পুলিশের খাতায় এখনো শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন জামিনে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া সানজিদুল হাসান ইমন। গত ১০ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে দুই ব্যবসায়ীর ওপরে স্বশস্ত্র হামলা, কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় ছেলে ইমন জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন মা ডা. সুলতানা জাহান।
আজ শনিবার(১৮ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এদাবি করেন তিনি।
এলিফ্যান্ট রোডে ওই হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার ১ নং আসামী করা হয়েছে ইমনকে।
দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহতের ঘটনায় নতুন করে সামনে আসে অপরাধ জগতের দুই মাফিয়ার নাম। যারা এক সময় অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তারা হলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী হাজারীবাগের সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন ও মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল। গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তন পরবর্তীতে গত ১৫ আগস্ট ইমন ও ১৬ আগস্ট পিচ্চি হেলাল কারাগার থেকে জামিনে বের হন।
দীর্ঘ ২৪ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের বড় ভাই ওয়াহিদুল হাসান দীপু। যিনি গত ১০ জানুয়ারি আকস্মিক হামলার শিকার দুই ভুক্তভোগীর একজন। অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে এক নং আসামী করে দায়ের করা মামলার বাদী দীপু।
ইমনের মা সুলতানা জাহানের দাবি, কারাগারে থাকা অবস্থাতেই শারীরিক নানা জটিলতার কারণে অসুস্থ ছিলেন ইমন।কারাগার থেকে জামিনে বের হবার পর গত ডিসেম্বরে চিকিৎসার ব্যাংকক গেছে ইমন। বর্তমানে ইমন থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার ও মাল্টিপ্লান মার্কেটে নিজের দখলে রাখার জন্য হামলার ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন।
নিজে অসুস্থ থাকার কারণে ইমনের মায়ের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লিটন মিয়া নামে আরেকজন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ১০ জানুয়ারি শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের হামলার ঘটনায় বিদেশে থাকা সানজিদুল হাসান ইমনকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা ও প্রচারণার প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।
তিনি বলেন, আমার কর্মময় জীবনে আমি একজন চিকিৎসক। দীর্ঘ প্রায় ৪ দশকের উপরে আমি মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান ছিলাম। আমি আজ আমার বিদেশে থাকা সন্তান সানজিদুল হাসান ইমনকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা ও প্রচারণার প্রতিবাদ করতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
তিনি বলেন, গত ১০ জানুয়ারি শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনা সূত্রে আমরা জেনেছি যে, কতিপয় সন্ত্রাসী হঠাৎ করেই রামদা ও চাপাতি বের করে একটি গাড়িতে হামলা করা ছাড়াও গাড়ির বাইরে থাকা আরেকজনকে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করে। উক্ত সন্ত্রাসী হামলায় একই মার্কেটের আরও দুইজন কম্পিউটার ব্যবসায়ী আহত হয়। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাই। সাথে সাথে এই ঘটনায় যারা জড়িত সেসব সন্ত্রাসীদের ও ঘটনার সাথে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের অতিদ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমার সন্তান ইমন আওয়ামী নেতা ও মন্ত্রীদের রোষানলে পড়ে একাধিক মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে এবং বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলখানায় আটক ছিল।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতন এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ও বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত আমার সন্তানকে দীর্ঘ কারাবন্দি থাকার পর জামিনে মুক্তি দেন।
‘আমি অতি দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, জঘন্য এই হামলার সাথে একটি চক্র আমার সন্তান ইমনের নাম জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে এবং ওই হামলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় থানায় দায়ের হওয়ায় মামলার আমার সন্তানের নাম যুক্ত করা হয়েছে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
‘জামিন লাভের পর আমার সন্তান দেশের বাইরে চলে যায়। এরপরও তাকে অহেতুক ওই হামলায় জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ এই ঘটনায় মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজ ও একাধিক ডিভাইসে ধারণকৃত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ যা আপনারা চাইলে সংগ্রহ করতে পারবেন। ছবি ও ভিডিও ফুটেজগুলো দেখে আপনারাই বলুন, ওই ঘটনায় কোথাও আমার সন্তানের উপস্থিতি আছে কিনা ? তাছাড়াও, আপনাদের কাছে এই ঘটনায় আমার সম্পৃক্ততার কোনো মোবাইল কল বা অডিও রেকর্ড যদি থাকে সেটাও জনসম্মুখে প্রকাশ করুন।
সুলতানা জাহান বলেন, আমার সন্তান ইমন যদি তাদের কারো কাছে কখনো চাঁদা চেয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি এতদিনে পুলিশ, র্যাব, ডিবি, সেনাবাহিনীকে জানানো হয়নি কেন? অথবা ফোন কলে তাদের কাছে চাঁদা চাওয়ার কল রেকর্ড যদি থাকে, তাহলে তা প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করেনি কোন? আমার সন্তান যদি স্ব-শরীরে চাঁদা দাবি করে থাকে, তাহলে তার সিসিটিভি ফুটেজ প্রশাসনের কাছে প্রেরণ করেনি কেন?
তিনি বলেন, ‘মামলার বাদী ওয়াহিদুল হাসান দিপু পুরষ্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের আপন বড় ভাই। গত ৫ আগস্টের পর বসিলায় জোড়া খুনের ঘটনা তিনি নিজের হাতে ঘটিয়েছে বলে ঐ মামলার তদন্ত সূত্রে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে মামলায় ১নম্বর আসামি পুরষ্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মোহাম্মদপুরের সাবেক ৪৬ ও বর্তমান ৩১নং ওয়ার্ড বিএনপি কমিশনার রাজু হত্যার ২নং আসামী এই ওয়াহিদুল হাসান দিপু।
সুলতানা জাহানের দাবি, ‘এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটের সভাপতি নির্বাচনে শুধুমাত্র একটা ফরম বিক্রি হয়েছে অন্য কাউকে ফরম কিনতে দেয়নি এই শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল।
তিনি সবাইকে হুমকি দিয়ে সভাপতি পদের ফরম কেনা থেকে বিরত রাখায় পরে ওয়াহিদুল হাসান দিপু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় মার্কেটের সভাপতি পদে বিজয়ী হয়। আমাদের ধারণা, তিনি এই মার্কেটটি নিজের দখলে রাখার জন্য হামলার ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন।
ইমনের মা বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল ও তার ভাই ওয়াহিদুল হাসান দিপু আমাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তিনি সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রশাসন, প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে মাল্টিপ্যান মার্কেটে হামলার ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন।