মাহে রমজানের প্রস্তুতি

পূণ্যের মাস, আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রমজান

মুহাম্মদ আবুল হুসাইন

পবিত্র মাহে রমজান সমাগত।ক্যালেন্ডারের হিসেব অনুসারে মে মাসের ৭ তারিখ থেকেই পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার কথা।অবশ্য চাঁদ দেখার উপর তারিখ নির্ভর করবে।একজন মুসলিমের জন্য রমজান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই পবিত্র মাস যে আত্মশুদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে তা এই মাসের সঠিক ব্যবহার তথা এই পবিত্র মাসের প্রতিটি মুহূর্তের সঠিক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে।আর তার জন্য প্রয়োজন আগ থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের।আর যথাযথ প্রস্তুতি আমরা তখনই নিতে পারবো যখন আমরা এই মাসের মর্যাদা, গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারবো।

রমজান মাস অন্য মাসের মত নয়

রমজান মাস অন্যসব মাসের মত সাধারণ কোন মাস নয়। এটি অত্যন্ত পবিত্র মাস, পূণ্যের মাস। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস মাহে রমজান। এই পুরো মাসটিই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ। এই মাসেই পবিত্র কোরআন মজিদ নাযিল হয়েছে। তাই এই পবিত্র মাসে রোজা বা সিয়াম সাধনাকে আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন প্রত্যেক ঈমানদার নরনারীর উপর ফরজ বা বাধ্যতামূলক করেছেন। শুধু আল কোরআনই নয়, অন্যান্য প্রধান প্রধান আসমানি কিতাবও রমজান মাসেই নাযিল হয়েছিল এবং একারণে পূর্ববর্তী উম্মতদের উপরও রমজান মাসে সিয়াম সাধনা বাধ্যতামূলক ছিল। যেমন পবিত্র কোরআন মজিদে আল¬াহ রাব্বুল আ’লামীন স্বয়ং বলেন:

‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হইল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হইয়াছিল, যাহাতে তোমারা মুত্তাকী হইতে পার।’ -[বাকারা : ১৮৩]

রমজান মাসের পুরো সময় রোজা রাখা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ বা মৌলিক ইবাদতের অন্যতম। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের বুনিয়াদ স্থাপিত। এগুলো হলো- ১.ঈমান- আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ’র রাসূল এই প্রত্যয় ব্যক্ত করা; ২. নামাজ কায়েম করা; ৩. যাকাত প্রদান করা; ৪. রমজান মাসের রোজা রাখা এবং ৫. বাইতুল্লা’য় হজ্জ করা।

রহমতের মাস

পবিত্র রমজান মাস রহমতের মাস। এ মাসে জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়। তাই এ মাসে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এক পবিত্র ভাবধারা বিরাজ করে। সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এই পবিত্র মাসে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থেকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন। পবিত্র এ মাস হল মাগফিরাতের মাস, নাজাতের মাস। এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয় এবং প্রধা প্রধান শয়তানগুলোকে বন্দী রাখা হয়। তাই এ মাসে সাধারণভাবে ঈমানদারদের দিল নরম থাকে, তাদের হৃদয়, মন ও আত্মা আল্লাহ’র দিকে, মহান সৃষ্টিকর্তার দিকে রুজু থাকে।

পূণ্যের মাস

পবিত্র এই মাস অশেষ পূণ্যের মাস। মহানবী (সা.) শাবান মাসের শেষ দিন সাহাবীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষণে পবিত্র রমজান মাসের আগমন বার্তা ঘোষণা করে এই মাসকে এক মহিমান্বিত ও বরকতময় মাস হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এই মাসে এমন এক রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। বলাবাহুল্য, এই রাতটির নাম ক্বদরের রাত। মহানবী জানিয়েছেন, এ মাসের শেষ দশ দিনের বেজোর রাত সমূহের মধ্যেই ক্বদরের রাত নিহিত থাকে। এই শেষ দশদিনে মুসলমানদেরকে এতেকাফে বসার জন্যও তাগিদ দিয়েছেন তিনি। গুনাহ মাফ এবং জাহান্নাম থেকে নাজাতের আশায় এ সময় মুসলমানরা মসজিদে মসজিদে এতেকাফ করে থাকেন। ক্বদরের রাত ছাড়াও এ মাসের প্রতিটি রাত, প্রতিটি দিন এবং প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত বরকতপূর্ণ। মহানবী (সা.) বলেছেন, এই পবিত্র মাসে যে একটি নফল ইবাদত করবে সে অন্য সময়ে একটি ফরজ ইবাদত করার সমান পূণ্য লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করবে, সে অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায়ের পূণ্য লাভ করবে। একারণেই বলছিলাম যে, পবিত্র এই মাস অন্য মাসের মত নয়। এই বরকতময় সময়ের একটি মুহূর্তও হেলায় হারানো উচিত নয়। বিশেষ করে ক্বদরের রাত তো নয়ই। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ক্বদরের রাত থেকে বঞ্চিত হল তার মত হতভাগা আর নেই। তিনি আরো বলেছেন, রমজান মাসের প্রথম দশ দিন রহমতে পূর্ণ থাকে। দ্বিতীয় দশদিন ক্ষমা লাভ এবং শেষ দশ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের উপায়। তবে এ সবকিছুই নির্ভর করে এই পবিত্র মাসের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করার উপর।তাই রমজান মাস আগমনের আগেই এই পবিত্র মাসকে উপলব্ধির জন্য যথাযথ পড়াশোনা করা প্রয়োজন।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...