মালয়েশিয়ায় শতাধিক শ্রমিকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ


পিবিএ,মালয়েশিয়ার: মালয়েশিয়ার জোহর প্রদেশে এজেন্ডা রেংক্যাং কন্সট্রাকশান কোম্পানির পরিচালক বরিশালের মোহাম্মদ শহীদের বিরুদ্ধে শতাধিক শ্রমিকের কাছ থেকে ভিসা করিয়ে দেয়ার নামে লক্ষাধিক রিঙ্গিত আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় পাঁচ’শ কিলোমিটার দুরে জোহর প্রদেশে এসব ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা বর্তমানে অসহায়ভাবে দিনাতিপাত করছে।

সরেজমিনে জানা যায় ২০১৬ সালে এজেন্ডা রেংক্যাং কোম্পানি ৩’শতাধিক শ্রমিককে ভিসা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ধাপে ধাপে লক্ষাধিক মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত হাতিয়ে নেয়। তবে এসব শ্রমিকের রিহেয়ারিং এর ফিঙ্গার প্রিন্ট হলেও ইমিগ্রেশন ফিঙ্গারপ্রিন্ট হয়নি। ফলে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনেকে বাধ্য হয়ে অনত্র ভিসা করেছে। আর বেশিরভাগ-ই ভিসা পায়নি। আর পুরো বিষয়টি নিয়ে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনে লিখিত অভিযোগও প্রস্তুত করা হয়েছে।

২০১৬ সালে টাকা দিয়েও ভিসা না পাওয়া একজন ময়মনসিংহে’র মনির হোসেন। কাছে পেয়ে এ পিবিএ’কে জানান কষ্টের কথা। ধাপে ধাপে ৬ হজার ৬’শ টাকা দিয়েছেন ভিসা করার জন্য। তবে মাইইজি’র ফিঙ্গার ছাড়া আর কোন অগ্রগতি হয়নি,পায়নি কোন ভিসা। জানালেন পুলিশ আর ইমিগ্রেশনের ভয়ে সর্বক্ষণ সময় কাটে তার। মালয়েশিয়ার জোহর প্রদেশে এজেন্ডা রেংক্যাং কন্সট্রাকশান কোম্পানির পরিচালক মোহাম্মদ শহীদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

যশোর ঝিকরগাছার হুমায়ন কবিরের অভিযোগটা অনেকটা একই। টাকা দিয়েছেন ঠিক-ই কিন্তু ভিসা মেলেনি। উপরন্তু একবার পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে জেলও খেটেছেন। এজেন্ডা কোম্পানির কেউ-ই তাকে ছাড়াতে যায়নি। জেলখানার নিদারুন সেই কষ্টের কিছুটা বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন ষাটোর্ধ্ব হুমায়ন। বলেন ভিসা না পাওয়ায় এখন ট্রাভেল পাস করে একবারে দেশে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই।

নরসিংদি’র মাসুম বিল্লাহ, যশোরের মোক্তার হোসেন, শফি রহমান, মানিকগঞ্জের আনোয়ার, যশোর মনিরামপুরের হোসেন আলি, মেহেরপুরের ফরজ আলি, মনিরামপুরের ফারুক হোসেন, জামালপুরের আবু সাঈদসহ জোহর বারুর প্রায় জনা পঞ্চাশেক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে আজেন্ডা কোম্পানির প্রতারনার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

শ্রমিকদের অভিযোগ আজেন্ডা কোম্পানির মালিক শহীদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোম্পানি কোন সমাধান করেনি। বরং নানা সময় ফোনে হুমকি-ধামকি দিয়েছে।

এসব ভুক্তভোগী অর্থ ফেরতের জন্য এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। তাদের একটাই দাবি কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত এবং অর্থ-আত্মসাতকারী’র উপযুক্ত শাস্তি।

উল্লেখ্য শহীদের বিরুদ্ধে এর আগেও মানবপাচারকারি অভিযোগে মামলা হয় যা স্থানীয় পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশও করা হয়। মালয়েশিয়ান পুলিশ তাকে আটকও করে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের বেশিরভাগ-ই দীর্ঘদিন ধরে আলকোমেক্স কোম্পানির অধীনে কাজ করেন এবং এই কোম্পানির মাধ্যমেই আজেন্ডা কোম্পানিতে ভিসা করার জন্য টাকা দেন।

এ বিষয়ে কথা হয় আলকোমেক্স কোম্পানির স্বত্ত্বাধীকারি যশোরের আলি হোসেনে’র সঙ্গে। তিনি এ বলেন, আজেন্ডা কোম্পানি’র সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে ১’শ শ্রমিকদের ভিসা করানোর জন্য সব ধরনের ডকুমেন্টস এবং ২ লক্ষ ৯৮ হাজার রিঙ্গিত অর্থ দেয়া হয়, তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা কাজ করতে পারিনি। অর্থ লেনদেনে’র সব ধরনের প্রমানাদি’র ফটোকপি এ প্রতিবেদককে দেয়া হয়। এ নিয়ে স্থানীয় থানায় আজেন্ডা কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনে মৌখিক অভিযোগ দেয়ার পর লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এখন আলকোমেক্স কোম্পানির মাধ্যমে ভিসা করে অনেকেই ফ্যাক্টরিতে চাকুরী করছেন। আলকোমেক্স এর সহযোগীতায় অনেকে দেশেও ফেরত গেছেন। আলি হোসেন অভিযোগ করেন আজেন্ডা কোম্পানি শতাধিক শ্রমিক’কে প্রায় দুই মাস ধরে বেতন দেয়নি যা নিয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও আজেন্ডা কোম্পানির শহীদ সমাধান করেনি। উপরন্তু ভয়ভীতি দেখিয়ে ঐসব শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করান।

মোহাম্মদ আলী এই প্রতিবেদককে জানান, আমার কোম্পনীর সাথে ও মোহাম্মদ শহীদের সাথে ২০১৬ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আমার দেওয়া শ্রমিকের ভিসা ও কাজের ব্যবস্থা করে কর্মসস্থান করবে। চুক্তি অনুযায়ী মোহাম্মদ শহীদ আমার কথা রাখেনি। টাকা নিয়ে শ্রমিকের ভিসা করে দেয়নি।শ্রমিকের ব্যাপারে কথা বলতে গেলেও আমাকে আমাকে হুমকি ধামকি দেওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয় তামিল সন্ত্রাসীদের দ্বারা মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ভিসা বাতিল করে বাংলাদেশে পাঠানোর ভয় দেখায়। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মামলা করি। মালয়েশিয়া বাংলাদেশ দূতাবাসকে লিখিত আকারে অভিযোগ করি। আমি প্রতারিত শ্রমিকের পাশে আছি সব সময় থাকবো। শ্রমিকরা যাতে টাকা গুলি ফিরে পায় সেই ব্যাপারে আমি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

পিবিএ/কায়সার হামিদ/এমএসএম

আরও পড়ুন...