পিবিএ,টাঙ্গাইল: মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ২১১তম সভায় সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. পিনাকীদে এর বেসরকারী কলেজের অভিজ্ঞতা গণনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে একই শিক্ষকের আপগ্রেডেশনের আবেদন বেশ কয়েকবার নাখোঁচ করে দেয় পূর্বের বেশ কয়েকটি রিজেন্ট বোর্ড।
বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত হওয়ার পরপরই অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর নিয়ম ভেঙে শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বেসরকারী কলেজের অভিজ্ঞতা গণনা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা সংশোধন করিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন।
ভিসি’র পছন্দের প্রার্থী গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. পিনাকী দেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা এমনভাবে সংশোধন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই এভাবে অভিজ্ঞতা গণনা করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে আলোচনা আর সমালোচনার ঝড় উঠেছে।এর আগে ড. পিনাকী দে এর অভিজ্ঞতা গণনার আবেদন ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল রিজেন্ট বোর্ডের ১৯৪তম সভায় পেশ করা হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও রিজেন্ট বোর্ড সদস্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরকে সভাপতি, অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিনকে সদস্য এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি পর্যালোচনা করে ১৯৮ তম রিজেন্ট বোর্ডে সভায় জানায়, কালিহাতি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্স নেই, বিএসসি (পাস) কোর্সে গণিতে পাঠদান আছে, ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষ হতে বি.এসসি (পাস) কোর্স চালু, ১৯৮৫-৮৬ ডিগ্রী (পাস) চালু হয়, ০১/০৭/২০১৬ তারিখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম ও হিসাব বিজ্ঞান অনার্স চালু হয়, প্রত্যয়নপত্র, অভিজ্ঞতার সনদ, এলপিসি, ছাড়পত্রের কপি ব্যক্তিগত নথিতে নেই।
উক্ত পর্যালোচনার ভিত্তিতে ১৯৮তম রিজেন্ট বোর্ডে ড. পিনাকী দের কালিহাতি কলেজের অভিজ্ঞতা প্রত্যাখান করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত শিক্ষকতার অতীত চাকুরিকাল গণনা সংক্রান্ত বিষয়টি সংশোধন হলে ড. পিনাকে দে এর অভিজ্ঞতা গণনায় নেওয়া যাবে বলেও মত দেয় কমিটি। অভিযোগ উঠেছে এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর একই বছরের জুন মাসের ২৭ তারিখে অনুষ্ঠিত ১৯৮তম রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ১৩নং সিদ্ধান্তে শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বেসরকারী কলেজের অভিজ্ঞতা গণনা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা সংশোধন করান।
আরো অভিযোগ উঠেছে, সহযোগী অধ্যাপক ড. পিনাকী দে কে অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশন একই সাথে দেবার জন্য স্থায়ী অধ্যাপক পদে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন ও রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ খাদেমুল ইসলামের জন্য গঠিত বোর্ড স্থগিত করেছেন ভাইস চ্যান্সেলর। তবে কি কারণে স্থগিত করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছুই জানেন না আবেদন করা দুই শিক্ষক।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কে অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশনের জন্য পূর্বের নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা ১০০ শতাংশ সর্বোচ্চ ৪ বছর, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ৪০ শতাংশ সর্বোচ্চ ২ বছর, সরকারী/স্বায়ত্বশাসিত/ গবেষনা সংস্থা ৪৫ শতাংশ সর্বোচ্চ ৩ বছর, অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রী সরকারী কলেজ ৪৫ শতাংশ সর্বোচ্চ ৩ বছর সুবিধা পাবে। অথচ বেসরকারী কলেজের কোন অভিজ্ঞতার বিষয় নীতিমালায় উল্লেখ নেই। কিন্তু সংশোধিত নীতিমালায়, ”অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চাকুরির অভিজ্ঞতা গণনার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করলে তা বিবেচনা করা যেতে পারে।” বাক্যটি সংযুক্ত করা হয়।
রিজেন্ট বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী কোন বিষয় প্রত্যাখান হলে কমপক্ষে ৬ মাসের মধ্যে পুনরায় ঐ বিষয়ে আবেদনের সুযোগ নেই। অথচ ড. পিনাকী দের অভিজ্ঞতা গণনার বিষয়টি ২ মাসের মধ্যে পরবর্তী রিজেন্ট বোর্ডে পুন:উপস্থাপন করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৮(ঞ) ভঙ্গ করে একাডেমিক কাউন্সিলের নির্বাচন ব্যতীত ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারী ড. পিনাকী দে কে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত করেন ভাইস চ্যান্সেলর।
আইন ভেঙ্গে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য নির্বাচন ও নীতিমালা সংশোধন করে অভিজ্ঞতা গণনা করার সিদ্ধান্তে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিজ্ঞতা গণনার সিদ্ধান্তের সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ও প্রক্টর ড. সিরাজুল ইসলাম জানান, তাকে পুরোপুরি অধ্যাপক নিয়োগ দেয়া হয়নি। আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এটা হতেও তাকে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। তিনি বিশ^বিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে দীর্ঘ সময় একটি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরী করছেন অনেক দিন হল। চাকরীর শেষ সময়ে তিনি একটু সম্মান পাওয়ার আবেদন করেছিলেন। বিষয়টি রিজেন্ট বোর্ড মানবিক বিবেচনায় নিয়ে অভিজ্ঞতা গণনার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্য দুই শিক্ষকের বোর্ড কেন স্থগিত করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় স্থগিত করা হয়েছি। তবে তাদেরটাও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়ই হবে। নতুন করে আর কোন সার্কুলার দিতে হবে না।
পিবিএ/টিএ/আরআই