মাহে রমজানের প্রস্তুতি [২]

মুহাম্মদ আবুল হুসাইন

রমজান মাস: কোরআনের মাস

রমজান মাস, কোরআনের মাস। পবিত্র এই মাসে মুসলমানদেরকে বেশি বেশি করে কোরআন পড়ার এবং নেক আমল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমরা মহানবীর (সা.) একটি হাদীস উলে¬খ করতে পারি। শাবান মাসের শেষ দিনে পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে মহানবী (সা.) সাহাবীদেও উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে তিনি বলেন: ‘হে লোক সকল! একটি মহিমান্বিত মাস তোমাদের দ্বারে সমাগত। এই পবিত্র মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই মাসে দিনের বেলা রোজা রাখাকে আল্লাহ তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক (ফরজ) করেছেন এবং রাতের বেলা নামাজ পড়াকে (তারাবীহ) তোমাদের জন্য করেছেন ঐচ্ছিক। তবে এই মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় যে একটি ঐচ্ছিক (নফল) আমল করবে সে অন্য মাসের একটি ফরজ আমল করার সমান সওয়া (পূণ্য) লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করবে, সে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করার সমান সওয়াব লাভ করবে। আর এ মাসটি হল সবরের মাস এবং সবরের পুরুষ্কার হল জান্নাত। এছাড়া এ মাসটি হল দান-খয়রাত ও সেবার মাস। এটি এমন বরকতময় মাস, যে মাসে বিশ্বাসীদের রিজিক বৃদ্ধি পায়। রমজান মাসে যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গোনাহ মাফ করা হবে, দোযখের আগুন থেকে সে মুক্তি পাবে এবং রোজাদার রোজা রেখে যে সওয়াব পাবে, সেও তার মত সমান সওয়াব পাবে; তবে তাতে রোজাদারের সওয়াব একটুও নষ্ট হবে না।’

ইউ কে শরীয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ সাইয়েদ আদ দারস রমজান মাসকে কোরআনের মাস বলে ফতোয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, রমজান মাস কোরআনের মাস। কারণ, এ মাসেই কোরআন নাযিল হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন এ প্রসঙ্গে ঘোষণা করেছেন: ‘রমজান সেই মাস, যে মাসে কোরআন নাযিল করা হয়েছে; যা সমগ্র মানব জাতির জন্য হেদায়াত, সুস্পষ্ট পথ-নির্দেশ এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। তোমাদের মধ্যে যেই এ মাসের সাক্ষাৎ পাবে, সে যেন রোজা রাখে।’ – আল বাকারা: ১৮৫

তিনি আরো বলেন, পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি পবিত্র রমজান এবং মহাগ্রন্থ আল কোরআনের মধ্যেকার সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

আমরা জানি, মহানবী (সা.) নবুওয়ত লাভের পূর্বে রমজান মাসে হেরা গুহায় ধ্যান করতেন। সেখানে ধ্যানরত অবস্থায় ক্বদরের রাতে আল্লাহ’র নির্দেশে ফেরেশতা জিবরিল (আ.) মহানবীর নিকট সর্ব প্রথম সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত নাযিল করেন। এর মাধ্যমে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির, আরশের সাথে মর্ত্যরে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়। এটি মানব ইতিহাসে এক বিরাট ঘটনা। এ কারণেই রমজান মাস কোরআনের মাস। স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক স্থাপনের মাস।

দ্বিতীয়ত: যখন থেকে রমজান মাসের রোজা রাখা বাধ্যতামূলক বা ফরজ করা হয়, তখন থেকেই আল¬াহর রাসূল (সা.) প্রতিটি রমজান মাসে ফেরেশতা জিবরিল (আ.)-কে সাথে নিয়ে কোরআন খতম করতেন। জিবরিল আ. কোরআন তেলাওয়াত করে নবীকে শোনাতেন এবং আল¬াহর রাসূলও কোরআন তেলাওয়াত করে জিবরিল আ.কে শোনাতেন। রমজান মাসের প্রতি রাতে এ ঘটনা ঘটত।মহানবীর কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ) বলেন, যে বছর মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেন সে বছর তিনি দু’বার কোরআন খতম করেন।

তৃতীয়ত: তারাবীহ’র নামাজের মাধ্যমে পুরো মাসে একবার কোরআন খতম করার জন্য মুসলমানদেরকে বলা হয়েছে। যার কারণে প্রতি বছর রমজান মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা তারাবীহ নামাজের মাধ্যমে কোরআন খতম করে আসছেন।

পবিত্র রমজান মাসকে বলা হয় কোরআনের মাস। এ মাসের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বর্ণনা করতে যেয়ে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বলেছেন:
‘রমজান সেই মাস, যে মাসে কোরআন নাযিল করা হয়েছে; যা সমগ্র মানব জাতির জন্য হেদায়াত, সুস্পষ্ট পথ-নির্দেশ এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। তোমাদের মধ্যে যেই এ মাসের সাক্ষাৎ পাবে, সে যেন রোজা রাখে।’ – আল বাকারা: ১৮৫

মহানবী হযরত মুহাম্মদের বয়স যখন চলি¬শ বছর পূর্ণ হয় তখন রমজান মাসের ক্বদরের রাত্রিতে প্রথম অহী নাযিল হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ’নিশ্চয়ই আমরা এ কোরআনকে ক্বদরের রাতে নাযিল করেছি। তুমি কি জানো ক্বদরের রাত কী? ক্বদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ – সূরা আল ক্বদর: আয়াত ১-৩)। এছাড়া সূরা দুখানেও বলা হয়েছে : জেনে রাখো, আমরা এই কোরআনকে নাযিল করেছি এক মহিমান্বিত রাতে।’ -(দুখান: ৩)
আমরা জানি, সমগ্র কোরআন মহানবীর (সা.) তেইশ বছরের নবুওয়তি জিন্দেগীতে প্রয়োজন অনুসারে অল্প অল্প করে নাযিল হয়েছিল, কিন্ত তার আগে সমগ্র কোরআন একসাথে লাওহে মাহফুজে সংরক্ষণ করা হয় এবং তাও করা হয়েছিল ক্বদরের রাত্রিতেই।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...