মিরপুরের রূপনগর বস্তি পুড়ে ছাই: বস্তিবাসীর দাবি ষড়যন্ত্র

পিবিএ,ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের চলন্তিকা ঝিলপাড় বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং ষড়যন্ত্রমূলক। এমন অভিযোগ জানিয়েছেন অগ্নিকাণ্ডে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারানো বস্তিবাসীরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে মিরপুরের সর্ববৃহৎ এ বস্তিতে। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়া সেই আগুনে গৃহহীন হয়ে পড়েন প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ। সহায়-সম্বল হারানো এসব মানুষের অভিযোগ, কোনো দুর্ঘটনার কারণে নয়, বরং একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের ফল এ অগ্নিকাণ্ড।

বস্তির উত্তর ও দক্ষিণ- দুই দিক থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে দাবি করেছেন কয়েকজন বস্তিবাসী। তাদের অভিযোগ, বস্তি যেন পুরোপুরি আগুনে গ্রাস করে সেটি নিশ্চিত করতেই দুই দিক থেকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রায় ২২ বছর ধরে এই বস্তিতে বসবাসকারী এক বাসিন্দা খালেদা বলেন, ঈদের সময়ে বেশিরভাগ মানুষ দেশে গেছে গা। বস্তি মস্তি খালি, যার যার ঘরে সন্ধ্যার সময় রইছে এমন সময় বস্তির মধ্যে আগুন লাগায়া দিছে। এই বস্তিতে আগুন লাগায়া বড় বিল্ডিং করতে পারে।

অগ্নিকাণ্ডের সময় কেরোসিনের গন্ধ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন বস্তির আরেক বাসিন্দা। ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই ফায়ার সার্ভিসের কাজেও গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ এই বাসিন্দার। পরিচয় গোপনের শর্তে যুবক বয়সের ব্যক্তি বলেন, আগুন লাগার দুই ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা আসছে। একটা পাইপ দিয়ে একদিকে পানি ছিটিয়েছে। আমরা ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের পাও ধরছি যে, আমাদের আরেকটা পাইপ দেন। আরেকটা পাইপ দিয়ে আরেকদিকে যদি পানি দেওয়া হতো তাহলে কিন্তু আগুনটা ছড়ায় না। কিন্তু তারা ওই পাইপ ব্যবস্থা করতে পারেনি। আজ আমরা বলবো, ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতির কারণেই আমরা পুরা ধ্বংস।

ঈদের কিছুদিন আগেও বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন অন্য বস্তিবাসী সুমি ও পারভিন। সুমি বলেন, ঈদের কয়েকদিন আগেও ইব্রাহিমের ঘর থেকে আগুন লেগেছিল। সেবার আমরা দ্রুত দেখতে পাই এবং আগুন আমরাই নিভিয়ে ফেলি। এবার আর সেই সুযোগ আমাদের দেওয়া হয়নি। এই জমি যদি কারও লাগে আমাদের বললেই হতো। আমরা ছাইড়া দিতাম। এডা সরকারের জায়গা আমরাও জানি। যে যেমনে পারছি ঘর উডায়া থাকছি এতদিন। আমাদের ছাইড়া যাইতে বলতো চলে যেতাম। আমাদের নাকি পুনর্বাসন করে বাউনিয়া নিয়ে যাবে। তাহলে নিয়ে যাক। এমনে আগুন দিল কেন? আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।

অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বস্তিবাসীদের ষড়যন্ত্রের এমন অভিযোগ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত ‘এমন তথ্য নেই’ বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। অন্যদিকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগকারীদের দেখতে চেয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, যারা বলে তারা কোথায়? তারা কোথায়? তাহলে ওই ব্যক্তিটা দেন, ওই জানে। ওর কাছে খবর পাওয়া যাবে।

এর আগেও মিরপুর এলাকায় আগুন লেগেছে, কালশিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এমন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইলিয়াস মোল্লা বলেন, কালশির ঘটনায় তো এক নম্বর আসামি আমি ইলিয়াস মোল্লা। এমনভাবে কথা কইছে তারা যে, ইলিয়াস মোল্লা আইছে, ওসি আইছে ম্যাচ দিয়া আগুন ধরায়া দিছে। এসব কথা তো বইলা লাভ নাই। ইলিয়াস মোল্লা শান্তি চায়, অশান্তি চায় না।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় রূপনগরের চলন্তিকা ঝিলপাড় মসজিদের পাশের বস্তিতে। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বিঘা জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এ বস্তিতে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার মানুষ থাকতেন। ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ২৪টি ইউনিট প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত সাড়ে দশটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চার জন্য ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে মেলেনি নিহতের কোনো সংবাদ।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...