসব ছবি পেতাম না।
একটা সময় ছিল যখন ছবিতে শুধু মান্না আছে তাঁর কারনেই দর্শক হলে ছুটে গিয়েছিল, তাঁর কারনেই ছবিটি ব্যবসা সফল হয়েছিল। মান্না যে ছবিতে দুর্দান্ত সে ছবির কাহিনী যত গতানুগতিকই হোক না কেন সেই ছবি ব্যবসা করবেই তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সমসাময়িক রাজনৈতিক পটভূমির সাহসী প্রতিবাদী গল্পের এমন কিছু ছবি মান্না আমাদের দিয়েছিলেন যা অন্য আর কোন নায়ক দিতে পারেনি ও আগামীতে পারবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। যে ছবিগুলো আমাদের চলচ্চিত্রকে করেছে সমৃদ্ধ।
আজ হলবিমুখ বাংলা চলচ্চিত্রের করুন সময়ে আরেকজন ‘মান্না’ কে খুব বেশী প্রয়োজন যার কারনে ছবি পাড়া আবার সরগরম হবে, প্রযোজক পরিচালকরা ব্যবসা করার সাহস পাবে সর্বোপরি বাংলা চলচ্চিত্র আবার জেগে উঠবে এমন আরেকজন ‘মান্না’র আশায় পুরো বাংলা চলচ্চিত্র।
২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে নায়ক মান্না মৃত্যুবরণ করেন। টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত তার নিজ গ্রাম কালিহাতীর এলেঙ্গায় মান্নাকে সমাহিত করা হয়।
পিবিএ/জেআই