মার্কিন ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা পেছালো!

trump

পিবিএ ডেস্ক : দেশের অবস্থা নিয়ে জাতির উদ্দেশে প্রেসিডেন্টের বক্তৃতা বা ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন স্পিচ’ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এই বার্ষিক বক্তৃতা পিছিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটল। প্রথমবার হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। উৎক্ষেপণের ৭৩ সেকেন্ড পরে বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায় নাসার চ্যালেঞ্জার মহাকাশ যান। মারা গিয়েছিলেন সাত সদস্য। তার কিছুক্ষণ পরেই বার্ষিক বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের। তখন ওই ভাষণ স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট নিজেই।

চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনার মতো কোনও জাতীয় বিপর্যয়ের ঘটনা না ঘটলেও এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে যা চলছে, তারও কোনও নজির অবশ্য নেই। ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া শাটডাউন আজ ৩৩ দিনে পা দিল। এই শাটডাউনের কারণ দেখিয়েই হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের স্পিকার, ডেমোক্র্যাট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বার্ষিক বক্তৃতার প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে জল ঢেলেছেন।

১৭৯০ সালের ৮ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কের ফেডারেল হলে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়েছিলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন। সেই শুরু। প্রতি বছর প্রেসিডেন্ট তার বক্তৃতায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করেন। আগামী দিনে দেশ কোন পথে হাঁটবে, তারও একটা দিশা দেখানো হয় এই বক্তৃতায়। এখনকার প্রথা অনুযায়ী, হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের চেম্বারে এই বক্তৃতা দেন প্রেসিডেন্ট।

আর সেটাকেই তুরুপের তাস করেছেন পেলোসি। গত বুধবার প্রেসিডেন্টকে পাঠানো চিঠিতে পেলোসি দাবি করেছেন, এত দীর্ঘ শাটডাউনের ফলে হাউসের কর্মী সংখ্যায় টান পড়েছে। এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট লেডি ও তাদের অতিথিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। প্রেসিডেন্টকে পেলোসি লিখেছেন, ‘আপনি চাইলে অন্য কোথাও থেকে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন স্পিচ দিতেই পারেন। কিন্তু এই অবস্থায় আপনাকে হাউস চেম্বার ব্যবহার করার অনুমতি কিছুতেই দিতে পারব না। আপনি বরং ওভাল অফিস (হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের দফতর) থেকেই ভাষণ দিন।’

রিপাবলিকান ও ট্রাম্প ঘনিষ্ঠদের দাবি, নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে রাজনৈতিক চাল চালছেন পেলোসি। প্রেসিডেন্ট পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের কথায়, ‘এ তো সেন্সরশিপ। জোর করে মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা।’ রিপাবলিকানদের প্রশ্ন, পেলোসি নিজেই তো ৩ জানুয়ারি এক চিঠি লিখে প্রেসিডেন্টকে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন স্পিচ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তখন তো পুরোদস্তুর শাটডাউন শুরু হয়ে গিয়েছিল। তখন স্পিকারের কেন মনে হয়নি, হাউস চেম্বারে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যাবে না? ডেমোক্র্যাটদের পাল্টা বক্তব্য, তখন শাটডাউনের সবে ১২ দিন হয়েছে। স্পিকারের কল্পনার অতীত ছিল যে, অচলাবস্থাকে এক মাসেরও বেশি টেনে নিয়ে যাবেন প্রেসিডেন্ট।

পেলোসির চ্যালেঞ্জের জবাব ট্রাম্প কীভাবে দেবেন, তা জানতে উৎসুক ছিল ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত হাউস এবং রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট, দু’পক্ষেই। ট্রাম্পের প্রথম টুইটটাই ছিল স্বভাবসিদ্ধ। তিনি লিখেছিলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা যা খুশি তাই করছেন। দেশের দক্ষিণ (মেক্সিকো) সীমান্ত সুরক্ষিত করতে তাদের কোনও মাথাব্যথাই নেই।’ গভীর রাতে অবশ্য সুর নরম করেন তিনি। জানান, অন্য কোথাও নয়, তিনি বক্তৃতা দিতে চান হাউস চেম্বার থেকেই। তাই স্পিকারের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করবেন। প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘আমি যদি আগামী সপ্তাহে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন স্পিচ না দিতে পারি, তা হলে তা দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হবে। আশা করি, স্পিকার আমায় খুব তাড়াতাড়ি দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দেবেন।’

পিবিএ/জিজি

আরও পড়ুন...