পিবিএ ডেস্কঃ একটু ব্যথা! কিন্তু অনেক দিনের সমস্যা। মুখের ভিতর ঘা এইভাবেই জটিলতর হয়। সাবধান জানালেন দন্ত বিশেষজ্ঞ। ছোট্ট সমস্যা! সেটাই বড় অসুখ পাকানোর বীজ। সেই তথাকথিত ধারণার পরিসরেই মুখের ঘা বা ক্ষতের পরিবেষ্টন। তাই অল্প ব্যথা জ্বালায় সজাগ হোন। বেড়ে গেলে নিয়ন্ত্রণ করাও জটিল।
বিপদের হাতছানিঃ সাধারণত এমন হলে প্রাথমিক অবস্থায় কেউ সমস্যা বুঝতে পারে না। খুব ব্যথা- জ্বালা থাকলে তবেই চিকিৎসকের কাছে যান। মুখে দু’ধরনের ঘা হয়। লাল রঙের ঘা ও সাদাটে বর্ণের ঘা। লালচে ঘা হলে খুব বেশি জ্বালা করে। সাদাটে ঘায়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে জ্বালা কম। তবে দু’ধরনের ঘা থেকেই ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে। তাই এমন লক্ষণ দেখা গেলে কষ্ট খুব না হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ছোট একটু ক্ষত থেকেই মুখের ক্যানসারের সূত্রপাত হতে পারে। তাই শুরুতেই সাবধানতা দরকার।
দাঁতের ক্ষতিতে ভয়ঃ অনেকের ক্ষেত্রে দাঁতে সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়ে মাড়িতে ঘায়ের সূত্রপাত হয়। বিশেষত দাঁতের গর্ত বা ক্যাভিটি থাকলে তা থেকে এমন হতে পারে। অনের সময় দাঁতের এনামেল পাতলা হয়ে যায়। ফলে দাঁত ক্ষয়ে, ভেঙে যায়। সেই ভাঙা ধারাল অংশে মুখের যে কোনও ভাগে ঘষা লেগে ক্ষত তৈরি করে। দীর্ঘ সময় ধরে এমন হতে হতে তা থেকে মুখে আলসারের উৎপত্তি হয়। মুখের মধ্যে ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া, ফাংগাস ইনফেকশন থেকেও এমন ঘা হতে পারে।
কেটে গেলে বিপদঃ দাঁতের কামড়ে গাল অথবা জিহ্বা কেটে গেলেও এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারও কারও আবার বারবার মুখ কামড়ে ফেলা অভ্যাস থাকে। যা দীর্ঘদিন হতে হতে তা থেকে আলসার হতে থাকে। এতে মুখের ঘা হয়তো নিজে থেকেই সেরে যাবে মনে করে রোগ পুষে রাখেন অনেকেই। এমন হলে একেবারেই ফেলে না রেখে দাঁতের ডাক্তারবাবুর কাছে যেতে হবে। অল্পতেই গুরুত্ব মুখের এমন সমস্যা রোধের প্রাথমিক শর্ত।
কারও গরম খেতে গিয়েঃ মুখের ভিতর পুড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই স্থানে বারবার জিহ্বা বা দাঁতের কামড় পড়লে তা থেকে ঘা হতে পারে। কাজেই এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কিছু অভ্যাস মুখের শত্রুঃ বর্তমানে তামাক দ্রব্য সেবন অত্যন্ত ক্ষতিকারক এক অভ্যাস। যা মুখমণ্ডলের যাবতীয় সমস্যার একটি অন্যতম কারণ বটেই। বিশেষ করে সুপারি মুখের ক্ষত তৈরি করে মারাত্মক। বহু রোগী রয়েছেন যাঁদের, সুপারি ও পানপরাগ জাতীয় তামাক দ্রব্য সেবন করায় মুখের ভিতরকার ত্বকে নানা পরিবর্তন হতে শুরু করে। দাঁতের পাশে এই সুপারি জমিয়ে রাখায় বা দীর্ঘ সময় ধরে চর্বণ করলে তা থেকে অ্যালকালয়েড নামক উপাদান নিঃসৃত হয়। যা মুখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নরম চামড়া ক্ষয়ে বা পুড়ে যেতে থাকে। কখনও কখনও চামড়া শক্ত হয়ে মুখ খুলতে অসুবিধা হয়। যা থেকে ভয়ানক ধরনের ঘায়ের উৎপত্তি দেখা দেয় ও পরবর্তীকালে মুখের ক্যানসার ডেকে আনে। তাই সুপারি দিয়ে পান খেলেও তা মুখের অভ্যন্তরের ক্ষতি করে। এঁদের ঠান্ডা-গরম কিংবা ঝাল খাবার খেলেই মুখে ভিতর জ্বালা করবে। ধূমপান, জর্দা, গুড়াকু দিয়ে দাঁত মাজা মুখের ঘায়ের উৎপত্তির একটি অন্যতম কারণ। ধূমপান থেকে গালের ধারে সাদা রঙের ঘায়ের উৎপত্তি হতে পারে। খৈনি খাওয়ার অভ্যাসও পরবর্তীকালে ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
সমাধানঃ প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে প্রথমেই রোগীর কোনও নেশা থাকলে তা পুরোপুরি বর্জন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনও সংক্রমণ থাকলে সেটার চিকিৎসা শুরু করা হয়। এসব করেও যদি ঘা না ঠিক হয় সেক্ষেত্রে কিছু টেস্ট করে
দেখতে হবে। এক্ষেত্রে এক্সরে করে মাড়ির ভিতরে কোনও ঘা বা সংক্রমণ রয়েছে কি না তা চিহ্নিত করা জরুরি।
এছাড়া মুখের উপরিভাগের সারফেসে সে কোষগুলি থাকে সেখানে কোনও ক্যানসার কোষ রয়েছে কি না তা নির্ধারণ করতে দন্ত চিকিৎসকের কাছে সাইটোলজি টেস্ট করে দেখতে হবে।
কোনও অস্বাভাবিক কোষ নির্ধারণ হলে তারপর বায়োপ্সি করে ক্যানসার নির্ধারণ করা হয়। সেই মতো চিকিৎসা শুরু হয়। কাজেই মুখের ভিতরে ঘা, একেবারেই নয় অবহেলা।
সতর্কতাঃ পান-সুপারির নেশা বর্জন করতে হবে। বিড়ি-সিগারেট খাওয়া চলবে না।
মদ নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস মুখের ক্ষতি করে। দাঁতের কামড়ে মুখের ভিতর বা জিহ্বার ধার বারবার কেটে যেতে থাকলে সেক্ষেত্রে দাঁতের সমস্যা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দ্রুত ঠিক করে নিতে হবে। ধারালো দাঁতের কামড়ে ঘা হতে হতে ক্যানসার অনেকেরই হয়ে থাকে। তাই সাবধান। যাঁরা ডেনচার বা দাঁতের পাটি পরেন তাঁদের ক্ষেত্রেও ডেনচার ভেঙে গিয়ে সেই ধারালো স্থান লেগে মুখে ক্ষত হতে পারে। সেটাও ঠিক করা জরুরি।
পিবিএ/এমআর