মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকের ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন আজাদ

পিবিএ,ঢাকা: ছাত্র অবস্থায় একটি স্থানীয় পত্রিকায় কাজের পাশাপাশি একটি জাতীয় পত্রিকার আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন খন্দকার আবুল কালাম আজাদ (৫৩)। ২০০৩ সালে নিজ এলাকায় ‘জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

এরপর ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টে ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ বৃহৎ পরিরিসরে কার্যক্রম শুরু করে। একপর্যায়ে ২০১৭ সালে গ্রাহকের জমাকৃত প্রায় ৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পালিয়ে যান আজাদ।

যিনি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নামে একটি পারিবারিক প্রতারণার বলয় গড়ে তুলেছিলেন। নিজে সভাপতি, দুই ভাই ও তাদের স্ত্রীদের বিভিন্ন পরিচাণা পর্ষদে বসিয়ে জনসাধারণের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।

দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ৬০টি মামলা ও ৩৬টি পরোয়ানা নিয়ে প্রায় ৫ বছর পলাতক থাকার পর অবশেষে খন্দকার আবুল কালাম আজাদকে (৫৩) গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দিনগত রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেফতার আজাদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ২০০৩ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে খন্দকার আবুল কালাম আজাদ ‘জনতা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। ২০০৫ সালে মেহেরপুরে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে ‘জনতা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে কুষ্টিয়া, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় তাদের কার্যক্রম শুরু করেন।

প্রতিষ্ঠানটি অতি সুকৌশলে উচ্চ মুনাফায় মানুষকে প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের নিকট হতে কোটি কোটি টাকা জামানত সংগ্রহ করে। উচ্চ মুনাফায় মাসিক ভিত্তিতে ডিপিএস এর মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল দিনমজুর, চায়ের দোকানদার, মুদি দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবী মানুষ। গ্রাহক বৃদ্ধির জন্য আজাদ বিভিন্ন সময়ে বিশেষ প্যাকেজ ও প্রনোদনা ঘোষণার মাধ্যমে আকৃষ্ট করতেন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালে সমিতির গ্রাহক সংখ্যা ৭-৮ হাজার হয় এবং গ্রাহকরা ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত রাখে। ২০১৭ সালে গ্রাহকদের সঞ্চয়-আমানতের পরিমাণ দাড়ায় প্রায় ৫০-৭০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ঈদুল ফিতরে আঞ্চলিক সকল অফিস গুটিয়ে এবং সকল ফোন নম্বর বন্ধ করে ঢাকায় এসে গা ঢাকা দেন আজাদ।

মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য গ্রেফতারকৃতের প্রায় আটশতাধিক কর্মী নিয়োজিত ছিল। যাদেরকে কোনো প্রকার বেতন প্রদান করা হতো না। তাদের গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে বার্ষিক ১৮-২০ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখাত।

এমনকি বিভিন্ন জেলায় ভাড়া নেওয়া প্রতিষ্ঠানটির অভিযাত কার্যলয়ের মালিকদেরও কোন ভাড়া পরিশোধ করেননি আজাদ। ভাড়ার টাকা তার প্রতিষ্ঠানে জমা করলে নির্ধারিত সময় পর তিনগুন ফেরত পাবে প্রলোভন দিয়ে টাকা না দিয়েই তাদের অফিসের কার্যক্রম চালিয়ে যান।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় চেক জালিয়াতি ও প্রতারনাসহ সর্বমোট ৬০টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে, যার মধ্যে ৩৬টি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে।

প্রতারণার টাকায় কুষ্টিয়াতে ১৫ বিঘা জমি, ১টি ৬ তলা ভবন, ১টি ইটের ভাটা এবং রাজশাহীতে ১১ বিঘা জমি ক্রয় করেন আজাদ।

এছাড়া, ঢাকার উত্তরায় বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ি ক্রয় করে। তার স্ত্রীর নামে পোষ্ট অফিসে ২০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। এমনকি একটি ব্যাংক থেকে তার ২ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে বলেও জানা গেছে।

আরও পড়ুন...