মুড়ির গ্রাম গোয়ালদিঘী

 

পিবিএ,নাটোর: রমজান মাসে সরগরম হয়ে উঠেছে নাটোরের মুড়ির গ্রাম হিসেবে পরিচিত গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুর গ্রাম। তবে এবার ধানের দাম বেশী ও বৈরি আবহাওয়া হওয়ায় কিছুটা বিপাকে মুড়ি উৎপাদকরা। লাভের পরিমাণ কম হওয়ার শংকা তাদের।

নাটোর সদর উপজেলার ছোট্ট গ্রাম গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুর। এই গ্রামের সকলেই মুড়ি তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে কয়েক যুগ ধরে। এই গ্রামের মুড়ির কদর সারা দেশে। কোন রাসায়নিক ছাড়াই তৈরী করা হয় এখানকার মুড়ি। এই গ্রামের মুড়ি উৎপাদনকে কেন্দ্র করে পাশের ডালসড়ক এলাকায় গড়ে উঠেছে মুড়ির আড়ত। ওই আড়ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই ২শ মন মুড়ি ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়।

রমজান মাসে ইফতারের অপরিহার্য অনুষঙ্গ ‘মুড়ি’ তৈরী হয় গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুরসহ পাশ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের ঘরে ঘরে। গ্রামে যাদের জমি আছে তারা মুড়ি তৈরির ধান উৎপাদন করেন। তারাই আবার সেই ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে চাল তৈরি করে মুড়ি ভাজে। রাসায়নিক সার ও কেমিক্যালমুক্ত হওয়ায় এই মুড়ির ব্যাপক সুনামের পাশপাশি চাহিদা রয়েছে। তাই গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুর নাটোরসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের কাছে ‘মুড়ির গ্রাম’ হিসাবে পরিচিত।

এখানে বছরে যে পরিমাণ মুড়ি উৎপাদন হয় তার দ্বিগুণ হয় রমজান মাস এলেই। শুধু রমজান মাসই নয়, সারা বছর এখানকার মানুষের চাহিদা মেটায় এই গ্রামের মুড়ি। রমজান মাসে মানুষের চাহিদা মেটাতেই। তাই দম ফেলার সুযোগ নেই কৃষ্ণপুর গ্রামের মানুষদের। আমন, বিনা-৭, হরি ধান, ২৯ ধান, ১৬ ধান, ৫২ ধানের মুড়ি উৎপাদিত হয় এখানে। ভালো মুড়ি দিয়ে ইফতারের জন্য রমজান মাস শুরু প্রাক্কালে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন এই গ্রামে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গোয়ালদিঘীসহ , বারুহাটি, বাকশোর, তেগাছি, তালগাছি ও ঢাকোপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই তৈরী হচ্ছে ‘হাতে ভাজা’ মুড়ি। বাতাসে ঝনঝন শনশন মুড়ি ভাজার শব্দ। প্রতি বাড়িতেই মুড়ি ভাজার জন্য রয়েছে আলাদা ঘর। মুড়ি ভাজার কাজে নিয়োজিত বাড়ির মেয়েদের কেউবা উঠানে ধান শুকাচ্ছে, মাঝে মাঝে সেই ধান নেড়ে দিচ্ছে, মাটির চুলায় চাল গরম করছে আর সেই চাল নারিকেলের খিল কিংবা পাটসোলা দিয়ে নাড়াচারা করছে। কেউবা সেই গরম চাল মাটির পাতিলে রাখা বালিতে পাটসোলা দিয়ে নাড়াচারা করছে। সাথে সাথে সেই চাল থেকে ফুটে যাচ্ছে মুড়ি।

গ্রামে মুড়ি তৈরিতে নারীদের পাশাপাশি মুড়ি ভাজা থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছেন এখানকার পুরুষরা। ভোর থেকে ভাজা শুরু হওয়া এসব মুড়ি সকাল হলে নিয়ে যাওয়া হয় আড়তে।

আমন মুড়ি প্রতি মণ ২৮শ’ থেকে ২৯শ’ টাকা, ১৬ ধানের মুড়ি ৩ হাজার টাকা থেকে ৩১শ’ টাকা ও অনান্য মুড়ি গড়ে ২৫শ’ থেকে ২৯শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন এ আড়তে বিক্রি হয় দুই থেকে তিন লাখ টাকার মুড়ি।গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুর গ্রামের মুড়ি উৎপাদনকারী মিলন হোসেন জানায়, শুধু মুড়ি কিনতেই রমজান মাসে এই গ্রামে আসেন অনেক মানুষ। তবে নানা স্থানে মেশিনে প্যাকেট করা মুড়ি তাদের এই হাতে ভাজা মুড়ির সুনাম নষ্ট করছে।

স্বল্প পুঁজির এই ব্যবসা করে গোয়ালদিঘী কৃষ্ণপুর গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও স্থানীয় কোনো ব্যাংক এগিয়ে আসেনি তাদের পাশে। স্বল্প সুদে এসব মুড়ি উৎপাদনকারীদের ঋণ সহায়ত করলে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন মুড়ি উৎপাদনকারীরা। তাদের দাবী সরকার তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋনের ব্যবস্থা করলে তারা বেশী করে মুড়ি উৎপাদন করতে পারতো।

পিবিএ/এআই/হক

আরও পড়ুন...