পিবিএ,আত্রাই (নওগাঁ): নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো: ইসরাফিল আলমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার বাদ আছর গ্রামের বাড়ি রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামের ঈদগাহ ময়দানে এমপির একাধিক জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তার মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন’ করা হয়। এসময় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি আব্দুল মালেক, নওগাঁ সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন জলিল জন, রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আইন উদ্দিন, জেলা প্রশাসক হারুনু-অর- রশিদ, পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসিসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, রাণীনগর-আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও সর্বস্তরের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করে।
সোমবার সকালে ইসরাফিল আলম তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৪বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও ২মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে মাননীয় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় ফুসফুস ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়ে তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা লাইফ সাপোর্টে রাখেন। সোমবার সকাল ৬টা ২০মিনিটে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ইসরাফিল আলমের স্ত্রী সুলতানা পারভীন বিউটি জানান, ৬জুলাই অসুস্থতা নিয়ে তিনি প্রথম এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন তার করোনা ধরা পড়ে। এখানে কিছু দিন চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি বাড়ি চলে যান। পরে পরীক্ষা করে করোনা নেগেটিভ আসে। এ অবস্থায় গত ১৭জুলাই আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শুক্রবার রাত ১১টা দিকে তার প্রচ- শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেয়া হয়। এছাড়াও তিনি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিলো জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় সর্বহারারা দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে এই জনপদে মানুষকে জবাই করে রাখতো। এরপর জেএমবির তান্ডব। অশান্তি আর হাহাকারের বাতাস বইতে শুরু করে এই অঞ্চলে। ঠিক তখনই আর্বিভাব ঘঠে শ্রমিক নেতা ইসরাফিল আলমের। ২০০১সালের নির্বাচনে প্রথমে তার পরাজয় হয়। এরপর যখন সর্বহারা ও জেএমবির অত্যাচার মাত্রারিক্ত হয়ে গেলে তখন এই অঞ্চলের মানুষ ২০০৮সালে নৌকা মার্কায় ৩৬বছর পর ভোট দিয়ে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বুলুকে পরাজিত করে বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনটিতে বিজয়ী করেন শ্রমিক নেতা মো: ইসরাফিল আলমকে। এরপর ২০১৮ সালেও তিনি সেই আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে ৩য় বারের আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইসরাফিল আলম তার দেওয়া কথা রেখেছেন। তিনি এমপি হওয়ার পর আওয়ামীলীগ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় এই রক্তাক্ত জনপদ থেকে জবাই, হানাহানি, লুণ্ঠন, ছেলে ও স্বামী হারানোর কান্না থেকে রক্ষা করেছেন রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার মানুষকে। বর্তমানে তার চৌকশ নেতৃত্বের কারণে এই অঞ্চলে শান্তির সুবাতাস বইছে। যার কারণে এই অঞ্চলের মানুষ কখনই তার বিকল্প খুঁজতে যাননি কখনই।
তিনি নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনে টানা তিনবার আওয়ামীলীগের এমপি হিসেবে নেতৃত্ব প্রদান করছেন। এই ক্ষনজন্মা ব্যক্তির জন্ম রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে ১৯৬৭সালে মরহুম আজিজুর রহমানের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে মিটার রিডার হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। তার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু প্রয়াত আহসান উল্লাহ মাস্টার। তিনি ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ইসরাফিল আলম অনেক গুনেগুনান্বিত ছিলেন। তিনি বর্তমানে টকশোর জগতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
পিবিএ/নাজমুল হক নাহিদ/এমআর